MLM মাল্টিলেভেল মার্কেটিং-২

এদেশের MLM ব্যবসার শুরুতেই মুফতী বোর্ডে বিষয়টি উত্থাপন করেছি। বেফাকের মুফতী বোর্ড দীর্ঘদিন আলোচনা-পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, MLM পদ্ধতি নাজায়েয। এরপর প্রায় এক বছরজুড়ে পুরো বাংলাদেশের প্রায় সব বড় মাদরাসা ও দারুল ইফতা থেকে তাসদীক তথা সম্মতিসূচক স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। এখনো ঐসব ফতোয়া বিভাগগুলোর মত আগের মতোই বহাল আছে। নির্ভরযোগ্য কারো থেকে এখন পর্যন্ত ভিন্ন কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উক্ত ফতোয়ায় দুটি বিষয় স্পষ্ট হয় : ১. MLM সিস্টেমটাই নাজায়েয।

২. এ সিস্টেম অনুসরণ করে যেসব কোম্পানি চলে তার ব্যবসার ধরনের কারণে প্রথমে তা নাজায়েয। এরপর তাতে
শরীয়ত নিষিদ্ধ অন্য কোনো কারণ থাকলে তো নাজায়েয হওয়ার বিষয়টি আরো দৃঢ় হবে। বস্তত MLM পদ্ধতির অনেক প্রতিষ্ঠানেই শরীয়ত পরিপন্থী অনেক বিষয় থাকে।

MLM নাজায়েয কেন?

MLM নাজায়েয হওয়ার কারণগুলোকে দু ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : ক) মৌলিক কারণ (খ) শাখাগত কারণ।
সাধারণ শিক্ষিত লোকদের প্রশ্নের জবাবে সাধারণত মৌলিক বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়। তাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্যের
ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিটা বুঝিয়ে সেগুলোর সাথে MLM কীভাবে সাংঘর্ষিক তা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। যেমন-১. শরীয়তের একটি মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি হল, বেচাকেনা হবে সরাসরি। বিনা কারণে মধ্যস্বত্ত্বভোগী সৃষ্টি হবে না। বিক্রেতা ও
ভোক্তার মাঝে অযাচিতভাবে বিভিন্ন স্তর ও মাধ্যম সৃষ্টি করা শরীয়তের পছন্দ নয়। অর্থাৎ ক্রেতাবিক্রেতার মাঝে অযাচিত মধ্যসত্ত্বভোগী প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। বিক্রেতাকে সরাসরি বাজারে ঢোকার সুযোগ দিতে বলা হয়েছে। মাঝপথে
থামিয়ে দিতে বারণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন বাজারে ঢোকা তো অনেক দূরের কথা, বিক্রেতার বাড়ি থেকেই পণ্য নিয়ে
আসা হয়। দাদন ব্যবসায়ীরা প্রথমে কৃষকদেরকে সুদের শর্তে ঋণ দেয়। সাথে এ শর্তারোপও করে যে, উৎপাদিত ফসল
তার কাছে বা তার লোকদের কাছেই বিক্রি করতে হবে। পরিশেষে সুদে আসলে শোধ করতে গিয়ে কৃষকের তেমন কিছু
আর বাকি থাকে না। আপনারা জানেন এক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা হল মুযারাআ করা। তা করা হলে কৃষকগণ সুদের
গুনাহ থেকেও বাঁচত এবং ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের সর্বনাশ হত না।

২. ভোক্তা বা বৃহত্তর সমাজের স্বার্থ ব্যবসায়ী বা ব্যক্তিস্বার্থের উপর প্রাধান্য পাবে। এজন্য শরীয়ত দালালিকে অপছন্দ করে। কারণ এর দ্বারা দালাল উপকৃত হলেও ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বিক্রেতার ক্ষতি হোক শরীয়ত এটা চায় না। এজন্য সাধারণ অবস্থায় পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার বিধান নেই।

