মির্জা সাহেবের পূর্ণাঙ্গ ও স্বতন্ত্র নবী হওয়ার দাবি
কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় ইমাম ও খলিফা, মির্জাপুত্র বশীরুদ্দীন মাহমুদ ১৯১৫
সনে ‘হাকীকাতুন নবুওয়াহ’ নামে একটি বই লিখে প্রচার করেছেন। আগেই বলা
হয়েছে, তিনি এটি কাদিয়ানি লাহোরী গ্রুপের বিরুদ্ধে লিখেছেন এবং তাতে মির্জা
সাহেবের স্বতন্ত্র-শরঈ নবী হওয়ার বিষয় ‘দালীলিক’ভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। বইটির প্রচ্ছদে বড় অক্ষরে লেখা আছে, ‘প্রতিশ্রুত ঈসা মসীহ-ইমাম মাহদীর নবুওত
ও রেসালাত অকাট্য দলীলে প্রমাণিত।’
বইয়ের ১৮৪-২৩৩ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ পৃষ্ঠাব্যাপী ‘দলীল-প্রমাণ’ দ্বারা মির্জা সাহেবের
নবুওত প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে। সেখানে মূলত লাহোরী গ্রুপের মত খন্ডন করে বিশ প্রকার ‘দলীল’ দেওয়া হয়েছে। তার মাঝে সপ্তম দলীল এমন, ‘খোদ মির্জা সাহেব
নিজেকে নবী ও রাসূল বলে উল্লেখ করেছেন এবং সুস্পষ্টভাবে নবুওত ও রেসালাত
দাবী করেছেন’।
মির্জা সাহেবের বক্তব্য পাঠকের সামনে তুলে ধরছি:
১. আমি ঐ আল্লাহর কসম করে বলছি, যার হাতে আমার প্রাণ, তিনিই আমাকে
পাঠিয়েছেন এবং আমাকে ‘নবী’ বলে নাম দিয়েছেন। (হাকীকাতুন নুবুওয়াহ, পৃ. ৬৮)
২. আল্লাহর হুকুম অনুসারে আমি একজন নবী। (‘আখবারে আম’ পত্রিকায় ২৬ মে ১৯০৮ঈ.তে প্রকাশিত মির্জা সাহেবের সর্বশেষ চিঠি)
৩. আমাদের দাবি হলো, আমি নবী ও রাসূল। (বদর, ৫ মার্চ ১৯০৮ঈ.)
৪. সুতরাং এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আমার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী পৃথিবীতে ভূমিকম্প হওয়া এবং নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেওয়া আমার নবুওতের নিদর্শন। স্মরণ রাখা উচিৎ, পৃথিবীর এক এলাকাতে আল্লাহর কোনো রাসূলকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করা হলে অন্য এলাকার অপরাধীরাও তখন পাকড়াও-এর শিকার হয়। (হাকীকাতুল ওহী, পৃ. ১৬২)
৫. বিভিন্ন এলাকায় শতশত পাহাড়ী মানুষ ভূমিকম্পের আঘাতে হতাহত হয়েছে।
তাদের কী অপরাধ ছিলো! কোন্ জিনিসকে তারা মিথ্যা মনে করতো! সুতরাং মনে
রাখতে হবে, যখন আল্লাহর কোনো নবীকে অস্বীকার করে মিথ্যুক বলার অপচেষ্টা
করা হয়, তা বিশেষ কোনো সম্প্রদায় করুক অথবা বিশেষ কোনো ভূখন্ডের
অধিবাসীরা করুক, আল্লাহ তাআলা তখন ব্যাপক আজাব ও শাস্তি নামিয়ে দেন। (হাকীকাতুল ওহী, পৃ. ৮-৯)
৬. আল্লাহ তাআলা তাঁর নিয়ম অনুযায়ী কোনো নবী প্রেরণ করার আগ পর্যন্ত আজাব মূলতবি করে রাখেন। এখন সে নবীর আগমন হয়ে গেছে। তাই তাদেরকে অপরাধের
