শাড়ি ও ব্লাউজ পরার দাবি!

শাড়ি ও ব্লাউজ পরার দাবি!

আজ থেকে প্রায় দুশো বছর আগে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ, অখণ্ড ছিলো।
সেই দুশো বছর আগে কেরালা অঙ্গরাজ্যে হিন্দুদের মধ্যে ‘স্তনকর’ বা ‘Breast Tax’ প্রচলিত ছিলো। ঐ সময় নিয়ম ছিলো যে, শুধু ব্রাহ্মণ নারী ব্যতিত অন্য কোন হিন্দু
নারী তার স্তনকে শাড়ি পরে ঢেকে রাখতে পারবে না(পুরোনো ব্রাহ্মণ্যবাদ)। শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদের নারীরা তাদের স্তনকে এক টুকরো সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে পারবে,
বাকি হিন্দু নারীদেরকে প্রকাশ্যে স্তন উন্মুক্ত করে রাখতে হবে। তবে যদি কোন নারী
তার স্তনকে কাপড় দ্বারা (শাড়ি পরে)আবৃত করতে চায়, তবে তাকে স্তনের সাইজের
উপর নির্ভর করে ট্যাক্স বা কর দিতে হতো। বড় স্তন হলে বেশি কর আর ছোট স্তন
হলে কম কর দিতে হতো।

১৮০৩ সালে নাঙ্গেলী নামে এক নারী তার স্তনকে শাড়ি পরে আবৃত করে রাখে।

যখন গ্রামের ট্যাক্স কালেকটর তার থেকে (শাড়ি পরে স্তন ঢেকে রাখার  কারণে) স্তনকর চাইতে আসে, তখন নালেঙ্গী স্তনকরের বদলে নিজের দুটি স্তনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে
কেটে পাতা দিয়ে মুড়িয়ে ট্যাক্স কালেকটরের হাতে ধরিয়ে দেয়। স্তন কেটে ফেলার
কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য নাঙ্গেলীর মৃত্যু হয়। স্ত্রীর মৃত্যু শোকে নালেঙ্গীর
স্বামীও আত্মহত্যা করে। এই ঘটনার পর থেকেই স্তনকর বন্ধ হয়।

তবে আমি যতটা সহজে শাড়ি  বিষয়টা লিখলাম,

বাস্তবে কিন্তু স্তনকর বন্ধ করা এত সহজে হয়নি। এর জন্য দক্ষিণ ভারতীয় নারীদের
বহু সংগ্রাম করতে হয়েছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা পর্যন্ত করতে
হয়েছে।উনিশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে যখন  কিছু নিচু জাতের হিন্দু নারীরা তাদের শরীরের উপরের অংশ শাড়ি পরে আবৃত করার অধিকার দাবী করে, তখন পুরোহিতরা
স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, নীচু বর্ণের নারীদের  শরীরের উপরের অংশ আবৃত করা
ধর্ম বিরোধী কাজ। তখন সমগ্র নারীরা শাড়ি পরার দাবি আদায়ের জন্য ১৮৫৯ সালে আন্দোলন শুরু করে এবং দক্ষিণ ভারতে এটিকে কেন্দ্র করে একটি রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা
সংগঠিত হয়। সেই দাঙ্গায় অনেক নারী মারা যায় এবং আহত হয়।

নারীরা  আন্দোলনে নেমেছিলো কি কারণে?

যাতে শাড়ি পড়তে পারে, স্তন ঢেকে রাখতে পারে, সেই কারণে। এই আন্দোলন এবং হিন্দুদের এই নগ্ন প্রথা টিপু সুলতান মোটেও পছন্দ করেননি। তিনি চেয়েছিলেন এই নগ্নতা বন্ধ হোক। কিন্তু তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের হওয়ার কারণে জবরদস্তি কিছু করতে
পারেননি। তাই তিনি হিন্দু নারীদেরকে আহবান করেছিলেন, “যদি তোমরা ইসলাম
ধর্ম গ্রহণ করো, তবে কাপড় পরার অধিকার পাবে। ইসলামে নগ্নতার কোনো স্থান নেই”। টিপু সুলতানের ঐ কথা শুনে হাজার হাজার নীচু বর্ণের হিন্দু নারীরা ইসলাম ধর্ম
গ্রহণ করে।
কেবলমাত্র নিজের শরীরকে শাড়ি দিয়ে আবৃত করার অধিকার পাবার জন্য।
আর আজ দেখছি বাংলাদেশের নারীরা উল্টো করছে।নাঙ্গেলী যে স্থানকে ঢেকে
রাখার জন্য নিজের জীবনকে বলিদান দিলো, নারীরা যে স্থানকে ঢেকে রাখার জন্য
রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ করলো, সেই একই স্থান থেকে কাপড় সরানোর জন্য বাংলাদেশের
নারীরা আন্দোলন করছে।নাম দিয়েছে আবার পোশাকের স্বাধীনতা!
নাঙ্গেলীসহ শতশত নারী শাড়ি পরে স্তনকে ঢেকে রাখার জন্য জীবন উৎসর্গ করলো
আর বাংলাদেশের নারীরা সেই স্তনকে উন্মুক্ত করে রাখার জন্য আন্দোলন করছে!
জঘন্য তাদের রুচিবোধ।
নাঙ্গেলী ব্লাউজ পরিধান করার উদ্দেশ্যে জীবন দিলো আর বাংলাদেশের নারীরা
সেই ব্লাউজ খোলার জন্য আন্দোলন করছে, পার্থক্য এখানেই।
আর এটাই বাংলাদেশের নারীবাদের চেতনা!