সালামের উপকারিতা অহংকার দূর করে বিনয় সৃষ্টি করে :
প্রথমে সালাম প্রদানকারী গর্ব-অহংকার থেকে যেমন মুক্ত থাকে তেমন বিনয়ীও হতে পারে। অহংকার পতনের মূল। গর্ব-অহংকার যেমনি মানব জীবনকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে তেমনি সালামের উপকারিতা বিনয়, ভদ্রতা-নম্রতা মানুষকে উন্নতির চরম শিখরে আরোহণে সাহায্য করে। অহংকারী দাম্ভিক ব্যক্তিকে যেমন কেউ পছন্দ করে না, তেমনি তাকে আল্লাহ
ও ভালবাসেন না। সালামের উপকারিতা আল্লাহ বলেন, ‘যমীনে গর্বভরে চল না, নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন অহংকারী দাম্ভিককে ভালবাসেন না’(লোক্বমান ১৮)
অন্যদিকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
‘যার অন্তরে বিন্দুমাত্র অহংকার থাকে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না’। সুতরাং অহংকার নামক মারাত্মক ব্যাধি থেকে বাঁচতে চাইলে, আল্লাহর ভালবাসা পেতে হলে এবং জান্নাত লাভের বাসনা করলে সালামের ব্যাপক প্রচলন ঘটাতে হবে।
প্রথমে সালাম প্রদানকারী গর্ব-অহংকার থেকে যেমন মুক্ত থাকে তেমন বিনয়ীও হতে পারে। বিনয় আল্লাহর গযব হতে রক্ষা করে তাঁর রহমতের অধিকারী বানায়। অহংকার ব্যক্তিকে কলুষিত করে আর বিনয় মানুষের জীবনকে পবিত্র করে।
অহংকার শত্রুতা সৃষ্টি করে আর বিনয় শত্রুকেও পরম বন্ধুতে পরিণত করে। তাই প্রত্যেকের উচিত অহংকার থেকে বাঁচার
জন্য সালামের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া।
সালাম কৃপণতা দূর করে :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘কৃপণতা ও ঈমান কোন বান্দার অন্তরে কখনো একত্রিত হতে পারে না’। মানব সভ্যতার প্রথম
থেকেই দানশীল ব্যক্তিকে মানুষ ভালবাসে, সম্মান করে। অন্যদিকে বখীল লোককে সমাজের লোকেরা ঘৃণা করে,
অশ্রদ্ধা করে। জাবের (রাঃ) বলেন, একদা এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ) -এর খেদমতে হাযির হয়ে বললেন, আমার বাগানে
অমুক ব্যক্তির একটি খেজুর গাছ আছে। ঐ গাছটি আমাকে কষ্ট দেয়। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেই লোকটিকে ডেকে
এনে বললেন, তোমার খেজুর গাছটি আমার নিকট বিক্রি কর। সে বলল, না। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, যদি তুমি তা
বিক্রি না কর তাহলে আমাকে দান কর। সে বলল, না। এবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, বেহেশতের একটি খেজুর গাছের
বিনিময়ে তা বিক্রি কর। সে বলল, না। অতঃপর নবী করীম (ছাঃ) বললেন : ‘আমি তোমার চেয়ে অধিক কৃপণ আর কাউকে দেখিনি। তবে হ্যাঁ, তোমার চেয়েও সেই ব্যক্তি বড় কৃপণ, যে সালাম দিতে কৃপণতা করে’।
আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি :
আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি হতে হলে সালাম দেওয়ার ব্যাপক প্রতিযোগিতা করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
‘সেই ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম যে প্রথমে সালাম প্রদান করে’।
সালাম ব্যক্তিকে সমাজে পরিচিত করে তোলে : সালামের উপকারিতা
মানুষের সাথে পরিচয়ের সর্বোত্তম মাধ্যম হল ‘সালাম’। বিনা কষ্টে, বিনা মূল্যে অত্যন্ত ফলদায়ক অভিবাদনটির নাম اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ (আস-সালা-মু আলাইকুম)। এটি কেবল একটি বাক্য নয়, বরং এক মহা চুম্বক শক্তির নাম। এর মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি
লাভ করা যায়। নবী করীম (ছাঃ)-কে প্রশ্ন করা হ’ল উত্তম ইসলাম কোনটি? জবাবে তিনি বললেন, ‘অন্যকে খাদ্য খাওয়ানো
এবং পরিচিত অপরিচিত সকলকে সালাম দেওয়া’।
সালাম সামাজিক সুসম্পর্ক গড়ার নিয়ামক : সালামের উপকারিতা
সামাজিক শান্তি ও কল্যাণের জন্য প্রয়োজন ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা। আর সালামের মাধ্যমেই ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসা সৃষ্টি হয়, শত্রুতা ও পরশ্রীকাতরতা দূর হবে । আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা ঈমান আনবে । আর তোমরা ঈমানদার হিসাবে গণ্য হবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন কথা বলে দিব না যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে? (আর তাহল) তোমরা পরস্পরের মাঝে সালামের প্রসার করবে।
সালাম সামাজিক জীবনে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা : সালামের উপকারিতা
মা-বাবা, ভাই-বোনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে গড়ে উঠে পরিবার। আর বহু পরিবার, হাট-বাজার, মসজিদ-মাদরাসা, স্কুল-কলেজ, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদি নিয়ে গড়ে উঠে সমাজ। মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ একে অপরের সহযোগিতা
ছাড়া চলতে পারে না। ধনীর যেমন প্রয়োজন হয় গরীবের, গরীবেরও তেমন প্রয়োজন হয় ধনীর। প্রয়োজনের তাকীদে
একে অপরের বাড়ি-ঘরে যেতে হয়। এ প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখে অন্যের বাড়িতে প্রবেশ করার বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি
শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম। তা হল সালাম প্রদানের মাধ্যমে অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করা। অন্যথা বিনা বাক্য ব্যয়ে ফিরে আসবে। এতে করে সকলের সম্মান রক্ষা পাবে, মান-ইযযতের হিফাযত হবে এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ কর না, যতক্ষণ না গৃহবাসীর সম্মতি লাভ করবে
এবং তাদেরকে সালাম দিবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম পদ্ধতি। যাতে তোমরা উপদেশ লাভ করতে পার’ (নূর ২৭)
বিনা অনুমতিতে অপরের বাড়িতে প্রবেশ করার কারণে মানুষের সম্ভ্রমের হানি ঘটে। সন্দেহ সৃষ্টি হয়। বাড়ীওয়ালা কি
অবস্থায় আছে তা বুঝা যায় না। এতে তার ইযযত বিনষ্ট হওয়ার কারণে রুষ্ট হতে পারে। আর এভাবে সমাজে অশান্তি
সৃষ্টি হয়।
সম্পর্ক একবার তৈরি হয়ে গেলে যে আর নষ্ট হবে না, একথা বলা মুশকিল। যদি কখনো কোন কারণে সম্পর্কে ফাটল ধরেও
যায়, তাহ’লে মুমিন তা পূনর্গঠনে তৎপর হয়ে উঠবে, এটাই ঈমানের স্বাভাবিক দাবী। কারণ দু’জন মুসলমানের পক্ষে তিন দিনের বেশী সম্পর্ক বিচ্ছেদ করে রাখা ইসলামে জায়েয নয়। সম্পর্ক রক্ষা ও পুনর্গঠনে তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি প্রথমে সালাম দিবে তাকে উত্তম বলা হয়েছে।
আবু আইয়ুব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তির জন্য হালাল নয় যে, তিন দিনের অধিক সে অপর
কোন মুসলমান ভাইকে ত্যাগ করে। কোথাও পরস্পরে দেখা-সাক্ষাৎ হলে একজন একদিকে আরেকজন অন্যদিকে মুখ
ফিরিয়ে নেয়। আর তাদের দু’জনের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে প্রথমে সালাম দিবে’