সালাম নামক এই শান্তির বাণীটি সামাজিক জীবনে এক বিশাল স্থান দখল করে আছে। এর মধ্যে লুকিয়ে আছে এমন এক আকর্ষণীয় চুম্বক শক্তি যা মনের সকল প্রকার দূরত্ব, মনের কালিমা ও অনৈক্য দূর করে সবাইকে কাছে এনে ভ্রাতৃত্ব ও
ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে দেয়।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নির্দেশ :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, اَفْشُوْا السَّلاَمَ بَيْنَكُمْ ‘তোমরা সালামের ব্যাপক প্রচলন ঘটাও’। নবী করীম (ছাঃ) শুধু নির্দেশই
দেননি বরং নিজেও বাস্তব জীবনে এর উপর আমল করে উম্মতের সামনে এক অনুস্মরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
তিনি সবাইকে আগেই সালাম দিতেন। তিনি এমন একজন বিশ্বনেতা ছিলেন, যার কথা ও কর্মে ছিল অপূর্ব মিল।
তাই আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার মানুষকে লক্ষ্য করে বলেন,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ‘
রাসূলুল্লাহ-এর জীবনাচরণেই রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ’ (আহযাব ২১) সালাম অপর মুসলিম ভাইয়ের
অধিকার : এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের কতিপয় অধিকার রয়েছে। যেমন হাদীছে এসেছে
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ (رض) قَالَ قَالَ رسولُ اللهِ (صلى) حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ، قِيْلَ وَمَا هُنَّ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟
قاَلَ إِذَا لَقِيْتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ وَإِذَا دَعَاكَ فَاَجِبْهُ، وَإِذَاِ اسْتَنْصَحَكَ فَاَنْصِحْ لَهُ، وإاِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللهَ فَشَمِّتْه،ُ
وَإِذَا مَرِضَ فعُدْْهُ وإِذَا مَاتَ فَاتْبَعْهُ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘এক মুসলমানের উপর অন্য মুসলমানের ছয়টি
অধিকার তথা কর্তব্য রয়েছে। জিজ্ঞেস করা হল, হে রাসূল (ছাঃ)! সেগুলো কী কী? তিনি বললেন, (১) যখন তুমি তার
সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তাকে সালাম দিবে। (২) সে যখন তোমাকে দাওয়াত দিবে তখন তুমি তার দাওয়াত কবুল করবে।
(৩) সে যখন তোমার কাছে পরামর্শ বা উপদেশ চাইবে, তুমি তাকে সৎপরামর্শ দিবে। (৪) সে হাঁচি দিয়ে যখন
‘আল-হামদুল্লিাহ’ বলবে তুমি তার হাঁচির জবাব দিবে। (৫) সে যখন অসুস্থ হবে তখন তাকে দেখতে যাবে। (৬) সে যখন
মারা যাবে তখন তুমি তার সঙ্গী হবে’ (জানাযা পড়বে ও দাফন করবে)।
সুতরাং বুঝা গেল সালাম অপর মুসলমান ভাইয়ের একটি অধিকার।
এছাড়াও আল্লাহ তা‘আলা কারো সালামের জবাব উত্তমভাবে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
وَإِذَا حُيِّيْتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوْا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوْهَا إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيْبًا.
‘তোমরা যখন বিশেষ শব্দে সালাম প্রাপ্ত হবে তখন তোমাদের প্রতি প্রদত্ত সালামের চাইতে উন্নত ভাষায় সালাম দিবে।
অথবা ঐ ভাষাতেই উত্তর দিবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি বিষয়ের হিসাব সংরক্ষণকারী’ (নিসা ৮৬)
নিরাপদে জান্নাত লাভের উপায় :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلاَمٍ (رض) عَنِ النَّبِىِّ (صلى) أَنَّهُ قَالَ أَيُّهَا النَّاسُ اَفْشُوْا اَلسَّلاَمَ وَاْطعِمُوْا الطَّعُامَ وَصِلوُا الْأَرْحَامَ
وَ صَلُّوْا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ يَنَامُ تَدْخُلُوْا الْجَنَّةَ سَلاَمٌ-
আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘হে মানবমন্ডলী! তোমরা সালামের ব্যাপক প্রচলন
ঘটাও। ক্ষুধার্ত মানুষকে খাদ্য খাওয়াও। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর। তুমি রাতে ছালাত আদায় কর, মানুষ যখন ঘুমিয়ে
পড়ে তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।