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, এক ব্যক্তি এসে বলল, আল্লাহর রাসূল! দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। আপনি পণ্যের দাম নির্ধারণ
করে দিন। রাসূল সা. বললেন, না। আমি বরং দুআ করব যেন দম কমে যায়।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩৪৫০
উক্ত হাদীসে রাসূল সা. দাম নির্ধারণ করে দেননি। কারণ হতে পারে একটি পণ্যে বিক্রেতার খরচ পড়েছে ১০/-টাকা।
এখন ৯/- টাকা নির্ধারণ করা হলে বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অতএব বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হোক শরীয়ত এটা চায় না। কিন্তু সমাজের বৃহত্তর অংশ তথা ক্রেতা বা ভোক্তার ক্ষতি না হওয়ার বিষয়টি শরীয়তে অগ্রাধিকারযোগ্য।

শরীয়তের এ দুটি দৃষ্টিভঙ্গি এমএলএম-এর সাথে কিভাবে সাংঘর্ষিক?

প্রথম উসূলটি ছিল, বেচাকেনায় অযাচিত মধ্যস্বত্ত্বভোগী সৃষ্টি না হওয়া। কিন্তু এমএলএম-এর মধ্যে একটি পণ্য বা সেবার উপকারভোগী হয় বহু স্তরের লোক। অসংখ্য মধ্যস্বত্ত্বভোগী তাতে বিদ্যমান। তারা বলে, আমরা এ পদ্ধতি অনুসরণ করি ভোক্তাদের উপকারের জন্য। অন্যান্য কোম্পানি বিজ্ঞাপণের পিছনে যে অর্থ খরচ করে আমরা তা না করে ঐ পরিমাণ
অর্থ ক্রেতাদেরকে কমিশন আকারে দেই। এবং তারা আরো বলে, আমরা মধ্যস্বত্ত্বভোগী উঠিয়ে দিয়ে ঐ মুনাফা
ক্রেতাদেরকে কমিশন আকারে দেই। আসলে এসব কথা সত্যের অপলাপমাত্র। কেননা তাদের ভাষায় তারা পণ্যের
মূল্যের ৪৫% ভোক্তাদের দিয়ে দেয়। দেখুন, তারা বহু স্তর বানিয়ে প্রত্যেক স্তরকে যে কমিশন দেয় সেটা ভোক্তাদের অর্থ
থেকেই দেয়। যেমন, ১০,০০০/- টাকা গাছের মূল্য হলে এর ৪৫% হল ৪,৫০০/- টাকা। এই ৪,৫০০/- টাকা তাদের ভাষায় মধ্যস্বত্ত্বভোগী নিয়ে নেয়। বাকি থাকে ৫,৫০০/- টাকা। এর ভিতরে কোম্পানির লভ্যাংশও ধরা আছে। তাহলে এখানে
ভোক্তার লাভ হল না; বরং আরো বেশি ক্ষতি হল। ৫,৫০০/- টাকার পণ্য ১০,০০০/- টাকায় নিতে হচ্ছে একটি বহুল প্রচলিত এমএলএম কোম্পানি বলে থাকে, তারা পণ্যের লভ্যাংশের ৮৮% পরিবেশককে দিয়ে দেয়। অবশিষ্ট ১২% নিজেরা রাখে।
আচ্ছা ১২% এর স্থানে ২০% যদি কোম্পানি লাভ করত তবুও ভোক্তা বেশি উপকৃত হত যদি কিনা মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের উঠিয়ে দেওয়া হত। তারা বলে, ৮৮% লাভ পরিবেশকদেরকে দেয়। কিন্তু চেইন যদি লম্বা হতে থাকে তাহলে তো ১০০%ও ছাড়িয়ে যাবে।

কিভাবে তারা এত বিপুল পরিমাণ কমিশন দেয়?