শাস্তি দান করার সময়ও এসে গেছে। (তাতিম্মা হাকীকাতুল ওহী, পৃ. ৫২)
৭. কঠিন আযাব কেবল তখনি আসে, যখন নবীর আগমনের পরও তাকে অস্বীকার
করা হয়। কুরআন মাজীদে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, (অর্থ) আমি কখনো কাউকে
শাস্তি দেই না, যতক্ষণ না (তার কাছে) কোনো রাসূল পাঠাই।’-সূরা বনী ইসরাঈল,
(১৭) : ১৫
তাহলে আসল বিষয়টা বুঝতে এত বিলম্ব কেন যে, পুরো দেশ দুর্ভিক্ষের করালগ্রাসে
পরিণত হয়েছে, একের পর এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেই চলেছে।
ওহে বেখবর! খোঁজ নিয়ে দেখ, তোমাদের মাঝে আল্লাহ তাআলা হয়ত কোনো নবী পাঠিয়েছেন, যাকে তোমরা অস্বীকার করে চলেছ! (যার ফলে এ-সমস্ত দুর্যোগ তোমাদের পিছু ছাড়ছে না)-তাজাল্লিয়াতে এলাহিয়া, পৃ. ৮-৯
৮. আল্লাহ তাঁর নবীকে বিনা সাক্ষ্যে ছেড়ে দিতে চাননি।-দাফেউল বালা, পৃ. ৮
তাছাড়া মির্জা সাহেব যে সমস্ত কথাকে ইলহাম বলেছেন:
৯. আল্লাহ তাআলা ‘কাদিয়ান’ অঞ্চলকে প্লেগ মহামারী থেকে রক্ষা করবেন।
কেননা এটি তার প্রিয় রাসূলের বিচরণ ক্ষেত্র!-প্রাগুক্ত, পৃ. ১০
১০. প্রকৃত খোদা তিনি, যিনি কাদিয়ানে আপন রাসূলকে প্রেরণ করেছেন। (দাফেউল
বালা, পৃ. ১১; মির্জা মাহমুদকৃত হাকীকাতুন নুবুওয়াহ-এর সূত্র অবলম্বনে, পৃ. ২১২, ২১৪)
অর্থাৎ ঐশী নির্দেশনা বলে চালিয়ে দিয়েছেন, সেখানেও শত জায়গায় কোনো প্রকার রাখঢাক ব্যতিরেকে নিজেকে তিনি
নবী ও রাসূল বলে উল্লেখ করেছেন। আর মির্জাপুত্র মাহমুদ তার বইয়ে সেসব ইলহাম
থেকে ৩৯টিকে পিতার নবুওতের স্বতন্ত্র ‘দলীল’রূপে একত্রিত করে দিয়েছেন।
কৌতূহলী পাঠকের জন্য এখানে ১০টি ইলহাম তুলে ধরছি।
১. তিনিই আল্লাহ, যিনি তার রাসূল (কাদিয়ানী)কে হেদায়াত, সত্য ধর্ম ও ‘চরিত্র-সংশোধনী’ দিয়ে পাঠিয়েছেন।
২. আমি রাসূলের সঙ্গে উঠবো এবং তিনি যাকে তিরস্কার করবেন, আমিও তাকে
তিরস্কার করবো।
৩. আমি রাসূলের সঙ্গে উত্থিত হবো আর ভাঙবো ও রুখবো।
৪. দুশমন বলবে, তুমি প্রেরিত পুরুষ নও। সত্ত্বর তাকে আমি নাকে ও শুঁড়ে
(রশি লাগিয়ে) ধরবো।
৫. রাসূলের সঙ্গে আমি উঠবো এবং যার নিন্দা তিনি করবেন, আমি তার নিন্দা করবো।
৬. আমি রাসূলের সঙ্গে অবস্থান করবো এবং সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কিছুতেই আমি
পৃথিবী ত্যাগ করবো না।
৭. আমি থাকবো নবীর সাথে, তিনি যেখানে আমিও সেখানে।
৮. আমি অবস্থান করবো কেবল রাসূলের সঙ্গে।
৯. আহমদ (কাদিয়ানী)কে আমি একটি কওমের নিকট প্রেরণ করলাম। কিন্তু তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো, এ তো নিকৃষ্টতম মিথ্যুক!
