শেখ হাসিনার নৌকা বনাম নুহ নবীর নৌকা

গত ১৪ ডিসেম্বর ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বুদ্ধিজীবীদের সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ
হাসিনা রীতিমত নির্বাচনী জনসভা করেছেন তাতে কোন আপত্তি নেই। আপত্তি হলো তিনি বলেছেন, এবার ২৯ ডিসেম্বর
২০০৮ ইং আরো একটি বিজয় অর্জন করতে হবে। নৌকায় ভোট দিন নৌকা আমাদের দেশের প্রতীক, এটা বঙ্গবুর নৌকা,
নূহ নবীর নৌকা ইত্যাদি। শেখ হাসিনার এমন সব বক্তব্য শুনে আমার এক বন্ধুর একটি গল্প মনে পড়ে। সে বলে আমার গ্রামের
বাড়ি শেখ হাসিনার বাড়ির দিকে। সবাই জানে ওইদিকে যেতে হলে পদ্মানদী পার হয়ে যেতে হয়। একদিন লঞ্চে পদ্মা
পাড়ি দেয়ার সময় পদ্মার মাঝে যখন বৈশাখী ঝড় শুরু হলো তখন একজন যাত্রী আল্লাহর কাছে মানত করলো যদি এ
বিপদ থেকে রক্ষা পাই তা হলে একটি গরু সাদকা করবো। যখন পদ্মা পার হলো এবং বিপদ মুক্ত হলো তখন তার স্ত্রী
বললো এবার গরু সাদকা করে দাও, তখন ওই ব্যক্তি উত্তর দিল আরে রাখো সাদকা, ‘আল্লাহ আমাকে ভয় দেখাইছে আর
আমি আল্লাহকে লোভ দেখাইছি’। আমাদের দেশের আওয়ামী লীগ নেত্রী মাঝে মাঝে আল্লাহকে যেন লোভ দেখায়।

 

৯৬ সালে নৌকা নিয়ে এসেছিলেন হাতে তছবিহ আর মাথায় পট্টি পরে:

৯৬ সালের নির্বাচনে মাথায় পট্টি আর হাতে তছবিহ ছিল এর একটি প্রমাণ। জাতির নিকট অতীতের অপকর্মের জন্য
ক্ষমা চেয়ে ভোট ভিক্ষা চায় আর ক্ষমতায় গিয়ে মসজিদ মাদরাসার বিপক্ষে তার অবস্খান, আলেমদের রক্ত দিয়ে মসজিদ
লাল করা ছিল এর জলন্ত উদাহরণ। ২০০৬-এর ২৮ অক্টোবর মানুষকে সাপের মতো পিটিয়ে হত্যার পরেও কোন্ মুখ
দিয়ে আবার বলে আমরা ক্ষমতায় গেলে ইসলামের বিরুদ্ধে কোন আইন পাস করবো না! অথচ ইসলামের বিপক্ষে তাদের অবস্খান তা বুঝতে দেশবাসীর এতটুকু অসুবিধা হয়নি। একদিকে ‘৭২-এর সংবিধান পূনর্জাগরণ অন্যদিকে ইসলাম-এর
পক্ষে কথা বলা। অথচ ‘৭২-এর সংবিধান কায়েম হলে দেশে ইসলামভিত্তিক দল করা সম্ভব হবে না। তবে কি ইসলাম অর্থ
মিলাদ মাহফিল, বিয়ে তালাক আর মাজার জিয়ারত করা? ছিমটম দেখে মনে হয় তাদের কথাবার্তার যে অবস্খা ওই পদ্মা
পাড়ি দেয়া যাত্রীর মতো বলে কিনা আমরা জাতিকে লোভ দেখাইছি। মজার বিষয় হলো মানুষ আজ অনেক সচেতন মিথ্যা অপপ্রচারে আর মানুষ প্রভাবিত হয় না। এদের অবস্খা ঐ ভণ্ড কমলা বিক্রেতার মতো। সে মানুষকে এক হালি কমলায়
তিনটি করে গুণে দিচ্ছিল। ক্রেতা বললো, তিনটায় হালি গুনছেন কেন? বিক্রেতা বললো, মাথা ঠিক নেই। তখন ক্রেতা
বললো-তাহলে পাঁচটা করে গুণছেন না কেন? বিক্রেতা বললো-এতোটা খারাপ হয়নি। এবার মিডিয়াগুলোর অবস্খা
অনেকটা এমনই মনে হচ্ছে। তবে তাদের খেয়াল রাখতে হবে এবার জনগণ ঐ কমলা ক্রেতার মতোই সচেতন।
মাথায় পট্টি, হাতে তসবিহ আর নূহ নবীর নৌকা বলে পার পাওয়া এতোটা সহজ হবে না। একটি কথা মনে করিয়ে দিই-নূহ
নবীর নৌকা তৈরি করা হয়েছিল রাষ্ট্র থেকে আল্লাহদ্রোহীদের উচ্ছেদ করার জন্য। বলা হয়েছিল যারা আল্লাহ বিশ্বাসী
আর নবী নূহ এর অনুসারী তারা যেন মহাপ্রলয়ংকরী বন্যার সময় নূহ এর নৌকায় আশ্রয় নেয়। অর্থাৎ নূহ নবীর নৌকা
ছিল ইসলামের পক্ষে, ইসলাম অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনার নৌকা কি ইসলামের পক্ষে নাকি ইসলামের
বিপক্ষে- এ প্রশ্নের জবাব দেবে কে?