তারা আরো বলে, ক্রেতাদেরকে লাভবান করার জন্য বিজ্ঞাপনের খরচ বাঁচিয়ে সেটা তাদেরকে ফেরত দেই।
প্রথম কথা হল, তারা বিজ্ঞাপন দেয় না-কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়। দ্বিতীয়ত ক্রেতাদেরকে লাভবান করাই যদি উদ্দেশ্য হয় তাহলে প্রথমেই পণ্যের মূল্য ঐ পরিমাণ কমিয়ে দিন এবং সরাসরি ক্রেতাকে হ্রাসকৃত মূল্যে পণ্য বিক্রয় করুন। তাহলেই
তো হল। তা না করে স্তর সৃষ্টি করে ঘুরিয়ে দেন কেন? আপনাদের পণ্য বা সেবা যদি যথাযথ মূল্যেই বিক্রি করে থাকেন
তবে যতটুকু আপনার লাভ দরকার তা রেখে দাম নির্ধারণ করে বাজারে ছাড়ুন। যেমন, ১০,০০০/- টাকায় যদি আপনার ৪,৫০০/-টাকা লাভ থাকে এবং তা থেকে পরিবেশকদেরকে ৪,০০০/- টাকা দিয়ে থাকেন তাহলে আপনি পণ্যটি সরাসরি ৬,০০০/- বা ৬,৫০০/- মূল্যে বাজারে ছাড়ুন দেখবেন কোনো বিজ্ঞাপন দরকার হবে না, পরিবেশকও লাগবে না, খুচরা বিক্রেতারা দলে দলে এসে আপনার কাছে ভিড় করবে কারণ আপনাদের ভাষ্যমতে এমনিতেই আপনাকে পণ্যের মূল্য
বাজার দরের সমান বা কম। এসব কথা শুনে তাদের অনেক কর্মকর্তা চুপ মেরে গেছে। দ্বিতীয় উসূলটির সাথেও যে
MLM সাংঘর্ষিক তা বলা হয়নি।

মোদ্দাকথা : বহু স্তরে বিপণনের এ পদ্ধতি শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি এবং উসূল যাওয়াবেতের সাথে সাংঘর্ষিক।

৩য় উসূল

 আকলু মালিল গায়র বিলবাতিল (বাতিল পন্থায় অন্যের সম্পদ গ্রহণ)। এর ব্যাখ্যায় রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেছেন,  (শর্তযুক্ত আকদে) বিনিময়হীন উপার্জনই হল বাতিল পন্থার উপার্জন। (আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৭২)

MLM-এর মধ্যে ‘আকলু মালিল গায়র বিলবাতিল’-এর উপস্থিতি:

MLM কারবারগুলোতে ডাউনলেভেল থেকে আপ লেভেলে যে কমিশন আসে তা বিনিময়হীন হাসিল হয়। কারণ ১ম
স্তরের সরাসরি জোগাড় করা ক্রেতারা ছাড়া ২য় স্তরের পরবর্তী স্তরগুলোতে যে সকল ব্যক্তি যুক্ত হয় তারা কোম্পানিতে
যোগ হয়েছে অন্যান্য লোকজন কর্তৃক এবং তাদের স্বাক্ষরে। সুতরাং যে কমিশন বা পারিশ্রমিক নিম্নস্তর থেকে আসছে
তা বিনিময়হীন হওয়ার কারণে ‘আকলু মালিল গায়র বিলবাতিল’ তথা (অন্যের সম্পদ বাতিল পন্থায় আহরণ)-এর অন্তর্ভুক্ত।

