সমকামিতা বিকৃত রূচির নোংরা ব্যক্তিদের কাজ। এটি কোন প্রকৃত মানুষের কাজ নয়। পশুত্বের নিদর্শন এহেন জঘন্য
কাজ। কেননা যৌন চাহিদা আছে গরু-ছাগলের, আছে কুকুর-বিড়ালের, জীব-জন্ত এবং পশু-পাখিরও। তাই বলে আপনি
কখনো দেখেছেন এক ষাড় অন্য ষাড়ের সাথে যৌনক্ষুধা নিবারণ করতে? কুকুর-বিড়ালরাও কখনো সমান লিঙ্গের সাথে
সেক্স শেয়ার করেনা। পৃথিবীতে যত জীব-জন্তু আছে তারা সবাই ‘কামোত্তেজনা’ উঠলে বিপরীত লিঙ্গের দারস্থ হয়। মানুষ
অন্য প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ হওয়ার একটি মৌলিক কারণের মাঝে রয়েছে, মানুষ ভদ্রতা ও শালীনতা জানে। অন্য কোন প্রাণী
ভদ্রতা ও শালীনতা কি জিনিস বুঝে না। মানুষের লজ্জা রয়েছে। অন্য কোন প্রাণীর লজ্জা নামক এই ভূষণটি নেই। তাহলে শ্রেষ্টজীব মানুষ হয়ে যৌন চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে জানোয়ার থেকেও অধম হই কী করে? তাদেরকেই কোরআন বলছে
‘উলা- ইকা কাল আনআম বাল হুম আদ্বাল’। সমান সমান লিঙ্গধারীরা পরষ্পর একে-অন্যের সাথে যৌন চাহিদা মেটানোর
নামই হচ্ছে homosexuality বা সমাকামিতা। সমকামি মনোবৃত্তি ব্যক্তিকে মনুষত্বের ভদ্র আর শালীন ও লজ্জাশীলতার
সেই শ্রেষ্টত্বের মানদন্ড থেকে হটিয়ে পশুত্বের স্তরে নামিয়ে দেয়।
সমকামিতার ক্ষতি ও ভয়াবহতা বুঝতে অনেক বেশি পড়াশোনা ও জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। একটু খেয়াল করলেই বুঝা যায়,
এটা সম্পূর্ণ মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতি বিরোধী এক অপরাধ। এর ভয়াবহতা ও নিকৃষ্টতা বুঝতে শরয়ী দৃষ্টিকোণ, শরিয়া
আইন- এসবের প্রয়োজন নেই, স্বাভাবিক দৃষ্টিতে চিন্তা ভাবনা করলেই বোঝে আসে এটা কতটা ঘৃণ্য কাজ । পৃথিবীর সব
প্রাণীর মাঝেই পুরুষ-নারী রয়েছে। সবাই তাদের যৌন চাহিদা পূর্ণ করে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ থেকে। সমলিঙ্গের
সঙ্গে বিকৃত যৌনচার কোন প্রাণীর মাঝেই নেই। যারা সমকামিতার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন তারা এমন একটি
নিকৃষ্টতম কাজের সঙ্গে নিজেদের জড়াতে চান যেটা পশুদের মাঝেও নেই। পৃথিবীতে এমন অনেক অবৈধ ও হারাম
কাজ আছে যেটা জান্নাত বাসীদের জন্য জায়েজ হিসেবে গণ্য হবে; কিন্তু স্বভাব ও প্রকৃতি বিরোধী সমকামিতার মতো
অপরাধ জান্নাতেও হারাম হিসেবেই গণ্য করা হবে।
সমকামিতা ও লূত (আ.) এর সম্প্রদায়:
লুত (আ) এর কওমকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন যেসব কারণে এর মধ্যে সমকামিতা ছিল একটি। আল কুরানের
সাত জায়গায় লুত (আঃ) এর কওমের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং আমি লূতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে স্বীয়
সম্প্রদায়কে বললঃ তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি ? তোমরা তো
কামবশতঃ পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছ। (আরাফ :৮১-৮২)