১০. দুনিয়াতে একজন নবী আসলেন। কিন্তু পুরো দুনিয়ার তেমন কেউ তাকে গ্রহণ
করলো না। অবশ্য আল্লাহ তাকে গ্রহণ করে নেবেন এবং জোরালো হামলা ও
আক্রমণের মাধ্যমে তার সত্যতা প্রকাশ করবেন।
মির্জামাহমুদ তার কিতাবে এ জাতীয় ইলহাম উদ্ধৃত করার পর লিখেছেন-
‘এখন এত ইলহাম বিদ্যমান থাকতেও কী করে প্রতিশ্রুত (কাদিয়ানী) মসীহকে নবী
মানতে দ্বিধা করবেন? আল্লাহ তো এক দু’বার নয়, শত শত বার তাঁকে নবী নামে স্মরণ করেছেন। এই ক্ষেত্রসমূহের সবগুলিতেই কি আপনি বক্র ব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে
বলবেন, তিনি নবী নন, নবীগণের কোনো কোনো গুণ কেবল তার ভিতর পাওয়া যায়? পৃথিবীর আর কারো ব্যাপারে কি এমনটা ঘটতে দেখা গেছে?-যাকে আল্লাহ পাক অসংখ্যবার নবী বলেছেন, অথচ বাস্তবে তিনি নবী নন?
‘সকল নবীকে তো আমরা এজন্য নবী বলে স্বীকার করি যে, আল্লাহ তাদেরকে নবী বলেছেন। তাহলে যে আল্লাহ মুসাকে ও ঈসাকে নবী বলেছেন বলে আমরাও তাদেরকে
নবী বলছি, সেই আল্লাহই যখন আমাদের (কাদিয়ানী) মসীহকে নবী বলছেন, তখন আমরা বলে বসছি তিনি নবী নন! এটা কেমন দ্বিমুখী আচরণ!! নবী বানানোর জন্য এমন কোনো শব্দ বাকি থাকলে পেশ করুন, যদ্বারা আমরা বুঝতে পারি যে, পূর্ববর্তী নবীদেরকে এইভাবে নবী বলা হতো, আর আমাদের মসীহকে বলা হয়েছে অন্যভাবে। সুতরাং তিনি নবী নন!’
‘আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে একিনী ও সুনিশ্চিত ওহী সত্ত্বেও কি হযরত (কাদিয়ানী)
মসীহের নবুওত অস্বীকার করা সম্ভব? তাঁকে অস্বীকার করলে পূর্ববর্তী নবীদেরও
অস্বীকার করা ছাড়া কোনো গতি নেই। কারণ, হযরত মুসা ও ঈসা মসীহের নবুওত
যে সমস্ত শব্দে ও দলীলে প্রকাশ পেয়েছে এবং প্রমাণিত হয়েছে, প্রতিশ্রুত (কাদিয়ানী) মসীহের নবুওত সম্পর্কে তার চেয়েও স্পষ্ট শব্দের মজবুত দলীল মজুদ আছে।
সে সকল দলীল সত্ত্বেও হযরত মসীহ কাদিয়ানী যদি নবী না হন, তাহলে বলতে হবে পৃথিবীতে আসলে আজ পর্যন্ত কোনো নবীই আসেননি।’ (হাকীকাতুন নুবুওয়াহ,
পৃ ২০০)
পূর্বে যেমনটা বলা হয়েছে, নবুওত দাবির ব্যাপারে মির্জা সাহেবের বক্তব্যে কোনো
অস্পষ্টতা নেই এবং কোনো ব্যাখ্যারও অবকাশ নেই। কিন্তু কাদিয়ানী লাহোরী গ্রুপ
এ-পর্যন্ত যত ব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েছে, সেটা শুধু তাদের দুর্ভাগ্যের প্রমাণ বহন করে।
ওই গ্রুপের নেতা মুহাম্মদ আলী এবং খাজা কামালুদ্দীন যথেষ্ট লেখাপড়া জানা মানুষ।
তা সত্ত্বেও এরা ভুল এবং সম্পূর্ণ ভুল কিছু বিষয় মানতে হবে বলে গোঁ ধরে আছে। ফলে তাদের পড়াশোনা ও আকল বুদ্ধি তাদের কোনো কাজে আসছে না।
পূর্ণ নিষ্ঠা, ও আমানতদারির সঙ্গে যা বুঝেছি:
প্রজ্ঞা ও আমানতদারির সঙ্গে পড়াশোনা করে যা বুঝেছি তা হলো, মির্জা সাহেবের
পূর্ণ নবুওত দাবি করার বিষয়ে কোনো অস্পষ্টতা নেই। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি
কাদিয়ানীদের সম্পর্কে কম পড়াশোনা করে থাকে, কিংবা মির্জা সাহেবেরই অন্যান্য
অষ্পষ্ট ও দ্বিমুখী বক্তব্যের ফেরেব বুঝতে না পারে, অথবা কাদিয়ানী লাহোরী গ্রুপের আরোপিত ব্যাখ্যার খপ্পরে পড়ে থাকে, তাহলে তার কাছে বিষয়টিতে কিছু ব্যাখ্যার
অবকাশ আছে বলে মনে হতে পারে। কিন্ত প্রশ্ন হলো, মির্জা মাহমুদের এবং কাদিয়ানীদের মূলধারার সবাই মির্জা সাহেবের নবুওতের ব্যাপারে অনড় এবং তাদের খোলামেলা বক্তব্য হলো, আমরা মির্জা সাহেবকে ঐ অর্থে নবী মনে করি, যে অর্থে কুরআন-হাদীসে পূর্ববর্তী নবীদেরকে নবী বলা হয়েছে। তারা তাদের এই আকীদার উপর দলীল দিয়ে থাকে, মুসলমানদের সাথে মুনাযারা বা বিতর্ক অনুষ্ঠান করে থাকে, এ সকল লোকের আকীদার ব্যাপারে তো সন্দেহের কোনো সুযোগ নেই। ন্যায়বান সমঝদার মানুষের জন্য পূর্বের আলোচনাটুকুই যথেষ্ট।
আরও কিছু বক্তব্য ‘হাকীকাতুন নুবুওয়াহ’ থেকে তুলে ধরছি।
১. তিনি নবী। আল্লাহ পাক এবং তাঁর রাসূল ঐ শব্দেই তাকে নবী বলেছেন, যে শব্দে
পূর্ববর্তী নবীদেরকে নবী বলা হয়েছে। (পৃ. ৫০)
২. সুতরাং কোনো সন্দেহ নেই যে, প্রতিশ্রুত মির্জা মসীহ কোরআনিক নবী, আভিধানিকভাবেও নবী। (পৃ. ১১৬)
৩. অতএব শরীয়তে নবী বলতে যা বোঝায় হযরত মির্জা সাহেবের ক্ষেত্রে ঐ অর্থ নিলে
তিনি হাকীকী নবীই হন, রূপক নবী নন। (পৃ. ১৭৪)
৪. নবুওতের দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা মির্জা সাহেবকে পূর্ববর্তী নবীদের মতোই নবী
বলে মান্য করি। (পৃ. ২৯২)
মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এক সময় নিজের নবুওতের দাবি অস্বীকারও
করেছেন। কখনো নিজেকে আংশিক বা অপূর্ণ নবী বলেছেন। আবার কখনো তার নবুওতকে ‘মুহাদ্দাছ’ তথা ইলহামী বলে ভেলকি লাগিয়েছেন। লাহোরী গ্রুপ মির্জা
সাহেবের এ সমস্ত বক্তব্য অবলম্বন করে অন্যান্য স্পষ্ট বক্তব্যগুলির ব্যাখ্যা দেওয়ার
চেষ্টা করে। মির্জা মাহমুদ তার বইয়ে এ জাতীয় বক্তব্যের উপর লম্বা আলোচনা করে লিখেছেন-
‘১৯০১ সন পর্যন্ত মির্জা সাহেবের ধারণা ছিলো, আমার নবুওত আংশিক এবং অপূর্ণ।
এর দ্বারা সম্ভবত তিনি তার নবুওতের ‘মুহাদ্দাছ’ (ইলহামনির্ভর) হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। কিন্ত ১৯০১ সনে আল্লাহ পাকের ওহী তার মনোযোগ আকর্ষণ করলো যে,
তার নবুওত আংশিক নয়। বরং তার নবুওত ঠিক তেমনি, যেমন ছিলো পূর্ববর্তী নবীদের। সুতরাং এরপর থেকে আকীদা বদলে গেলো, পরবর্তীতে কখনো তিনি নিজের নবুওতকে আংশিক বা অপূর্ণ বলেননি।’
মির্জা মাহমুদের আলোচনার কিয়দাংশ:
