হালাল ব্যবসা ভূমিকা:
ইসলাম একটি শাশ্বত, সার্বজনীন ও পূর্ণাঙ্গ জীনব ব্যবস্থা। সৃষ্টি জগতে এমন কোন
দিক ও বিভাগ নেই, যেখানে ইসলাম নিখুঁত ও স্বচ্ছ দিক-নির্দেশনা প্রদান করেনি।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমরা এ কিতাবে কোন কিছুই অবর্ণিত রাখিনি’ (মায়েদাহ
৫/৩৮)। মানবতার মুক্তির দিশারী মুহাম্মাদ (ছাঃ) অন্ধকারাচ্ছন্ন, পাপ-পঙ্কিলতাময়
এ বসুন্ধরায় জাহেলিয়াতের সকল অন্যায়-অত্যাচার, অবিচার-অশান্তি, অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ অহি-র
আলোকে হালাল ব্যবসা ভিত্তিক একটি সর্বোত্তম, অভূতপূর্ব আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ করেছিলেন। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, এক কথায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইসলামের রয়েছে সঠিক
কল্যাণকামী দিক নির্দেশনা।
The Quran in everyday life গ্রন্থকার বলেন, ‘ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য সমস্যাবলী যা মানবজাতি, মানবকল্যাণ অথবা মানব
প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত তার সবই পূর্ণাঙ্গভাবে আলোচিত হয়েছে আল-কুরআনে’।
সূদ সমাজ শোষণের অন্যতম হাতিয়ার এবং মানব সভ্যতার সবচেয়ে নিষ্ঠুর শত্রু।
সূদী কারবারের ফলে সমাজের বিত্তশালীরা সমাজের অসহায়, নিঃস্ব, দরিদ্র বনু
আদমের সম্পদ জোঁকের মত চুষে চুষে খেয়ে পাহাড় গড়ে তুলে। পক্ষান্তরে
সমাজের হতভাগ্য হতদরিদ্র মানুষগুলো দিন দিন অর্থশূন্য হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরে।
কিন্তু ইসলাম সাম্যের ধর্ম। তাই সূদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সর্বনাশা
রাহুগ্রাস থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করতে ইসলাম সকল প্রকার সূদকে চিরতরে
হারাম করে ইনছাফপূর্ণ সুষম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করেছে। সাথে ব্যবসা
ভিত্তিক অর্থনৈতিক লেনদেনের নির্দেশ দিয়েছে।
হালাল উপার্জন ইবাদত কবুলের আবশ্যিক পূর্বশর্ত। আর হালাল উপার্জনের
অন্যতম প্রধান মাধ্যম হল বৈধ পন্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য করা। হালাল ব্যবসা-বাণিজ্য
জীবিকা নির্বাহের সর্বোত্তম মাধ্যম হওয়ায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), খুলাফায়ে রাশেদীন,
আশারায়ে মুবাশশারা সহ অধিকাংশ ছাহাবী ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পক্ষান্তরে কারূণ, হামান, আবু জাহল, উতবা-শায়বা, উবাই ইবনে খালফ
প্রমুখ কাফের মুশরিকরা ধোঁকা, প্রতারণামূলক সূদভিত্তিক হারাম ব্যবসা-বাণিজ্যের
মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। বস্ত্ততঃ হালাল-হারাম ব্যবসা-বাণিজ্যের রূপরেখা সম্পর্কে আমাদের সম্যক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত যরূরী। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে এ বিষয়ে
আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
হালাল ব্যবসার বিষয়ে ইসলামের দিক নির্দেশনা:
হালাল ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সূদকে হারাম করেছেন’ (বাক্বারাহ ২/২৭৫)। অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, কেবলমাত্র তোমাদের
পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ’ (নিসা ৪/২৯)।
উল্লিখিত আয়াতে (তোমরা পরস্পরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না) ‘অন্যায়ভাবে’ বলতে এখানে এমন সব পদ্ধতির কথা বুঝানো হয়েছে, যা সত্য ও
