ভ্যালেন্টাইন ডে! জন্ম ও পেছনের ইতিহাস!

১৪ ই ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বে বেশ পরিচিত একটি নাম “বিশ্ব ভালবাসা দিবস” বা “ভ্যালেন্টাইনস ডে” একজন সচেতন মানুষ
কোন কাজ করার আগেই সে কাজটি সম্পর্কে অন্ততঃপক্ষে সেটা জানার চেষ্টা করবেন “ভ্যালেন্টাইনস ডে” সম্পর্কে এখন বোধহয় পরিস্কার ধারনা থাকা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।  “ভ্যালেন্টাইনস ডে” কি? কি এর পেছনের লুকানো ইতিহাস?
আজ ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকেই ভ্যালেন্টাইন-ডের ইতিহাস খোঁজার চেষ্টা করবো।

ভ্যালেন্টাইন ডে নামের উৎপত্তি:

 ১) আমরা যদি ইতিহাস পার্যালোচনা করি তবে দেখতে পাব যে, সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে নামের মধ্যেই রয়েছে বিশাল এক
ইতিহাস। তৃতীয় শতাব্দীর সময় রোমের বাসিন্দা, পুরোহিত ও চিকিৎসক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের স্মরণে
উদযাপিত হয়েছিল এই দিনটি। যিনি ছিলেন একজন ধর্ম প্রচারকও। রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস, যিনি বিশ্বাস করতেন
যে, অবিবাহিত সৈন্যরা বিবাহিতদের চেয়ে বেশি দক্ষ, তাই তাদের বিয়ে করতে নিষেধ করেছিলেন। তিনি একটি আইন
তৈরি করেন যাতে বলা ছিল, সেনাবাহিনীতে চাকুরি করা যুবকেরা বিয়ে করতে পারবেনা। কিন্তু ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন
এই অনৈতিক নিয়মকে মেনে নিতে পারেননি। ফলে তিনি গোপনে অনেক রোমান সৈন্যদের বিবাহ পড়াতেন যাদের
বিবাহ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পাশাপাশি তিনি অন্যান্য লোকেদের মধ্যেও ভালবাসা জাগিয়ে তুলতে প্রচার শুরু করেন।
কিন্তু সম্রাট সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের এই কাজ সম্পর্কে জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে সেইন্টকে বন্দী করে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। কারাগারে থাকাবস্খায় রাজা তাকে খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে প্রাচীন রোমান পৌত্তলিক ধর্মে ফিরে আসার প্রস্তাব দেন এবং
বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা বলেন। ভ্যালেন্টাইন রাজার প্রস্তাব মানতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং খ্রিষ্ট ধর্মের
প্রতি অনুগত থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন। তখন রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন। অত:পর রাজার নির্দেশে ২৭০
খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
২) সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীরা প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং ফুল
উপহার দিত। তারা বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক কথা বলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখত। জেল রক্ষক আস্ট্রেরিয়াসের অন্ধ
মেয়ে ‘সেন্ট মারিয়াস’ও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। অনেকক্ষণ ধরে তারা দু’জন প্রাণ খুলে কথা বলত। এক সময়