মির্জা মাহমুদ এ সম্পর্কে যে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন তাতে অর্থহীন কথাবার্তা এবং বিরক্তিকর পুনরাবৃত্তি প্রচুর। পাঠকের সামনে তার কিয়দাংশ পেশ করা হচ্ছে।
১. যে সমস্ত কিতাবে তিনি নবী হওয়ার কথা সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন, অথবা
নিজের নবুওতকে আংশিক বা অপূর্ণ বলেছেন, কিংবা মুহাদ্দাস তথা ইলহামপ্রাপ্তদের নবুওত বলে উল্লেখ করেছেন, ব্যতিক্রমহীনভাবে তার সবই ১৯০১ সনের পূর্বে রচিত কিতাব। ১৯০১ সনের পর রচিত কোনো কিতাবে তিনি নিজের নবুওতকে আংশিক,
অপূর্ণ বা ইলহামী বলে আখ্যায়িত করেননি। (পৃ. ১২০)
২. ১৯০১ সনের পূর্বের যে সকল সূত্রে দেখা যাচ্ছে তিনি নবুওত অস্বীকার করেছেন,
তার সবই এখন মানসূখ হয়ে গেছে। সেগুলো এখন দলীলযোগ্য নয়। (পৃ. ১২১)
৩. (১৯০১ সনের) পূর্বেও তাকে নবী বলে ডাকা হতো। কিন্ত তিনি এর ভিন্ন ব্যাখ্যা দিতেন। কিন্ত যখন বারবার আল্লাহ পাক তাকে নবী ও রাসূল বলে সম্বোধন করলেন, তখন তিনি বুঝতে পারলেন, আমি বাস্তবেই নবী। নবী ছাড়া অন্য কিছু নই। প্রথম প্রথম তিনি যাই
ভেবে থাকুন, তার ইলহাম (ঐশী নির্দেশনা)-এর মাঝে নবী শব্দ প্রায়ই আসে। এটি তার নবুওতের ব্যাপারে সুস্পষ্ট। ভিন্ন অর্থের অপেক্ষা রাখে না। (পৃ. ১২৪)
ইতিপূর্বে বলা হয়েছে, মির্জা মাহমুদ তার কিতাবে পিতার নবুওতের বিষয়ে ২০ প্রকার দলীলের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। এবার সেগুলোর উপর একটু নজর বুলিয়ে নেওয়া যাক।
১. যেমনিভাবে আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম ও ইয়াকুব, মুসা ও ইউসুফ, ঈসা ও নূহকে (আ.) নবী বলে ডেকেছেন, তেমনিভাবে আমাদের প্রতিশ্রুত মসীহ কাদিয়ানীকেও আল্লাহ পাক নবী বলে সম্বোধন করেছেন। কুরআনে তাকে রাসূল বলে সম্বোধন করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, অর্থ : ‘‘আমি (ঈসা) সেই রাসূলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আসবেন এবং যার নাম হবে আহমদ। (৬১ : ৬) আয়াত থেকে প্রমাণ হয়, আগত মসীহকে আল্লাহ নবী বলেছেন।
সুতরাং কুরআনে যাকে রাসূল বলা হয়েছে,
তার নবুওত ও রেসালাতের ব্যাপারে দ্বিধান্বিত হওয়ার সুযোগ কোথায়? অন্য নবীগণকে তো আমরা এই ভিত্তিতে নবী বলি যে, আল্লাহ তাআলা তাদের নাম নবী রেখেছেন। সুতরাং প্রতিশ্রুত মসীহকে কেন নবী বলা হবে না? তার নামও তো কুরআনে এসেছে! যদি হযরত মুসা ও ঈসা নবী হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের কাদিয়ানী মসীহও নবী। তিনি যদি নবী না হন, তাহলে ঈসাও নবী নন। কারণ উভয়ের নবুওতের সাক্ষী একই কুরআন। (পৃ. ১৮৮) (পাঠক! কাদিয়ানীর নাম ‘গোলাম আহমদ’; আহমদ নয়!)