ন্যায়নীতি বিরোধী এবং নৈতিক ও শরী‘আতের দৃষ্টিতে অবৈধ। লেনদেন অর্থ হচ্ছে পরস্পরের মধ্যে স্বার্থ ও মুনাফার বিনিময় করা। যেমন ব্যবসা, শিল্প ও কারিগরী ইত্যাদি ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। সেখানে একজন অন্য জনের প্রয়োজন সরবরাহ করার জন্য
পরিশ্রম করে এবং তার বিনিময় দান করে। তাছাড়া আয়াতে (পারস্পরিক সম্মতির
ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য) বাক্যটি সংযুক্ত করে বলে দেয়া হয়েছে যে, যেসব ক্ষেত্রে
ব্যবসার নামে সূদ, জুয়া, ধোঁকা-প্রতারণা ইত্যাদির আশ্রয় নিয়ে অন্যের সম্পদ হস্তগত
করা হয়, সেসব পন্থায় সম্পদ অর্জন বৈধ ব্যবসার অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং তা হারাম ও
বাতিল পন্থা। তেমনি যদি স্বাভাবিক ব্যবসার ক্ষেত্রেও লেনদেনের মধ্যে উভয় পক্ষের আন্তরিক সন্তুষ্টি না থাকে, তবে সেরূপ ক্রয়-বিক্রয়ও বাতিল এবং হারাম।
ব্যবসা-বাণিজ্যকে কলুষিত করার বিভিন্ন রূপ দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সুনীতি ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে পরিচালিত
হবার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। পক্ষান্তরে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে অপর এক দৃষ্টিভঙ্গিতে একে নিষিদ্ধ না বললেও বিষয়টি স্পষ্ট জানা যায় যে, ব্যবসা-বাণিজ্যের
মধ্যে এরূপ কিছু বিষয় আছে যা মুমিনদেরকে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত তথা ছালাত আদায় হ’তে বিরত রাখতে পারে। এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে বর্ণিত হয়েছে,
‘সেসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং
ছালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সেদিনকে যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে’ (নূর ২৪/৩৭)।
হালাল ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্ব:
মানুষের জীবন ধারণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্ব আদিকাল থেকেই স্বীকৃত। তবে জীবনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে এরূপ ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে নিজেদের রক্ষা করা মুমিনদের কর্তব্য। এজন্য জুম‘আর
ছালাতের সময় ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
‘হে ঈমানদারগণ! জুম‘আর দিনে যখন ছালাতের জন্য আহবান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়
যদি তোমরা উপলব্ধি কর। আর ছালাত সমাপ্ত হ’লে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়
এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও’ (জুম‘আ ৬২/৯-১০)। উপরোক্ত আয়াতগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য
করার সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নিজ হাতে কাজ করা এবং হালাল পথে ব্যবসা করে যে
উপার্জন করা হয় তাই সর্বোত্তম’। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি
যখন ত্যাগ স্বীকার করে ছওয়াবের আশায় মুসলিম জনপদে কোন প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানী করে এবং ন্যায্য মূল্যে তা বিক্রয় করে, আল্লাহর নিকট তিনি শহীদের মর্যাদা
লাভ করেন।
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলা ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিজারাহ (ةجارة), বায়উন (بيع), শিরা (شراء) এ তিনটি শব্দ ব্যবহার করেছেন। আল-কুরআনে ৮টি স্থানে তিজারাহ (ةجارة)