৪র্থ উসূল

লেনদেনের ক্ষেত্রে শরীয়তের একটি উসূল হল, আকদ তথা চুক্তির সময় পণ্য সুনির্ধারিত হওয়া। যেন পরবর্তীতে এ নিয়ে
ঝগড়া-বিবাদ না হয়। দেখুন, কোনো কিছুর প্রতিকার করা থেকে তা প্রতিরোধ করা অর্থাৎ গোড়া থেকেই হতে না দেওয়া
অনেক ভালো। অসুখ হওয়ার পর চিকিৎসা করে ভালো হওয়ার চেয়ে আগে থেকেই সতর্ক থাকা উচিত যেন অসুখ না হয়।
তাই শরীয়ত পূর্ব থেকেই ঝগড়া বিবাদের ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দিতে চেয়েছে। ফেতনা-ফাসাদের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে।
এজন্য শরয়ী উসূল মোতাবেক কারবার করলে ঝামেলা হওয়ার সুযোগ থাকে না। দেখুন সূরা বাকারার ২৮২ নং আয়াতে
যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো অনুসরণ করা হলে চুক্তি, ঋণ ইত্যাদি নিয়ে বর্তমানে যেসব ফেতনা হয় তা কখনো
হত না। বেচাকেনার ক্ষেত্রে পণ্য ও মূল্য সুনির্ধারিত হওয়া আবশ্যক। তদ্রূপ ইজারার ক্ষেত্রে প্রাপ্য সেবাও নির্দিষ্ট হতে হবে। অজানা বা অস্পষ্টতা থাকতে পারবে না। আকদের সময়ই সব পরিষ্কার করে নিতে হবে। এখন ক্রয়-বিক্রয় করে ফেলি
পরে ঠিক করে নিব তা হবে না। কেনাবেচা যখন সংগঠিত হবে তখন স্বচ্ছতার সাথেই হতে হবে।

৫ম উসূল

বেচাকেনা ‘আলগারার’ বা প্রতারণামুক্ত হতে হবে। মাবসূতের ভাষ্য মতে ‘আলগারার’ অর্থাৎ যার পরিণাম অজানা। কিতাবুল মাবসূত ১২/১৯৪

MLM পদ্ধতি যেভাবে উপরোক্ত দুটি উসূলের পরিপন্থী

একজন ডিস্ট্রিবিউটর যে চুক্তিতে কোম্পানির সাথে যুক্ত হয় তাতে লোকটি তার ডাউন লেভেল থেকে কমিশন লাভ করতে
থাকবে। অথচ তার ক্ষেত্রে ডাউন লেভেল সৃষ্টি হবে কি না, হলে তা কত দিন এবং কয়টি স্তর পর্যন্ত চলবে তা সম্পূর্ণ
অনিশ্চিত, যা শরীয়তে নিষিদ্ধ আলগারারে বাস্তব দৃষ্টান্ত। তদ্রূপ ৪র্থ উসূলেরও পরিপন্থী। কারণ এমএলএম এর একজন
ক্রেতা পরিবেশক কোম্পানিকে তার নির্ধারিত টাকাগুলো দিচ্ছে দুটি জিনিসের বিনিময় হিসেবে : ক) নির্ধারিত পণ্য বা সেবা
খ) পরিবেশক হিসেবে কমিশন প্রাপ্তি। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বিনিময়ের প্রথমটি জানা থাকলেও দ্বিতীয়টির পরিণাম অজানা। এরকম আরেকটি দৃষ্টান্ত পাকিস্তানের বিজনেস ডটকম। তাদের পলিসি ছিল, টাকার বিনিময়ে একজনকে
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিবে। এরপর সে আরো কিছু লোককে ওখান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে রাজি করবে এবং এর বিনিময়ে
সে কমিশন পাবে। এখানে পরবর্তী স্তরটা অজানা। কারণ লোক পাওয়া না পাওয়া অনিশ্চিত। তদ্রূপ ট্রি প্লান্টেশনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এখানে আপনি দুটি জিনিস কিনলেন : ক) পণ্য তথা গাছ। খ) সেবা তথা ৫০০ পয়েন্ট। এই সেবাটার প্রাপ্যতা ও পরিণাম অজানা।