ভ্যালেন্টাইন তার প্রেমে পড়ে যায়। বন্দি অবস্থাতেই সেন্ট ভ্যালেন্টাইন আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় জেলারের অন্ধ মেয়ের
দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেয়।
ভ্যালেন্টাইনের ভালবাসা ও তার প্রতি দেশের যুবক-যুবতীদের ভালবাসার কথা সম্রাটের কানে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে
২৬৯ খৃষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদন্ড দেন। মৃত্যুর আগে মেয়েটিকে লেখা এক চিঠিতে সে লিখে যে, “ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন।” অনেকের মতে, সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারেই পোপ জুলিয়াস ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে
‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে’ হিসেবে ঘোষণা দেয়।
ভ্যালেনটাইন ডে এর নাম পরিবর্তন:
 ৩) খৃষ্টীয় ইতিহাস মতে, গোটা ইউরোপে যখন খৃষ্টান ধর্মের জয়জয়কার, তখনও ঘটা করে পালিত হতো রোমীয় একটি রীতি। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে গ্রামের সকল যুবকরা সমস্ত মেয়েদের নাম চিরকুটে লিখে একটি পাত্রে বা বাক্সে জমা করত। অতঃপর
ঐ বাক্স হতে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলত, যার হাতে যে মেয়ের নাম উঠত, সে পূর্ণবৎসর ঐ মেয়ের প্রেমে
মগ্ন থাকত। আর তাকে চিঠি লিখত, এ বলে ‘প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরণ করছি।’ বৎসর শেষে এ
সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হতো।
এ রীতিটি কয়েকজন পাদ্রীর দৃষ্টিগোচর হলে তারা একে সমূলে উৎপাটন করা অসম্ভব ভেবে শুধু নাম পাল্টে দিয়ে একে
খৃষ্টান ধর্মায়ণ করে দেয় এবং ঘোষণা করে এখন থেকে এ পত্রগুলো ‘সেন্ট ভ্যালেনটাইন’-এর নামে প্রেরণ করতে হবে।
কারণ এটা খৃষ্টান নিদর্শন, যাতে এটা কালক্রমে খৃষ্টান ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়।
৪) অন্য আরেকটি মতে, ফেব্রুয়ারী মাসে প্রাচীন রোমে বসন্ত শুরু হত। তারা এই মাসটিকে পবিত্রতা ও শুদ্ধতার মাস
মনে করত। ঐ সময়ে তারা ধর্মীয়ভাবে তাদের বাড়ি ঘর পরিষ্কার করত। প্রাচীন রোমে দেবতাদের রাণী ‘জুনো’র সম্মানে
১৪ ফেব্রুয়ারি ছুটি পালন করা হতো। রোমানরা বিশ্বাস করত যে, জুনোর ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কোন বিয়ে সফল হয় না।
ছুটির পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি তারা ‘লুপারকেলিয়া’ নামে একটি ভোজের আয়োজন করত যা তাদের কৃষি দেবতা ‘ফাউনাস’
এবং রোম প্রতিষ্ঠাতা “রমিওলাস” ও “রেমাস” এর নামে উতসর্গ করা হত।
এই ভোজ অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষন ছিল একটি লটারি। তৎকালীন রোমের মেয়েরা একটি স্থানে একত্রিত হত এবং তাদের
নাম লিখে জমা দিত। শহরের অবিবাহিত ছেলেরা সেখান থেকে লটারির মাধ্যমে তাদের নারীসঙ্গী পেত। একেকজন মেয়েকে এক বছরের জন্য গ্রহণ করতো। অনেকসময় এই এক বছর থেকে বিবাহ পর্যন্তও গড়াত। পরবর্তিতে পোপ গেলাসিয়াস এই লটারি প্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন এবং এই দিবস কে খ্রীষ্টিয় ফ্লেভার দিতে ভ্যালেন্টাইন ডে নামের মোড়ক দিয়ে আবৃত করেন।