৭টি স্থানে বায়‘ (بيع) এবং ১৪টি স্থানে শিরা (شراء) শব্দ উল্লিখিত হয়েছে।
হালাল ব্যবসা-বাণিজ্য: নিম্নোক্ত পাঁচটি পদ্ধতিতে:
ব্যবসা করলে তা হালাল হিসাবে ইসলামী শরী‘আত কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
(১) বায়‘উ মুরাবাহ : লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে নগদ মূল্যে ক্রয়বিক্রয়ের একক ব্যবসা।
(২) বায়‘উ মুয়াজ্জাল : ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোন সময়ে এক সাথে অথবা কিস্তিতে
উভয় পক্ষের সম্মতিতে মূল্য পরিশোধের শর্তে ক্রয়-বিক্রয়।
(৩) বায়‘উস সালাম : ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোন সময়ে সরবরাহের শর্তে এবং
তাৎক্ষণিক উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরী‘আত অনুমোদিত
পণ্য সামগ্রীর অগ্রিম ক্রয়বিক্রয়। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন,
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন মদীনায় আসলেন তখন লোকেরা (ফসলের জন্য)
অগ্রিমমূল্য প্রদান করত। তখন রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি অগ্রিম মূল্য প্রদান
করবে সে যেন তা সুনির্দিষ্ট মাপের পাত্রের দ্বারা ও সুনির্দিষ্ট ওযনে প্রদান করে’।
(৪) বায়‘উ মুযারাবা : এক পক্ষের মূলধন এবং অপরপক্ষের দৈহিক ও বুদ্ধিভিত্তিক
শ্রমের সমন্বয়ে যৌথ ব্যবসা। এ পদ্ধতিতে লভ্যাংশ তাদের মাঝে চুক্তিহারে বণ্টিত হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খাদীজা (রাঃ)-এর মূলধন দ্বারা এরূপ যৌথ ব্যবসা করেছিলেন।
ছাহাবায়ে কেরাম অনেকেই এ পদ্ধতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন।
মুযারাবায় যে ব্যক্তি পুঁজির যোগান দেয় তাকে ছাহিবুল মাল, বা রাববুল মাল এবং শ্রমদানকারী তথা ব্যবসা পরিচালককে মুযারিব বা উদ্যোক্তা বলা হয়। এখানে ছাহিবুল
মাল-এর পুঁজি হচ্ছে ব্যবসায় প্রদত্ত অর্থ-সম্পদ আর মুযারিবের পুঁজি হচ্ছে দৈহিক ও বুদ্ধিভিত্তিক শ্রম।
মুযারাবা কারবারে লাভ হলে ব্যবসায় শুরুতে কৃত চুক্তির শর্তানুসারে ছাহিবুল মাল
এবং মুযারিব উভয়েই উক্ত লাভ ভাগ করে নেয়। পক্ষান্তরে ব্যবসায় লোকসান হলে
সম্পূর্ণ লোকসান কেবল ছাহিবুল মাল তথা পুঁজি বিনিয়োগকারীকেই বহন করতে হয়।
আর এ ক্ষেত্রে মুযারিবের ব্যয়িত শ্রম, বুদ্ধি ও সময় বৃথা যায়। মুযারিব কোন লাভ পায়
না এটাই তার লোকসান। তবে ব্যবসা পরিচালনায় মুযারিবের অবহেলা কিংবা চুক্তির
শর্ত ভঙ্গের কারণে লোকসান হলে সেক্ষেত্রে লোকসানের দায়ভার মুযারিবকেই বহন করতে হবে। কেননা এ ক্ষেত্রে পুঁজির মালিকের কোন ভূমিকা থাকে না।
(৫) বায়‘উ মুশারাকা : মূলধন ও লভ্যাংশের ব্যাপারে দুই বা ততোধিক অংশীদারের
মধ্যকার চুক্তি অনুসারে ব্যবসা।
মুশারাকা পদ্ধতিতে ব্যবসায় লাভ হলে অংশীদারগণ পূর্ব নির্ধারিত অনুপাতে তা ভাগ করে নেয়। আর লোকসান হলে অংশীদারগণ নিজ নিজ পুঁজির আনুপাতিক হারে তা বহন করে।
হালাল ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বরূপ :
ব্যবসা হালাল হওয়ার জন্য কতিপয় বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে এবং সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। অন্যথা ব্যবসা বৈধ হবে না। এখানে সংক্ষেপে সেগুলি আলোচনা করা হ’ল।