আর তাঁর কওমের লোকেরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে তার (গৃহ) পানে ছুটে আসতে লাগল। পূর্ব থেকেই তারা কু-কর্মে তৎপর ছিল।
লূত (আঃ) বললেন-হে আমার কওম, এ আমার কন্যারা রয়েছে, এরা তোমাদের জন্য অধিক পবিত্রতমা। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং অতিথিদের ব্যাপারে আমাকে লজ্জিত করো না, তোমাদের মধ্যে কি কোন ভাল মানুষ নেই।
তারা বলল তুমি তো জানই, তোমার কন্যাদের নিয়ে আমাদের কোন গরজ নেই। আর আমরা কি চাই, তাও তুমি অবশ্যই
জান। লূত (আঃ) বললেন-হায়, তোমাদের বিরুদ্ধে যদি আমার শক্তি থাকত অথবা আমি কোন সূদৃঢ় আশ্রয় গ্রহণ করতে
সক্ষম হতাম। মেহমান ফেরেশতাগন বলল-হে লূত (আঃ) আমরা তোমার পালনকর্তার পক্ষ হতে প্রেরিত ফেরেশতা।
এরা কখনো তোমার দিকে পৌঁছাতে পারবে না। ব্যস তুমি কিছুটা রাত থাকতে থাকতে নিজের লোকজন নিয়ে বাইরে চলে
যাও। আর তোমাদের কেউ যেন পিছনে ফিরে না তাকায়। কিন্তু তোমার স্ত্রী নিশ্চয় তার উপরও তা আপতিত হবে, যা ওদের
উপর আপতিত হবে। ভোর বেলাই তাদের প্রতিশ্রুতির সময়, ভোর কি খুব নিকটে নয়? অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল, তখন আমি উক্ত জনপদকে উপরকে নীচে করে দিলাম এবং তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর পাথর বর্ষণ করলাম।
(সূরা হুদ: ৭৮-৮২)
‘সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরূষদের সাথে কুকর্ম কর? এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য
সঙ্গিনী হিসেবে যাদের সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’ (সূরা শুয়ারা:
১৬৫-১৬৬)
কওমে লূতকে আল্লাহ সমকামিতা-র অপরাধে ধ্বংস করেছিলেন:
‘স্মরণ কর লূতের কথা, তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কেন অশ্লীল কাজ করছ? অথচ এর পরিণতির কথা তোমরা অবগত আছ! তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক বর্বর সম্প্রদায়। উত্তরে
তাঁর কওম শুধু এ কথাটিই বললো, লূত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা
শুধু পাকপবিত্র সাজতে চায়। অতঃপর তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে উদ্ধার করলাম তাঁর স্ত্রী ছাড়া। কেননা, তার জন্যে ধ্বংসপ্রাপ্তদের ভাগ্যই নির্ধারিত করেছিলাম। (সূরা নামল: ৫৪-৫৭) ‘আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহীমের
কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, আমরা লুতের জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব। নিশ্চয় এর অধিবাসীরা
অপরাধী।’ (সূরা আনকাবুত: ৩১)
যে সমকামিতার অপরাধে একটি জাতিকে ধ্বংসের ভয়াল পরিণতি বরণ করতে হয়েছে সেই ঘৃণ্য কাজটিকেই ‘আধুনিকতা’
এবং ‘অধিকারের’ কথা বলে আবার ছড়িয়ে দিতে কিছু মস্তিষ্কবিকৃত মানুষের চেষ্টা চলছে অব্যাহতভাবে। দৈহিকভাবে মানুষ
রেখে চেতনায় পশু বানিয়ে দেয়ার প্রতিযোগিতা। অভিশপ্ত সম্প্রদায় ‘কওমে লুত’ ধ্বংস হয়েছিল সমকামের অপরাধে।