MLM নাজায়েয হওয়ার শাখাগত কারণগুলো

প্রথম অংশের (MLM অবৈধ হওয়ার মৌলিক কারণ) সাথে সম্পৃক্ত দুটি গুরুত্বপূর্ণ কথা।
১. প্রথম কথা উসূলে শরীয়ত ও মাকাসিদে শরীয়ত অর্থাৎ শরীয়তের মৌলিক নীতিমালাগুলো ও শরীয়তের উদ্দেশ্যাবলি
সকল মাযহাব, সকল ফকীহ ও মুফতীর অভিন্ন সম্পদ ও অভিন্ন পাথেয়।
২. আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে প্রথমটির ফলাফল। অর্থাৎ একই কারণে পুরো পৃথিবীর সকল মাযহাব ও নির্ভরযোগ্য মুহাক্কিক আলেমগণ হালাল-হারাম সংক্রান্ত মৌলিক বিষয়গুলোতে প্রায় অভিন্ন মত পোষণ করে থাকেন। MLM এর ক্ষেত্রেও
তা-ই ঘটেছে। বিশ্বের মুহাক্কিক আলেমগণ এমএলএম পদ্ধতিকে নাজায়েয বলেছেন। মোটকথা MLM বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার মুফতীগণ স্ব স্ব স্থানে থেকে এক ধরনের ফতোয়াই প্রদান করেছেন।

একটি কাকতালীয় ব্যাপার। এই ফতোয়াটি তৈরি হয়েছে বাংলায়। ভারতের আলেমদের নিকট তা হয়ত পৌঁছেনি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, MLM -এর যে ফিকহী বিশ্লেষণ এখানে করা হয়েছে ৪ বছর পরে স্ব স্থানে থেকে ঠিক ঐভাবেই তারা তাতবীক দিয়েছেন। এখানে কারবারটিতে যে মৌলিক দোষগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে ওখানেও সেগুলোকে মৌলিক ত্রুটি
বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

 MLM নাজায়েয হওয়ার  ফতোয়ায় কয়েকটি বিষয় আলোচিত হয়েছে :

১. । MLM নাজায়েয হওয়ার বহু কারণের মধ্যে এটি অন্যতম। একে আরেক ভাষায় বলা হয় ‘বাই ওয়া শর্ত’ (একটি
আকদের সাথে অন্য আরেকটি আকদ যুক্ত করা)। হাদীসে এটি নিষেধ করা হয়েছে। উক্ত ফতোয়াতে স্পষ্টভাবে লেখা
আছে, MLM এর মধ্যে দুটি আকদ বিদ্যমান। তা হল,  MLM এমন একটি বেচাকেনা, যাতে ইজারা তথা পরিবেশক হওয়ার
শর্ত যুক্ত রয়েছে অথবা এমন একটি ইজারা (পরিবেশক) চুক্তি, যাতে বেচাকেনার শর্ত যুক্ত রয়েছে।
আগে MLM কোম্পানিগুলো এক ফরমেই উভয় কাজ অর্থাৎ দুটি চুক্তি সম্পন্ন করত। এখন কোনো কোনো কোম্পানি
আলাদা আলাদা ফরমের ব্যবস্থা করেছে। একটি পণ্য কেনার ফরম, অপরটি ডিস্ট্রিবিউটরশীপের আবেদন ফরম। এভাবে
হয়ত তারা বুঝাতে চায়, এখানে পৃথক পৃথক দুটি চুক্তি হচ্ছে। অথচ সকলেই জানে যে, কার্যক্ষেত্রে একটি চুক্তির জন্য
অন্যটি শর্ত (দুটি ফরম করা সত্ত্বেও)। একথা সকলেই জানে যে, শুধু পণ্য কেনার জন্য এমএলএম কোম্পানিতে কেউ যায়
না। আবার পণ্য না কিনলে কোম্পানি কখনো পরিবেশক বানাবে না। আর লেনদেন বা  মুআমালায় শরীয়ত মাআনি ও
মাকাসিদ তথা উদ্দেশ্য ও বাস্তবতা বিবেচনা করে থাকে। শুধু শব্দ বা আলফায এক্ষেত্রে ধর্তব্য নয়। এখানে দুইটি ফরম
করে শব্দের দিক থেকে দুইটি চুক্তিকে আলাদা করার চেষ্টা করা হলেও উদ্দেশ্য তথা মাকসাদ এর দৃষ্টিকোণ থেকে দুটি
অভিন্ন এবং একটির জন্য অপরটি শর্ত।