সততা : সততা, আমানতদারী ও বিশ্বস্ততা ব্যবসা হালাল হওয়ার পূর্বশর্ত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা মহা অপরাধী হিসাবে উত্থিত হবে। তবে যারা আল্লাহকে ভয় করবে, সততা ও ন্যায় নিষ্ঠার সাথে ব্যবসা করবে তারা ব্যতীত’।
মূল্য নির্ধারণ :
মূল্য নির্ধারণ বলতে পণ্যের এমন একটি নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ বুঝায়, যাতে লভ্যাংশ
থাকবে যেন পণ্যের মালিক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, আবার উক্ত পণ্যের ভোক্তাদের জন্যও কষ্টসাধ্য না হয়।
লাভের পরিমাণ :
কোন পণ্যে কত লাভ করা যাবে এরূপ কোন নির্দেশনা কুরআন-হাদীছে পাওয়া যায় না। আবার সকল পণ্যে এক রকম লাভ করা যাবে না এরূপ কোন নিষেধাজ্ঞাও নেই।
আসলে শরী‘আতে বিষয়টিকে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। কারণ লাভ নির্ণয়ের বিষয়টি
নির্ভর করে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে পরিস্থিতি-পরিবেশের উপর। তবে লাভের সর্বোচ্চ
ও সর্বনিম্ন সীমা সম্পর্কে একটা ধারণা আমরা হাদীছ থেকে লাভ করতে পারি।
উরওয়া ইবনে আবিল জাদ আল-বারেকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‘নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট পশুর একটি চালানের সংবাদ আসল। তিনি আমাকে
একটি দীনার দিয়ে বললেন, উরওয়া! তুমি চালানটির নিকট যাও এবং আমাদের জন্য
একটি বকরী ক্রয় করে নিয়ে আস। তখন আমি চালানটির কাছে গেলাম এবং চালানের মালিকের সাথে দরদাম করে এক দীনার দিয়ে দুইটি বকরী ক্রয় করলাম। বকরী দু’টি
নিয়ে আসার পথে এক লোকের সাথে দেখা হয়। লোকটি আমার থেকে বকরী ক্রয় করার জন্য আমার সাথে দরদাম করল। তখন আমি তার নিকট এক দীনারের বিনিময়ে একটি বকরী বিক্রয় করলাম এবং একটি বকরী ও একটি দীনার নিয়ে চলে এলাম। তখন আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এই হচ্ছে আপনার দীনার এবং
এই হচ্ছে আপনার বকরী। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটা করলে কিভাবে? উরওয়া বলেন, আমি তখন তাঁকে ঘটনাটি বললাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আপনি
তার হাতের লেন-দেনে বরকত দিন’।
এখানে উল্লেখ্য বিষয় হল:
উক্ত ছাহাবী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পক্ষে ১০০% লাভ করা সত্ত্বেও রাসূল (ছাঃ)
তার জন্য বরকতের দো‘আ করেছেন এবং এ দো‘আর ফলে উক্ত ছাহাবী জীবনে প্রচুর বরকত লাভে ধন্য হয়েছেন। বুখারীর বর্ণনায় এসেছে, উক্ত ছাহাবী মাটি ক্রয় করলেও
তাতে লাভ হ’ত। সুতরাং মজুতদারী না করে, প্রতারণার আশ্রয় না নিয়ে ক্রেতার স্বাভাবিক
ও স্বেচ্ছা সম্মতির ভিত্তিতে কোন পণ্য বিক্রি করে বিক্রেতা ১০০% লাভ করলেও শরী‘আতে কোন বাধা নেই। তবে এক্ষেত্রে ক্রেতা বা ভোক্তা যেন যুলুমের শিকার না হয়, সেদিকে
লক্ষ্য রাখা যরূরী।
লাভের সর্বনিম্ন সীমা সম্পর্কে ইসলামী চিন্তাবিদগণ বলেছেন, সম্পদ ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে কমপক্ষে এতটুকু লাভ করা যায় যাতে ব্যবসায়ীর পরিবারের ভরণ-পোষণ, ব্যবসার কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান ও ২.৫% যাকাত দেয়ার পর মূলধন অক্ষত থাকে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে মানুষের সাথে দয়ার্দ্র, নম্র ও সদ্ব্যবহার পূর্বক ন্যায্য মূল্য গ্রহণ করা অত্যন্ত নেক কাজ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ ঐ মহানুভব মানুষের প্রতি দয়া করেন, যে ক্রয়-বিক্রয়ে এবং নিজের পাওনা আদায়ে নম্রতা ও সহনশীলতা প্রদর্শন করে’।