শান্তির সমাজ গঠনে সালাম এর ভূমিকা

শান্তির সমাজ গঠনে সালাম এর ভূমিকা,ইসলাম হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের নাম, যা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে
বিশ্ব মানবতার জন্য পথ নির্দেশিকা হিসাবে প্রদান করা  হয়েছে। এটি শুধু কোন জীবন ব্যবস্থার নাম নয়,

বরং জীবনের সকল দিক ও বিভাগে গাম্ভীর্যপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশ উপহার দিতেও ইসলামেরজুড়ি নেই। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের বন্ধন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। তাই প্রয়োজন সামাজিক রীতি-নীতি সম্পর্কে জানা। একে অপরকে
কিভাবে অভিভাদন (সালাম) জানাতে হবে, সেটাওঅবগত হওয়া। মানব জাতিকে ইসলাম এটা শিখিয়ে দিয়েছে,
যার ভাষা আকর্ষণীয় এবং পদ্ধতিও চমৎকার।
ইসলামের এই চমৎকার অভিবাদন পদ্ধতি অপরিচিত মানুষের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেয়। পরস্পরের মাঝে মনোমালিন্য
দূর করে সম্প্রীতির পরিবেশ তৈরী করতঃ শত্রুতার পরিবর্তে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে মানুষ একে অপরের নিকট
ভালবাসার সৌরভ খুঁজে পায়। অনুভব করে সুসম্পর্কের কোমল পরশ। যে বাতাসে শত্রুতার গন্ধ নেই, আছে বন্ধুত্বের
আবহ। যাতে হিংসার লেশ মাত্র নেই, আছে পরোপকারের ভিত।ক্ষতির শংকা নেই, আছে সমূহ কল্যাণ। অহংকারের
বীজ নেই, আছে বিনয়ের সমারোহ। মনে কষ্ট দেওয়ার কথা নেই, আছে মন জুড়ানোর বাণী। নিঃসন্দেহে সেই অভিবাদনটা
হচ্ছে সালাম  السلام عليكم (আস-সালা-মু আলাইকুম)। অর্থাৎ আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। সমাজের সকল ক্ষেত্রে সালাম
এর গুরুত্ব কতখানি তা নিম্নে আলোকপাত করা হল।

সালামের সংজ্ঞা :

সালামুন সব্দটি فعال এর ওযনে বাবে تفعيل এর مصدر ক্রিয়ামূল। এর আভিধানিক অর্থ শান্তি ও নিরাপত্তা। তাই اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ (আস-সালা-মু আলাইকুম) অর্থ হ’ল আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।পরিভাষায় একজন মুসলিম আরেকজন মুসলিম ভাইয়ের
সাথে সাক্ষাতের সময় যে বাক্য দ্বারা একে অপরের সাথে ভালবাসা-বন্ধুত্ব, শান্তি-নিরাপত্তা, কল্যাণ ও দো‘আ কামনা করে
তারই নাম সালাম।

সালাম প্রচলনের ইতিকথা :

মানব সভ্যতার শুরু থেকেই একে অপরের সাথে দেখা- সাক্ষাতের সময় পরস্পর ভাব বিনিময়ের বিভিন্ন পদ্ধতি প্রচলিত
হয়ে আসছে। বিভিন্ন জাতি নিজেদের সভ্যতা-সংস্কৃতি, আদর্শ ও রুচি অনুযায়ী বিভিন্ন শব্দ ও বাক্য বেছে নিয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় পরস্পরের দেখা-সাক্ষাতে আদাব, নমস্কার, নমঃনমঃ ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে। ইউরোপ ও আমেরিকার খৃষ্টান সম্প্রদায় Good Morning, Good Afternoon, Good Evening, Good Night বলে একে অপরকে
সম্ভাষণ জানিয়ে থাকে। তেমনি Good Bye, Ta Ta বলে বিদায় জানাতে দেখা যায়।
প্রাক ইসলামী যুগে আরব সমাজে اَنْعَمَ اللهُ بِكَ عَيْنًا (আন‘আমাল্লাহু বিকা আইনান) অর্থাৎ আপনার দ্বারা আল্লাহ আপনার প্রিয়জনদের চক্ষু শীতল করুন এবং اَنْعِمْ صَبَاحًا (আনইম ছবাহান) অর্থাৎ আপনার সকাল সুন্দর-সমৃদ্ধ হোক বা শুপ্রভাত
ইত্যাদি শব্দের প্রচলন ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের পর বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) প্রাক ইসলামী যুগে ব্যবহৃত শব্দগুলো
পরিহার করে পরস্পরকে সালাম  اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ (আস-সালা-মু আলাইকুম) বলে অভিবাদন জানাতে নির্দেশ দেন।
সালাম আল্লাহ কর্তৃক প্রবর্তিত একটি বিধান :সালামের এই বিধান মহান আল্লাহ স্বয়ং প্রবর্তন করেছেন।এ মর্মে নিম্নোক্ত
হাদীছটি প্রনিধন যোগ্য।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىُ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَلَقَ اللهُ آدَمَ عَلَى صُوْرَتِهِ طُوْلُهُ سِتُّوْنَ ذِرَاعًا فَلَمَّا خَلَقَهُ قَالَ اِذْهَبْ فََسَلِّْمْ عَلَى أُوْلَئِكَ النَّفِرَ وَهُمْ نَفَرٌ مِنَ الْمَلاَئِكَةِ جُلُوْسٌ، فَاُسْتَمِعْ مَا يُحَيُّوُْنَكَ فَإِنَّهَا تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيَتِكَ، فَذَهَبَ فَقَالَ اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ، فَقَالُوْا السَّلاَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللهِ، قَالَ فَزَادُوْهُ وَرَحْمَةُ اللهِ،
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ)-কে তার আকৃতিতেই
সৃষ্টি করেছেন। তার উচ্চতা ছিল ষাট হাত। আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করে বললেন, যাও অবস্থানরত ফেরেশতাদের ঐ দলকে
সালাম কর। আর মনোযোগ সহকারে শ্রবণ কর, তোমার দেওয়া সালামের জবাবে তারা কী বলে। কেননা এটিই হবে তোমার
ও তোমার সন্তানদের অভিবাদনের পদ্ধতি। অতঃপর আদম (আঃ) সেখানে গিয়ে اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ বললেন। জবাবে ফেরেশতাগণ বললেন, اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللهِ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তারা وَرَحْمَةُ اللهِ অংশটি বৃদ্ধি করে বলেছেন’।