সুন্নাহর বাণী, ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধান, সমসাময়িক ইস্যুতে ইসলাম এর নির্দেশনা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি।
টেলিভিশন মূলত পারিবারিক বিনোদনমাধ্যম। কতটুকু বাস্তবসম্মত জানি না,
তবে দাবি করা হয় টেলিভিশনে পারিবারের সবার সঙ্গে একত্রে দেখার মতো
অনুষ্ঠানপ্রচার করা হয়। বাস্তব হোক বা অবাস্তব, এটা তো সত্য যে টেলিভিশনটা এখনোঅধিকাংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির ঘরের শোভা বর্ধন করে। কাজেই একে
হেলাফেলা করারতেমন সুযোগ নেই। যাদের সুযোগ আছে, তারা এই মাধ্যমেও
দাওয়াতি কাজ করেত পারেন। ইসলামের পরিবারব্যবস্থা, সন্তান লালন-পলনের
ইসলামী পদ্ধতি, আদব-আখলাক, পিতা-মাতার হক, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক হক, প্রতিবেশীর হক, ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন—এসব আলোচনা নিয়মিত করলে
আমার ধারণা অনেকমানুষ ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবন-ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ
করবে।এখনো অনেক মানুষ মনে করে, ইসলাম শুধু ব্যক্তিগত পরিসরে সালাত-
সিয়ামের মতো কিছু আনুষ্ঠানিকতার নাম। পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে
ইসলাম এর নির্দেশনা কী, এসব আলোচনা করলে অনেকেই ইসলামের সঠিক
রূপরেখা সম্পর্কে জানতে পারবে।
রেডিও: বালাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে গেলে রেডিও বিলুপ্তির পথে। তবে বিশ্বের
বিভিন্ন দেশে এখনো এফএম রেডিও যথেষ্ট দাপটের সঙ্গে সচল আছে। সেসব দেশের
মানুষ গাড়িতে বসেই কানে ইয়ারফোন গুজে রেডিও শুনতে থাকে। এসব অঞ্চলে যারা দাওয়াতি কাজ করেন, তারা রেডিওকেও ইসলাম প্রচারের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণকরতে পারেন।
প্রিন্ট মিডিয়া: ইন্টারনেটের যুগে প্রিন্ট মিডিয়ার কদর অনেকখানি কমলেও এখনো
অনেক মানুষ সকালের নাশতার টেবিলে বসে পত্রিকায় চোখ বুলিয়ে নিতে পছন্দ করে। পত্রপত্রিকার প্রভাব অনেকাংশ খর্ব হওয়া সত্ত্বেও এই মাধ্যমটার ব্যবহার এখনো কম নয়। বিপুল সংখ্যক মানুষ পত্রিকার প্রিন্ট এবং ওয়েব ভার্সনে চোখ রাখে সমসাময়িক কলাম পড়ার জন্য। যেসব দা‘য়ীর লেখার হাত ভালো, অন্তত যারা চলনসই লেখালেখি করতে পারেন, তারা এই ব্যাপারটিকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করতে পারেন। প্রিন্ট মিডিয়ায় দাওয়াতি কাজ করার মাধ্যমে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারেন।
ওয়েব পত্রিকা: এটি সমকালীন বিশ্বে দাওয়াহর অন্যতম মাধ্যম হতে পারে। ধীরে ধীরে
এটি প্রিন্ট মিডিয়ার স্থান দখল করে নিচ্ছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ এখন টাকা খরচ করে পত্রিকা কেনার চেয়ে মোবাইলের মাধ্যমে ওয়েব পত্রিকায় ঢু মারা বেশি পছন্দ করে। কাজেই দাওয়াতি কাজের জন্য ওয়েব পত্রিকা তৈরি করা এবং আগে থেকে তৈরিকৃত
ওয়েব পত্রিকায় লেখালেখি করে বিপুল সংখ্যক মানুষের দীনি বিষয়ে অনুসন্ধিৎসার
ক্ষুধা নিবরণে ভূমিকা রাখা যেতে পারে। দুঃখজনকভাবে ইসলামী বিষয়কে উপজীব্য
করে বানানো ওয়েব পত্রিকা একেবারেই অপ্রতুল। এ ব্যাপারে পাদর্শীদের এগিয়ে আসা উচিত।
মেইল ও টেক্সট মেসেজ: প্রিয়নবী (সা.) চিঠিপত্রের মাধ্যমেও দাওয়াতি কাজ করেছেন।
সেই হিসেবে চিঠিপত্রের মাধ্যমে দাওয়াতি কাজ করাও সুন্নাহ। মেইল ও টেক্সট মেসেজ চিঠিপত্রেরই আধুনিক সংস্করণ। পরিচিত বা অপরিচিত একজন একটা গর্হিত কাজ
করছে, তাকে হিকমাহর সঙ্গে বারণ করা দা‘য়ীর দায়িত্ব, এটি নাহী আনিল মুনকারের অন্তর্ভুক্ত। নানা কারণে সামনাসামনি সেটি আমরা হয়ত বলতে পারি না। হয়ত উদ্দিষ্ট
ব্যক্তি আমার কাছ থেকে অনেক দূরে। সেক্ষেত্রে আমি যদি তাকে ইমেইল বা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে বিষয়টা সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বিনীতভাবে সতর্ক
করি, তাহলে এর মাধ্যমে দাওয়াহ পৌঁছানোর দায়িত্ব পালিত হবে ইন-শা-আল্লাহ।
এর মাধ্যমে চিঠিপত্রের মাধ্যমে দাওয়াহ প্রদানের সুন্নাহও আদায় হয়ে যাবে।
এখানে আমরা সমকালীন বিশ্বে ইসলাম প্রচারের কয়েকটা মাধ্যম সম্পর্কে আলোচনা করলাম। এগুলো উদাহরণ মাত্র। এছাড়া যত মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করা সম্ভব ও
উপযোগী, সেই সব মাধ্যমে ব্যবহার করে যথাযথ পদ্ধতিতে ইসলাম প্রচার করা
যেতে পারে। তবে প্রত্যেক দা‘য়ী সবগুলো মাধ্যমে দাওয়াহর কাজ করতে সক্ষম নন।
যিনি যে পদ্ধতি ও মাধ্যমে সক্ষম, সচ্ছন্দ ও পারদর্শী— তিনি সে পদ্ধতি ও মাধ্যমে
কাজ করবেন।
উপরে দীন প্রচারের কৌশল ও প্রচারমাধ্যম সম্পর্কে যৎসামান্য আলোকপাত করেছি।
তবে প্রচারমাধ্যম যা-ই হোক, মৌলিকভাবে দাওয়াতি কাজের কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক
উসূল ও মূলনীতি জানতে হবে এবং তদনুযায়ী আমল করতে হবে। দা‘য়ীর মধ্যে যেসব গুণাবলি থাকা দরকার, তা নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে। তবেই দাওয়াহ ফলপ্রসূ হবে এবং উম্মাহর প্রভূত কল্যাণ সাধিত হবে।