হজরত লুত (আ.)’র জাতি ছিল সমকামী। হজরত লুত তাদেরকে এহেন কাজ থেকে বিরত থাকার এবং হালাল পন্থায়
নারীদের সঙ্গে তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করার অনুরোধ করেছেন বারবার। কিন্তু কে শুনে লুতের কথা! হজরত লুত ব্যর্থ
হলেন। এমতাবস্থায় তার ঘরে চারজন সুদর্শন যুবক মেহমান আসলো। মেহমানের আগমণের খবর পেয়ে সমকামে
অভ্যস্ত লোকেরা মেহমানদের সঙ্গেই কুকর্ম করতে চাইল। হজরত লুত ভীত হলে যুবক চারজন তাঁকে বললেন, ‘হে লুত,
আমরা ফেরেশতা’।
সমকামিতা সম্পর্কে হাদীস শরীফ:
ইসলামে সমকামিতা হারাম। মানব সভ্যতার উন্নয়নে সমকামিতা এক বড় অন্তরায়। পৃথিবীতে মানুষের ফ্যামিলি বাঁচিয়ে
রেখেছে প্রজনন ধারা। সমকামিতা এমনই এক স্থবির সিস্টেম যেখানে বংশবিস্তারের কোন সুযোগ নাই। স্বাভাবিক
ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য অন্যায়।
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, ‘যাদেরকে তোমরা লুত আঃ এর কওমের মত কুকর্মে
লিপ্ত দেখবে তাদের উভয়কেই হত্যা করে ফেল। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৭২৭, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং
২৫৬১, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৪৬২, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৪৫৬, সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং-৩২৩৪}
ইসলাম ধর্ম মতে যে মানুষ লুত আ. এর কওমদের মত পাপ করে সে মুলত স্রষ্টার সৃষ্টির পথে বাধা সৃষ্টি করে। এক কথায় সে
স্রষ্টার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এটাই হল নৈতিক ও সার কথা।
শুধু ইসলাম ধর্মগ্রন্থ কুরআনই নয়, পবিত্র বাইবেলেও সমকামিতা এক রকমের পাপ (আদি পুস্তক ১৯:১-১৩; লেবীয় ১৮:২২; রোমীয় ১:২৬-২৭; ১ করিন্থীয় ৬:৯) রোমীয় ১:২৬-২৭ পদ সুনির্দিষ্টভাবে শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়া এবং তাঁকে অস্বীকার করার ফলস্বরূপ সমকামিতার শাস্তি দেওয়া হয়েছে। লোকেরা যখন অবিশ্বাসের কারণে পাপ করতেই থাকে, তখন
ঈশ্বর “লজ্জাপূর্ণ কামনার হাতে” তাদের ছেড়ে দেন যেন তারা আরও জঘন্য পাপে ডুবে যায় এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে
থাকার ফলে নিস্ফল ও নৈরাশ্যের জীবন অনুভব করতে পারে। ১ করিন্থীয় ৬:৯ পদে বলা হয়েছে যে, যারা সমকামিতায়
“দোষী”, তারা ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকার পাবে না। ঈশ্বর সমকামিতার মনোভাব দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করেন নাই। পবিত্র
বাইবেল বলেছে, লোকেরা পাপের কারণে সমকামী হয় (রোমীয় ১:২৪-২৭) এবং এটা তাদের নিজেদের পাপপূর্ণ ইচ্ছার
পরিণতি। যাইহোক, বাইবেল কিন্তু সমকামিতাকে অন্যান্য পাপের চেয়ে “বড়” বলে বর্ণনা করে নাই। করিন্থীয় ৬:৯-১০
পদে যে পাপগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সমকামিতা হচ্ছে সেগুলোর একটি, যা কিনা ঈশ্বরের রাজ্য থেকে
একজনকে দূরে রাখে।