২. নবীজী সা. মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে নবী নামে স্মরণ করেছেন। নাওয়াস ইবনে সামআনের হাদীসে তাঁকে নবী-উল্লাহ বলে ডেকেছেন। সুতরাং প্রতিশ্রুত মসীহের নবুওতের বিষয়ে নবীজী সা. সাক্ষী। কুরআনেও আল্লাহ পাক তাকে রাসূল বলেছেন। অর্থ : ‘‘তিনিই তো নিজ রাসূলকে হেদায়েতসহ প্রেরণ করেছেন।’’ ৯ : ৩৩ আয়াতে মির্জা মসীহের নবুওতের (?) ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে! সুতরাং নবীজী যার নবুওতের বিষয়ে সাক্ষ্য দেন, কোনো মুমিনের জন্য তার নবুওত অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। (পৃ. ১৮৯-১৯০)
৩. মির্জা মসীহ মাওউদের নবী হওয়ার উপর পূর্ববর্তী নবীদের সাক্ষ্য বিদ্যমান আছে। সবচে পুরানো সাক্ষ্য হলো প্রাচীন পারসিক নবী যরথ্রুস্টের। তারপর হিন্দু অবতার শ্রীকৃষ্ণের সাক্ষ্য। তৃতীয় সাক্ষ্য ইসরাঈলী নবী দানিয়ালের। আর ‘তালমুদ’ কিতাবেও তার নবুওতের উল্লেখ আছে। (পৃ. ১৯৭)
‘সকল ন্যায়বান ও সত্য গ্রহণে প্রস্তত ব্যক্তিদের নিকট প্রশ্ন, সুস্থ বিবেক কি এটা কখনো মানতে পারে যে, এক ব্যক্তির নবুওতের উপর হাজার বছর পূর্বে নবীগণও সাক্ষ্য দিয়ে চলেছেন। তবু সেই ব্যক্তিকে আমরা নবী বলে মেনে নেবো না? মির্জা মসীহ মাওউদ সম্পর্কে যত জায়গায় নবী হওয়ার কথা এসেছে সব জায়গাতেই কি ব্যাখ্যা করে বলবো যে, নবী দ্বারা হাকিকী নবী উদ্দেশ্য নয়, বরং বিশেষ কোনো সাদৃশ্যের কারণে মির্জা মসীহকে নবী বলে দেওয়া হয়েছে? এও কি সম্ভব? ব্যাখ্যা বা তাবিলের তো একটা সীমা থাকা চাই!’
‘আমি পূর্ণ নিশ্চয়তার সঙ্গে বলছি, যে কেউ মুক্তভাবে স্বাভাবিক নিয়মে এ বিষয়ে চিন্তা করবে, তার কাছেই মির্জা মসীহের নবুওতের বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে
যাবে। এর বিপরীত বক্তব্যের অসারতাও তার সামনে খুলে যাবে। চলবে ইনশাআল্লাহ।