মানুষের মর্যাদা রক্ষা করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। মহান আল্লাহ প্রতিটি মানুষকে মর্যাদাবান করে সৃষ্টি করেছেন। বড় হলে শ্রদ্ধা করা ও ছোট হলে স্নেহ করা প্রতিটি
মানুষের কর্তব্য। নবীজিরও নির্দেশ এটি। পাশাপাশি আলেম ও জ্ঞানীদের প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রকাশের নির্দেশ রয়েছে হাদিসে। যারা মানুষের মর্যাদাহানি করে তাদের
বিরুদ্ধে তিনি কঠোর বাণী উচ্চারণ করেছেন। শক্ত ভাষায় বলেছেন-‘এসব ব্যক্তি
আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ মূলত তাদের কিছু কাজের বিষয়ে তিনি এত কঠোর
বাণী শুনিয়েছেন।
নিচে ওইসব বিষয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো-যা আমাদের পরিহার করা
উচিত। রাসুল (সা.)-এর সুন্নত ও আদর্শ নিয়ে অনেকেই ব্যঙ্গাত্মক ও অবজ্ঞাসূচক কথা
বলে থাকে। কেউ অবচেতনভাবে, আবার কেউ বিদ্বেষ থেকে। যেমন-দাড়ি-টুপি নিয়ে টিপ্পনি কাটা ইত্যাদি। এটা কঠিন অন্যায়। হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) থেকে
বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে আমার সুন্নতের প্রতি বিমুখ হবে সে আমার উম্মতভুক্ত
নয়।’ (বুখারি : ৪৭৭৬)
বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া :
বড়দের প্রতি বিনয়ী ও শ্রদ্ধাপরায়ণ হওয়া এবং সুযোগ হলেই তাদের খেদমত ও সেবা
করা উচিত। তাদের মর্যাদাহানি হয় এমন সব কাজ থেকে বেঁচে থাকা চাই। হজরত
উবাদা ইবন সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সে আমার উম্মতভুক্ত
নয়, যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না এবং আমাদের ছোটকে স্নেহ করে না এবং
আমাদের আলেমের হক জানে না’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ৮/১৪)। অন্য হাদিসে
এসেছে, ‘বৃদ্ধ মুসলিমকে সম্মান করা আল্লাহকে সম্মান করারই নামান্তর’ (আবু দাউদ : ৪৮৪৩)। সুতরাং বড় ব্যক্তি যদি কম যোগ্যতাসম্পন্নও হন, তবুও তাকে ছোট করে
কথা না বলা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো যুবক যদি কোনো বৃদ্ধকে তার
বার্ধক্যের কারণে সম্মান করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার বার্ধক্যের সময় তাকে
সম্মান করবে, এমন লোক নিয়োজিত রাখবেন।’ (তিরমিজি : ২০২২)
ছোটকে স্নেহ করা হল তার মর্যাদা:
উপরোক্ত হাদিসের দ্বিতীয় অংশ ছিল, ‘যে আমাদের ছোটকে স্নেহ করে না সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ কিছু লোক এমন আছে, যারা ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে কঠোর
ব্যবহার করে, ধমক দেয়। এটা ঠিক নয়। রাসুল (সা.) শিশুদের ওপর রাগ করতেন না। তাদের সঙ্গে কর্কশ ভাষায় কথা বলতেন না। বরং কেউ কোনো শিশুর ওপর রাগ
করলে তিনি তার ওপর রাগ করতেন। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)
তাঁর নাতি হাসানকে চুমু খেলেন। সেখানে আকরা ইবনে হাবিস (রা.) নামে এক সাহাবি
বসা ছিলেন। হাসানকে চুমু খাওয়া দেখে তিনি বললেন, আমার ১০টি সন্তান রয়েছে।
আমি তাদের কাউকে চুমু খাইনি। নবীজি (সা.) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘যে দয়া
করে না, তার প্রতিও দয়া করা হবে না’ (বুখারি : ৫৬৫১)। আরেক হাদিসে আছে,
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, এক গ্রাম্য ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এলো। নবীজি
তাকে বললেন, ‘তোমরা কি তোমাদের শিশুদেরকে চুমু খাও?’ সে বলল, ‘জি না।’
রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমাদের অন্তরে যদি দয়া-মায়া না থাকে, তাহলে আমার কী
করার আছে!’ (বুখারি : ৫৬৫২)। এসব আলোচনা থেকে বুঝে আসে, বড়দের সম্মান
করতে হবে, ছোটদের স্নেহ করতে হবে, জ্ঞানীদের মর্যাদা দিতে হবে। সর্বোপরি নবীজির সুন্নত অনুসরণ করে পথ চলতে হবে। আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও আমল করার
তওফিক দিন।