সালামের অপব্যবহার ও বিকৃত উচ্চারণ :

সালামের অপব্যবহার ও বিকৃত উচ্চারণ :

আল্লাহ তা‘আলা যে সালাম আদম (আঃ)-কে শিখিয়েছিলেন এবং আদম (আঃ) থেকে যে সালাম এখন পর্যন্ত চলছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত চলবে; আর আমাদেরকে নবী (ছাঃ) যে সালাম প্রতিষ্ঠা করে একে দো‘আ, সম্ভাষণ, সংস্কৃতি হিসাবে চালু
করে দিয়েছেন, সে সালামের অপব্যবহার ও বিকৃত উচ্চারণ আজকের সলিম সমাজে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর কতিপয়
নমুনা নিম্নে পেশ করা হল।

ব্যক্তিগত কাজে সালামের ব্যবহার

১। অফিসের বড় ছাহেব তার পিয়নকে বললেন, শহীদ ছাহেবকে আমার সালাম দাও। অর্থাৎ এ সালামের মানে হল শহীদ
ছাহেব যেন তার সাথে দেখা করে। এখানে সালামকে তারা অফিসিয়াল কোড ওয়ার্ড হিসাবে ব্যবহার করেন।
২। মুদি দোকানদার তার এক কর্মচারীকে দিয়ে মহল্লার এক বাসার গৃহকর্তার কাছে সালাম পাঠায়। মুদি দোকানদার এ
সালাম পাঠায় বাসার কর্তার কাছে পাওনা তাগাদার জন্য। এ সালাম পাওনা তাগাদার সালাম।

ব্যক্তিগত কাজে সালামের ব্যবহার

৩। এক ভদ্রলোক তার পড়শীকে নিজের ছেলে পাঠিয়ে সালাম জানালেন। তার মানে পড়শীর কাছে পূর্বে টাকা ধার
চেয়েছিলেন। ছেলেকে দিয়ে সালাম পাঠিয়ে তা স্মরণ করিয়ে দিলেন। সালাম পেয়েই যেন ছেলের হাতে কিছু টাকা পাঠিয়ে দেন।
৪। দু’জনের মধ্যে কোন এক ব্যাপারে প্রচন্ড বিতর্ক চলছে। বিতর্কের শেষ পর্যায়ে একজন অপরজনকে বললেন, খুব
হয়েছে ভাই, এবার সালাম! সালাম দিয়ে বিতর্ক থেকে কেটে পড়া মানে তিনি আর তর্ক করতে রাযী নন।

ব্যক্তিগত কাজে সালামের ব্যবহার

৫। ঈদের দিন শিশুরা স্বজনদের বাসায় বাসায় গিয়ে, মুরুববীদের সালাম দেয়সালামীর জন্য। প্রকৃত পক্ষে তারা এ দিনে
সালাম দিয়ে সালামী বা টাকা কুড়াতে আসে।মূল উদ্দেশ্য সালাম দিতে আসা নয়। একে বিনোদনী আদুরে ভিক্ষা বলা যায়।

ব্যক্তিগত কাজে সালামের ব্যবহার

৬। অফিসে এসে বড় ছাহেবকে সালাম দেওয়ার অভ্যাস আছে অনেকের। কোন না কোন অসীলায় তারা দেখা করবেনই
এবং একটা সালাম দেবেনই। এখানে বড় ছাহেবকে সালাম দেওয়া মানে বড় ছাহেবের নযরে আসা, আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা
প্রদর্শন করা।
আসলে সালামকে এসব উদ্দেশ্য হাছিলের জন্য ইসলামী সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বরং এ সালামকে শুধুমাত্র
আমাদের পারস্পরিক দো‘আ ও আশির্বাদ হিসাবে দান করা হয়েছে। সুতরাং সালামকে আসল উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করে
অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা ইসলামী সংস্কৃতিকে ব্যঙ্গ করার শামিল।
শুধু সালামের অপব্যবহারই নয়, আজকে আমাদের মুসলিম সমাজে সালামের বিকৃত উচ্চারণ লক্ষ্য করা যায়।
কলকাতার ‘সংসদ বাঙ্গালা অভিধান সালামকে বিকৃত করে ফেলেছে। তারা সালামের শুদ্ধ বানান লিখেছে ‘সেলাম’।
সালাম-এর ব্যাখ্যায় লিখেছে ‘সালাম’ হচ্ছে ‘সেলাম-এর রূপভেদ’। তাদের মতে ‘আস-সালা-মু আলাইকুম’-এর শুদ্ধ
বানান হচ্ছে ‘সেলাম আলায়কুম’ যার অর্থ (লেখা হয়েছে) ‘নমস্কার’। আজকের যুবকরা বিভিন্ন স্টাইলে সালাম প্রদান
করে থাকে। যেমন- সালামালাইকুম, সেলামালিকুম, শ্লামালিকুম, আস্সালামালিকুম, আস্লামালিকুম , সালামালিকুম
ইত্যাদি ইত্যাদি ।
সালামের এই বিকৃত রূপ এখন প্রকৃত হতে যাচ্ছে। আগামীতে এই ‘সালাম’ আরও কত বিকৃত হবে তা আল্লাহ মালূম।
এজন্য আমরাই দায়ী। বিকৃত আর অপব্যবহার যে আমরাই করছি তাতে কোন সন্দেহ নেই। আসুন! আমরা সালামের অপব্যবহার ও বিকৃত উচ্চারণ থেকে বিরত হই।
পরিশেষে সকলের নিকট এই নিবেদন যে, আসুন! নিজেকে অহংকার মুক্ত করতে, আল্লাহ তা‘আলার নিকটবর্তী হতে,
জনপ্রিয়, জননন্দিত ও অধিক পরিচিত হতে, সালামের অপব্যবহার না করে বরং সঠিক নিয়মে ইসলামের উত্তম এ কাজটি করতে, নিজেকে একজন আদর্শবান, সুন্দর ও অনুপম মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে, সালাম দেওয়াকে নিজের অভ্যাসে
পরিণত করি। ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, বিজ্ঞ-মূর্খ, কুলি-মজুর, সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষকে সালাম দেওয়ার মত একটি
মন তৈরী করি এবং নিজেকে সকলের প্রিয় মানুষে পরিণত করি।
আমাদের সমাজকে একটি আদর্শ, সুন্দর নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত করার জন্য, ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসার সৌরভ
দিয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত একটি জনপদ তৈরি করতে আসুন! সালামের ব্যাপক প্রচলন করি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক
দিন – আমীন!