সবর আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের মধ্যে অন্যতম। দুনিয়াতেই যে নেয়ামত লাভ হয়।
সবর বা ধৈর্যধারণকারীদের জন্য আল্লাহ তাআলা অসংখ্য নেয়ামতের ঘোষণা
করেছেন। আবার কারো অন্যায়ের বিচার তথা প্রতিশোধ নেয়ার বিধান দিয়েছে
ইসলাম। কেউ কারো প্রতি কোনো অন্যায় করলে তার প্রতিশোধ গ্রহণ করা বৈধ।
তবে প্রতিশোধ নেয়ার মানদণ্ড নির্ধারণ করা আছে। কেউ যদি প্রতিশোধ গ্রহণ না
করে সবর অবলম্বন করে তবে তা উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আর যদি
কাউকে তোমরা শাস্তি দাও, তবে ততখনি শাস্তি দেবে যতখানি অন্যায় তোমাদের
প্রতি করা হয়েছে। আর যদি সবর করো তাহলে তা তার জন্যেই উত্তম।’ (সুরা নহল :
আয়াত ১২৬) এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা প্রতিশোধের কথা যেমন বলেছেন,
তেমনি সবর তথা ধৈর্যধারণ করার কথাও উল্লেখ করেছেন। ইসলামে উভয়টি জায়েয
এবং সবর অবলম্বন প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে উত্তম। প্রথমত প্রতিশোধ গ্রহণ :
আল্লাহর পথে দাওয়াত দানকারীদেরকে আইনগত অধিকার দেয়া হয়েছে যে,
যারা নির্যাতন চালায়, তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করা বৈধ, কিন্তু শর্ত হলো- প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্যাতনের সীমা অতিক্রম করা যাবে না।
যতটুকু জুলুম প্রতিপক্ষের তরফ থেকে করা হয়, প্রতিশোধ ততটুকুই গ্রহণ করতে
হবে; বেশি হতে পারবে না। হাদিসে এসেছে- হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত,
‘এক ইয়াহুদি এক মেয়েকে দুই পাথরের মাঝে রেখে হত্যা করে, মৃত্যুর আগে সে মেয়ে
এক ইয়াহুদির প্রতি ইঙ্গিত করে। সেই ইয়াহুদিকে নিয়ে আসা হলে সে তা (হত্যার কথা) স্বীকার করে। ফলে রাসুল সা. সে ইয়াহুদিকে দুই পাথরের মাঝখানে বেঁধে হত্যা করার আদেশ করেন।’ (বুখারি, মুসলিম)
প্রতিশোধ নয় সবরই উত্তম:
দ্বিতীয়ত সবরের পরামর্শ : আয়াতের শেষাংশে পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে, যদিও প্রতিশোধ গ্রহণ করার অধিকার আছে, কিন্তু সবর অবলম্বন করা উত্তম। ওহুদের যুদ্ধে সত্তর জন সাহাবির শাহাদতবরণ এবং হজরত হামজা রা. কে হত্যার পর তার লাশের নাক-কান কর্তনের ঘটনা দেখে রাসুলুল্লাহ সা. দারুণভাবে মর্মাহত হলেন।সাহাবায়ে কেরাম (আনসারগণ) বললেন, ‘আমরা যদি তাদের ওপর জয়লাভ করি, তবে তাদেরকে দেখিয়ে দেব। তারপর মক্কা বিজয়ের দিন আসল। তখন আল্লাহ আয়াত নাজিল করলেন- ‘যদি শাস্তি দিতে চাও তবে ততটুকুই দেবে, যতটুকু তোমরা শাস্তি ভোগ করেছ। আর যদি
তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, তবে তা ধৈর্যশীলদের জন্য অনেক উত্তম (কল্যাণকর)।’ তখন
এক লোক বলল, ‘আজকের পরে কুরাইশদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। তখন রাসুল সা. বললেন, ‘৪ জন ব্যতিত আর সবাইকে ছেড়ে দাও।’ (মুসতাদরেকে হাকেম, তিরমিজি, নাসাঈ) ইসলামে প্রতিশোধ গ্রহণ জায়েয তবে সবরে রয়েছে সর্বোত্তম কল্যাণ। তবে প্রতিশোধের ক্ষেত্রে অবশ্যই জুলুমের মাত্রাকে ছাড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এটাই ইসলামের চূড়ান্ত ঘোষণা।এ আয়াত নাজিল হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবর করেছিলেন। সম্ভবত এ কারণেই কোনো কোনো রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে যে, আলোচ্য আয়াতগুলো মক্কা বিজয়ের সময় নাজিল হয়েছিল। সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত জুলুমের সমপরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ বা শাস্তি প্রদানের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা জরুরি। কোনোভাবেই যেন প্রতিশোধ জুলুমের মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়। আর মাজলুম ব্যক্তির জন্য প্রতিশোধ গ্রহণের চেয়ে সবরে রয়েছে সর্বোত্তম কল্যাণ।
সবর করার উপকারিতা:
আল্লাহ তাআলা মানুষকে বিভিন্ন উপকার এবং ক্ষতি মধ্যে ফেলে পরীক্ষা করে থাকেন। কুরআন ও হাদিসে উপকারি কাজের নির্দেশের পাশাপাশি ক্ষতিমূলক কাজ থেকে বেঁচে থাকতে বিধি-নিষেধ রয়েছে। কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশ মোতাবেক প্রতিটি কাজে সবর অবলম্বন জরুরি। কারণ সবরের রয়েছে অনেক উপকারিতা। সংক্ষেপে তা তুলে ধরা
হলো-সবরের উপকারিতা
১. কোনো কাজে সবর বা ধৈর্য ধারণ করলে কাজের শেষে খুশী ও আনন্দ লাভ হয়।
২. সবরকারী বা ধৈর্যধারণকারী ব্যক্তি প্রত্যেকের নিকট সম্মান ও প্রশংসার ব্যক্তিতে
পরিণত হয়। সবাই ধৈর্যধারণকারী ব্যক্তির প্রশংসা করে।
৩. সবরকারী ব্যক্তি তাঁর ধৈর্যধারণর কারণে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে দুনিয়ার
কল্যাণ লাভ করেন এবং পরকালের ধৈর্যের উত্তম বিনিময় লাভ করবেন। পরিশেষে আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে প্রত্যেক মানুষের উচিত সবর অবলম্বন করা। এ কারণে
ইসলামি চিন্তাবিদগণ বলেছেন, ‘সবর বা ধৈর্যের প্রাথমিক অবস্থা অত্যন্ত তিক্ত হলেও
তাঁর ফলাফল হয় অনেক সুখ ও শান্তিময়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার
সব কাজে ধৈর্যের পরিচয় দেয়ার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহর পরীক্ষায় পাস করার উপায় সবর:
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে পরীক্ষা করেন সবর তথা ধৈর্যের মাধ্যমে। যারা ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেন, আল্লাহর দরবারে পরীক্ষা দেন তারাই কৃতকার্য হন। আল্লাহ তাআলা তাদের আমরত্ব ঘোষণা করেছেন কুরআনুল কারিমে। আল্লাহর দরবারের
পরীক্ষার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সবর। জাগো নিউজে সবরের আদর্শ গ্রহণ করে
আল্লাহর দরবারে পরীক্ষার দেয়ার ধরণ তুলে ধরা হলো- আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ এবং
অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও
ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবর তথা ধৈর্যধারনকারীদের। অর্থাৎ
যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং
আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। আয়াতের শিক্ষা হযতর আবু মুসা আশআরি
রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. এরশাদ করেছে, যদি কোনো লোকের সন্তানের মৃত্যু হয়
তখন আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাদের জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা কি আমার বান্দার শিশুর
রুহ কবজ করেছ? ফিরিশতাগণ আরজ করেন, জী হ্যাঁ, অতপর আল্লাহ জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা কি আমার বান্দার শান্তি ছিনিয়ে এনেছ? তারা উত্তরে বলেন, হ্যাঁ। তখন আল্লাহ জানতে চান, এ সময় আমার বান্দা কি বলেছে, ফিরিশতাগণ বলেন সে ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন।’ পড়েছে। এবং আপনার হামদ ও প্রশংসা করেছে। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ তৈরি কর আর এর নাম বাইতুল হামদ রাখ। (তিরমিজি, তাফসিরে রুহুল মাআনী)
মুসলমানদের বিপদে ধৈর্যধারন আল্লাহর হিকমত-
১. বিপদ আসার পূর্বে প্রস্তুতি গ্রহণ, বিপদে ধৈর্য ধারণ সহজ হয়।
২. বিপদের সংবাদে মুমিনের ভয়ের উদ্রেক, অধিকতর ছাওয়াব লাভের কারণ।
৩. চরম বিপদের মুহূর্তে দ্বীনের ওপর সাহাবা কেরাম ও রাসূল সা. অচল ও অবিচল থাকাই প্রমাণ করে যে, ইসলাম সত্য ধর্ম।
৪. বিপদ আসার পূর্বে সতর্কবার্তা, শুধু বিস্ময়করই নয়, বরং অলৌকিকও বটে।
৫. ইসলামের প্রাথমিক যুগে অর্থ-সম্পদের লোভে মুনাফেকরা মুসলমানদের সঙ্গে
মিশে গিয়েছিল। ধন-সম্পদের ক্ষতির সতর্কবাণী উচ্চারণের ফলে সুবিধাবাদীরা বিদায়
গ্রহণ করেছিল। যা ইসলামের জন্য বিরাট উপকার হয়েছে।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে কুরআনের আয়াত ও হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।