 

আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী নূহ নবীর নৌকা বলার প্রতিবাদে বলেন,

নূহ (আ.)এর নৌকায় একটি মানুষও বেঈমান, মূর্তি পূজারী ছিল না, সবগুলো মানুষ পাক্কা ইমানদার ছিল।
হ্যা নূহ (আ.) এর নৌকায় মানুষ ছাড়াও আরও অন্যান্য জীবজন্ত ছিল যেমন কুত্তা, গাধা, বলদ, শেয়াল, ছাগল, ইত্যাদি। তোমাদের নৌকা যদি নূহ (আ.) এর নৌকা হয়ে থাকে, তাহলে প্রথম কথা হল সব মূর্তি পূজারী মুক্ত মানুষকে চড়াতে
হবে নৌকায় , দ্বিতীয় কথা, এটা যদি নূহ (আ.) এর নৌকা হয়ে থাকে, তাহলে এই নৌকায় যারা চড়ে বসেছ,
তাদের মধ্যে কে গাধা, শেয়াল, কুকুর, ছাগল, আমাদের পরিচয় করিয়ে দাও”।
অতএব আওয়ামী লীগের নৌকা কিভাবে নূহ নবীর নৌকার সাথে তুলনা করা যায়? মানুষ বিপদে পড়লে তখন বিভিন্ন
কথাই বলে। আবার গরু হারালে নাকি মানুষের হুঁশ থাকে না। কাকে কি বলে সে হুঁশ জ্ঞানও হারিয়ে ফেলে। প্রিয় পাঠক
শেখ হাসিনা নিজের মুখে যখন বললেন, নৌকা হচ্ছে নূহ নবীর কিস্তি। তিনি শাহ জালাল, শাহ পরান ও শেখ বোরহান
উদ্দিনের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন এটা কি ধর্মীয় অনুভূতির কারণে নয়? এটা কি ধর্মীয় অনুভূতিকে নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করা নয়?
জীবনভর ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্খান নিয়ে কেবল নির্বাচনের সময় মাথায় পট্টি আর হাতে তসবিহ, নূহ নবীর কিস্তি আর মাজার জিয়ারত করে ধর্মীয় লোকদের ভোট কামনা করে, তারা আর কিছু না হলেও যে খাঁটিভাবে ধর্ম ব্যবসায়ী সে কথা
কে না বলবেন। তারাই ধর্মকে এবং ইসলামকে নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করছেন না।
অতএব নিজেদের বাক্য বাণে যেন নিজেরাই কুপকাত না হন সেদিকেও একটু খেয়াল রাখার অনুরোধ রইল। আমাদের
দেশের মানুষ শিক্ষাদীক্ষায় তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকলেও যে দু’টি বিষয় অত্যন্ত সচেতন তা হলো খেলাধুলা ও রাজনীতি। গ্রামের সে অজোপাড়া গাঁয়ের একজন কৃষকও আজ রাজনীতি সচেতন। মানুষকে আবোল-তাবোল বুঝিয়ে এখন আর নিজেদের নৌকায় উঠানো সম্ভব নয়। এখন আর মানুষ গুলিস্তানের ফুটপাতের ওষুধ বিক্রেতাদের ওষুধ তেমন একটা
কিনতে চায় না বলে বেচারাদের ব্যবসা খুব একটা ভাল যাচ্ছে না। বিষয়টি মনে রেখেই বক্তব্য দিলে ভাল করবেন।
লেখক:- মাওঃ হাবীবুর রহমান, প্রতিষ্টাতা পরিচালক দারুল উলূম মাদ্রাসাতুল উম্মাহ্ ফ্রান্স।

One thought on “শেখ হাসিনার নৌকা বনাম নুহ নবীর নৌকা

Comments are closed.