অনেক লোক এমন আছে,

যারা সদস্য তৈরি করতে পারে না। পরে বাধ্য হয়ে পণ্যের প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও নিজের পকেটের টাকা দিয়ে পণ্য কিনে সদস্য বানায়, এরপর বলে, এবার আপনি অন্যকে তৈরি করুন। এবং নিজে লাভ
করুন আর আমাকে লাভবান হওয়ার সুযোগ দিন। সুতরাং ফরম একটা করুক, দুইটা করুক, এক কথায় বলুক, দুই কথায়
বলুক আকদ একটার সাথে আরেকটা শর্তযুক্ত হচ্ছেই। উকূদের মধ্যে মাআনী ও মাকাসিদ তথা উদ্দেশ্য ধর্তব্য। যেমন,
কেউ ৩,০০০/-টাকার জিনিস ৩০০/-টাকায় বিক্রি করতে চায়। সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে এতে নাজায়েয কিছু নেই। কেননা
তার পণ্য সে যত দামে খুশি বিক্রি করতে পারে। এতে কারো কিছু বলার নেই। কিন্তু যদি আপনি তার মাকসাদ জিজ্ঞাসা
করেন এবং সে বলে, সে আমাকে ১০,০০০/- টাকা করয দিবে তাই আমার পণ্যটি কম মূল্যে বিক্রি করছি, তখন কেউ একে
বৈধ বলবে না। কেননা এটা সুদের অন্তর্ভুক্ত। মোটকথা এখানে উদ্দেশ্যের বিবেচনায় মাসআলার হুকুম বলা হয়েছে, শব্দের বিবেচনায় নয়।

ফতোয়ায় দ্বিতীয় বিষয়টি ছিল:

২. বেফাকের মুফতী বোর্ড ঢাকার ফতোয়ায় আরেকটি বিষয় ছিল, ‘আলউজরাতু বিলা আমাল ওয়াল আমালু বিলা উজরা’। অর্থাৎ কর্মহীন পারিশ্রমিক ও পারিশ্রমিকহীন কর্ম। এ দুটিও শরীয়তে নিষিদ্ধ এবং ছোটখাটো নিষিদ্ধ বিষয় নয়; বরং বড় বড় নিষিদ্ধ বিষয়ের অন্তর্ভুুক্ত।

আমরা শুধু রিবা, কিমার তথা সুদ-জুয়া জাতীয় বিষয়গুলোকেই বড় করে দেখি। অন্যান্য নিষিদ্ধ বিষয়কে তেমন কিছু মনে করি না। অথচ এসব নিষিদ্ধ বিষয়গুলো অনেক ক্ষেত্রে ঐ সকল বড় বড় নিষিদ্ধ বিষয় পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। এটি একটি তাত্ত্বিক ও গভীর বিষয়। এখন স্বল্প সময়ে বিস্তারিতভাবে বলার অবকাশ নেই। শুধু এতটুকু বলছি, মূলত প্রতিটি ফাসেদ বিষয় বড় বড় খারাবির দিকে টেনে নিয়ে যায় বলেই শরীয়ত এগুলোকে নিষেধ করেছে। গোড়া থেকেই নিষেধ করেছে।

One thought on “MLM মাল্টিলেভেল মার্কেটিং-২

Comments are closed.