ভ্যালেন্টাইন ডে! জন্ম ও পেছনের ইতিহাস!
এভাবেই-নারীদের-বলি-দেয়া-হত-রোমে
মধ্যযুগে ভ্যালেন্টাই-ডেঃ

৫) ভ্যালেন্টাইন ডে’র উৎপত্তির বিষয়ে আরেকটি সম্পূর্ণভিন্নমত রয়েছে। এই মতের লোকেরা বলেন, ভ্যালেন্টাইনের
সঙ্গে প্রিয়জনকে ভালোবাসার বার্তা পাঠানোর আদৌ কোনও সম্পর্ক নেই। প্রাচীনকালে মানুষের বিশ্বাস ছিল, ১৪ ফেব্রুয়ারি
হলো পাখিদের বিয়ের দিন। পাখিরা বছরের দ্বিতীয় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিম পাড়তে বসে। আবার কেউ বলেন, মধ্যযুগের শেষদিকে মানুষ বিশ্বাস করত এদিন থেকে পাখিদের মিলন ঋতু শুরু হয়। পাখিরা সঙ্গী খুঁজেবেড়ায়। পাখিদের দেখাদেখি
মানুষও তাই সঙ্গী নির্বাচন করে এ দিনে।

৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র উদ্ভব হলেও এটি বিশ্বব্যাপী প্রথম দিকে তেমনিভাবে প্রচার ও প্রসার লাভ করেনি।
পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্ম দিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জা অভ্যন্তরেও মদ্যপানে
তারা বিরত থাকে না। খ্রিস্টীয় চেতনা ভ্যালেন্টাইন দিবসের কারণে বিনষ্ট হওয়ার অভিযোগে ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার ভ্যালেন্টাইন্স উৎসব নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিক ভাবে এ দিবস উৎযাপন করা নিষিদ্ধ করেছিল। এছাড়া অস্ট্রিয়া,হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবসটি জনগণ ও সরকারিভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।

আরেকটি সাহিত্যকর্মকে কেন্দ্র করে পঞ্চদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ভ্যালেন্টাইনস-ডে এর উৎপত্তি কিংবা জনপ্রিয়তার
কারণ হিসেবে ধরা হয়। ১৪১৫ সালে চার্লস, যিনি অর্নলসের রাজকুমার ছিলেন। তিনি “এগিনতোনিয়া” যুদ্ধে হেরে লন্ডন
টাওয়ারে বন্দী থাকা অবস্থায় তার প্রিয়তমাকে এক চিঠি লিখেছিলেন। এর পরবর্তীতে শেক্সপিয়র তার লেখনিতে ভ্যালেন্টাইন
-ডে কে জনপ্রিয় করে তোলেন।
ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে ভ্যালেন্টাইন ডে:
তথাকথিত ভালবাসা দিবস পালন মূলতঃ ভালোবাসার অভাবজনিত কারনে, ভালবাসা তথা নোংরামীর বিস্তার ঘটায়।
পাশ্চাত্যে ভালবাসা দিবস প্রচলনের পেছনে ছিলো ব্যবসায়ীদের স্বার্থ। পাশাপাশি এদেশে তা প্রবর্তনের পেছনে আছে
পাশ্চাত্যের গোলাম ও তথাকথিত প্রগতিবাদী এক সাংবাদিকের জন‌প্রিয়তা পাওয়ার তীব্রাকাঙ্খা ও ইহুদী খ্রিস্টানদের সুদূর
প্রসারী ইসলাম বিরোধী স্বার্থ। এটা এদেশে মুসলমানিত্ব নির্মূলের গভীর ষড়যন্ত্র। যতদিন এই দিবস পালনের নামে বেহায়পনা চলতে থাকবে ততোদিন এর উদ্ভাবক,আয়োজক, প্রচারকদের পাপ পূঞ্জিভূত হতে থাকবে। পশ্চিমাদের দ্বারা তাড়িত
হয়ে এদেশের হুজুগে বাঙালিদের কাছে একটি তথাকথিত সংস্কৃতির প্রচলনের প্রবক্তা সাজার উদ্দেশ্যে ও তার কাঙ্খিত
বাহবা কুড়ানোর লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে তার সাপ্তাহিক ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকার মাধ্যমে তথাকথিত ভালবাসা দিবসের প্রবর্তন ঘটিয়েছে। এর পেছনে সুযোগ-সন্ধানী ইসলামবিদ্বেষী মহলের বিবিধ স্বার্থ কাজ করেছে ও করে যাচ্ছে।
যারা ইহুদী-নাসারা অনুসৃত কথিত ভালোবাসা দিবস পালন করবে তাদের হাশর-নশর ইহুদী-নাসারা তথা বিধর্মীদের সাথেই
হবে। মূলকথা হলো- যারা ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ পালন করবে তারা কুফরী করবে। কারণ ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বা ‘ভালোবাসা
দিবস’ সম্পূর্ণরূপেই ইহুদী-নাসারা, তথা কাফিরদের প্রবর্তিত নিয়মনীতি বা অনুসৃত পন্থা যা মুসলমানদের মুসলমানিত্ব
তথা আন্ত-পারিবারিক বন্ধন নির্মূলের গভীর ষড়যন্ত্রও বটে। তাই মুসলমানদের জন্য অবশ্যই- ভ্যালেন্টাইন ডে’সহ
সর্বপ্রকার কুফরী প্রথা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার । এবং । এসব বেহায়াপনা থেকে
হেফাজত করুন আ-মীন।