সূর্য উদিত হওয়া পশ্চিম আকাশে:

কিয়ামতের বড় আলামত পশ্চিম আকাশ থেকে  সূর্য উদিত হওয়া, পৃথিবীর জীবন ও মহাবিশ্বের নিয়ন্ত্রন শৃঙ্খলায় আল্লাহ
তাআলা যে পরিবর্তন আনবেন, এটি হবে তারই শুরু, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দেবেন, কিয়ামত ঘটতে আর
দেরি নেই। আর কিয়ামত ঘটার সঙ্গে-সঙ্গে মহাবিশ্ব সম্পূর্ণরূপে পালটে যাবে, যার ইঙ্গিত আল-কোরানের অনেক আয়াতেই এসেছে। হাদিস অনুযায়ী প্রথম পরিবর্তনটি হলো সূর্য পশ্চিম আকাশ থেকে উদিত হওয়া। অথচ ইতোপূর্বে তা পূর্ব আকাশ
থেকে উদিত হয়েছে। আর যিনি পূর্বাকাশ থেকে সূর্যোদিত করতে পেরেছন, তিনি তার গতিপথ পরিবর্তন করে দিতেও সক্ষম। কারণ তিনিই তার স্রষ্টা ও সার্বিক ব্যবস্থাপক। প্রকাশ পাওয়ার ক্ষেত্রে এ আলামতটিই হবে প্রথম।
কেয়ামতের বড় আলামতগুলো প্রকাশ পাওয়ার ক্রম কি হবে, সে ব্যাপারে ইবনে হাজার (র.) বলেন,‘সকল হাদিস একত্র
করলে, যে বিষয়টি আমার কাছে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বলে মনে হয়, তা হলো দাজ্জালের প্রকাশ পাওয়াই বড় আলামতগুলোর
মধ্যে প্রথম, যা ভূপৃষ্ঠের সাধারণ অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে বলে জানান দেবে। এ আলামতটি ঈসা ইবনে মারয়াম
(আঃ) এর পরলোকগমনের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যাবে। আর সূর্য পশ্চিমাকাশ থেকে উদিত হওয়া এমন বড় আলামত
গুলোর মধ্যে প্রথম, যা ঊর্ধ্ব জগতে প্রকাশ পাবে এবং কেয়ামত ঘটে যাওয়ার মাধ্যমে তা শেষ হবে। আর জন্তু বের হওয়ার
ঘটনা হয়ত একই দিন ঘটবে যেদিন সূর্য পশ্চিমাকাশ থেকে উদিত হবে। এর হিকমত হলো, সূর্য পশ্চিমাকাশ থেকে উদিত
হয়ে তাওবার দরজা বন্ধ করে দেবে। এরপর জমিনের জন্তু বের হয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে এবং বুঝিয়ে দেবে, কেন
তাওবার দরজা বন্ধ করা হলো। আর কিয়ামত শুরু হয়ে যাওয়ার প্রথম আলামত আগুন বের হওয়া, যা মানুষকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে নিয়ে যাবে।’ (ফাতহুল বারী ১১/২৯৬)। ইবনে হাজার (র.) এর কথার খোলাসা হলো, কেয়ামতের বড় আলামতগুলো তিন প্রকার। প্রথম প্রকার হলো, যা ভূপৃষ্ঠে সাধারণ অবস্থার পরিবর্তনকে ইঙ্গিত করবে। আর দ্বিতীয় প্রকার হলো, যা
ঊর্ধ্বজগতে সাধারণ অবস্থার পরিবর্তনকে বোঝাবে। আর তৃতীয় প্রকার হলো, যা কেয়ামত শুরু হয়ে যাওয়া নির্দেশ করবে।

পশ্চিমাকাশে সূর্য ওঠা সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন: 

কিয়ামত সুনিশ্চিত তবে কখন এ কিয়ামত সংঘটিত হবে সে ব্যাপারে মানুষের কোনো জ্ঞান নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) কে
প্রশ্ন করা হয়েছিল কিয়ামত কখন হবে- তিনি এ ব্যাপারে কোনো কিছুই বলেননি। কিন্তু তিনি কিয়ামতের অনেক আলামত
বর্ণনা করেছেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাযি.) বলেন আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘কিয়ামতের সর্ব প্রথম আলামতের মধ্যে পশ্চিম গগন থেকে সূর্য উদিত হওয়া এবং চাশতের (নামাজের) সময় মানুষদের
ওপর জন্তুর আবির্ভাব হবে। যেটিই তার সাথীর পূর্বে হোক দ্বিতীয়টি তার পরই জলদি চলে আসবে। (মুসলিম ও আবু দাউদ)।
আল্লাহ বলেন, ‘যেদিন আপনার পালনকর্তার কোনো নিদর্শন আসবে, সেদিন এমন কোনো ব্যক্তির বিশ্বাস স্থাপন তার জন্য ফলপ্রসূ হবে না; যে পূর্ব থেকে বিশ্বাস স্থাপন করেনি কিংবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোনোরূপ সৎকর্ম করেনি।’
(সুরা আনআ’ম : আয়াত ১৫৮) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পশ্চিম গগন থেকে সূর্য না ওঠা পর্যন্ত কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে না। যখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে
উদিত হবে তখন সকল মানুষ ঈমান আনবে। কিন্তু সেদিন- ‘এমন কোনো ব্যক্তির বিশ্বাস স্থাপন তার জন্য ফলপ্রসূ হবে না;
যে পূর্ব থেকে বিশ্বাস স্থাপন করেনি কিংবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোনোরূপ সৎকর্ম করেনি।’ (বুখারি ও মুসলিম)
মুফাসসিরদের অনেকে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় যা বলেছেন তার খোলাসা হলো- সূর্য পশ্চিমাকাশ থেকে উদিত হওয়ার পর
কাফের ব্যক্তির ঈমান আনা, পাপী ব্যক্তির তাওবা করা আদৌ কোনো উপকারে আসবে না। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি মুমিন
হয়েও সৎকাজ করেনি, এ সময় যদি সে আমল করতে শুরু করে, তবে তাও কোনো ফায়দা পৌঁছাবে না। [ ফাতহুল বারী ১১/২৯৭]

উপসংহার:

কিয়ামতের আলামত বর্ণনার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো- মানুষ অন্যায় পথ পরিহার করে ন্যায়ের পথে আসবে। আল্লাহর
বিধান পালনে একনিষ্ঠ হবে। কুরআন সুন্নাহভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ উদ্যোগী হবে। ঈমান ও আমলের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে
ব্রতী হবে। কুরআন ও হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু কিয়ামতের আলামত প্রকাশ পাওয়ার পর কেউ যদি ঈমান আনতে
চায় বা সৎকর্ম করতে চায় তার এ সৎকাজ এবং ঈমান গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে
কিয়ামতের আলামতগুলো প্রকাশ পাওয়ার পূর্বেই প্রকৃত ঈমানদার হিসেবে নিজেকে তৈরি করার তাওফিক দান করুন।
আমিন।