ভূমিধস অর্থ হচ্ছে যমিনের কোন অংশ নিচে চলে গিয়ে বিলীন হয়ে যাওয়া। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
فَخَسَفْنَا بِهِ وَبِدَارِهِ الْأَرْضَ
‘‘অতঃপর আমি কারূনকে ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে প্রোথিত করলাম’’। (সূরা কাসাসঃ ৮১) কিয়ামতের পূর্বে তিনটি স্থানে
বিশাল আকারের ভূমিধস হবে। এগুলো হবে কিয়ামতের বড় আলামতের অন্তর্ভূক্ত।
হাদিসের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, আখেরী জামানায় ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশ কিয়ামতের সর্বপ্রথম বড় আলামত।
তিনি আগমণ করে এই উম্মাতের নের্তৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। ইসলাম ধর্মকে সংস্কার করবেন এবং ইসলামী
শরীয়তের মাধ্যমে বিচার-ফয়সালা করবেন। নবী (সা.) বলেন,
لَنْ تَقُومَ حَتَّى تَرَوْنَ قَبْلَهَا عَشْرَ آيَاتٍ فَذَكَرَمِنْهَا وَثَلَاثَةَ خُسُوفٍ: خَسْفٌ بِالْمَشْرِقِ وَخَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ وَخَسْفٌ بِجَزِيرَةِ الْعَرَبِ
“দশটি আলামত প্রকাশ হওয়ার পূর্বে কিয়ামত সংঘটিত হবেনা। তার মধ্যে থেকে তিনটি ভূমি ধসের কথা উল্লেখ করলেন।
একটি হবে পূর্বাঞ্চলে, একটি হবে পশ্চিমাঞ্চলে এবং আরেকটি হবে আরব উপদ্বীপে। [মুসলিম, হাদিস:২৯০১]
উম্মে সালামা [রা.] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর নবী (সা.)কে বলতে শুনেছি-
سَيَكُوْنُ بَعْدِىْ خَسْفٌ بِالْمَشْرِق وَ خَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ وَ خَسْفٌ بِجَزِيْرَةِ الْعَرَبِ قُلْتُ: يَا رَسٌولُ اللَّهُ! أَ يُخْسَفُ بِالْاَرْضُ وَ فِيْهَا الصَالِحِيْنَ؟ قَالَ لَهاَ رَسُوْلُ اللَّهُ صلى الله عليه و سلم أَكْثَرَ أَهْلُهَا الخَبَثُ
আমি চলে যাওয়ার পর অচিরেই তিনটি স্থানে ভূমিধস হবে। একটি হবে পূর্বাঞ্চলে, একটি হবে পশ্চিমাঞ্চলে এবং আরেকটি
হবে আরব উপদ্বীপে। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! সৎ লোক বর্তমান থাকতেই কি উহাতে ভূমিধস হবে? রাসূল (সা.) বললেন, হ্যাঁ, যখন পাপকাজ বেশী হবে।
এই ভূমিধস গুলো কি হয়ে গেছে?
কিয়ামতের অন্যান্য বড় আলামতের মতই এই ভূমিধসগুলো এখনও সংঘটিত হয়নি। এক শ্রেণীর আলেম মনে করেন
ভূমিধস তিনটি হয়ে গেছে। কিন্তু বিশুদ্ধ মতে এই আলামতগুলোর কোন একটিও এখনও প্রকাশিত হয়নি। এখানে সেখানে
প্রায়ই আমরা যে সমস্ত ভূমিধসের সংবাদ পেয়ে থাকি সেগুলো কিয়ামতের ছোট আলামতের অন্তর্ভূক্ত। আর যে সমস্ত
ভূমিধস কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার আলামত হিসেবে প্রকাশিত হবে তা হবে অত্যন্ত বড় আকারে। পূর্ব, পশ্চিম এবং
আরব উপদ্বীপের বিশাল এলাকা জুড়ে তা প্রকাশ হবে। মোটকথা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে তিনটি
ভূমিধসের খবর দিয়েছেন তা আখেরী যামানায় অবশ্যই সংঘটিত হবে। প্রতিটি মুসলিমের উপর তাতে বিশ্বাস করা ওয়াজিব।
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন, উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের অনেক দেশেই বহু ভূমিকম্পের আবির্ভাব
হয়েছে। বর্তমানে আমরা প্রায়ই পত্র-পত্রিকা ও প্রচার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে ভূমিকম্পের খবর শুনতে পাই। হতে পারে
এগুলোই কিয়ামতের আলামত হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। যদি তা না হয়ে থাকে তাহলে আমরা বলবো- এসব ভূমিকম্প কিয়ামতের আলামত হিসেবে প্রকাশিতব্য ভূমিকম্পের প্রাথমিক পর্যায় স্বরুপ। ২০০৫ ইং সালে শ্রীলংকা, ইন্দোনেশীয়া, থাইল্যান্ড ও ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয়ার কয়েকটি দেশে হয়ে যাওয়া সুনামীর ঘটনা কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার একটি
সুস্পষ্ট আলামত।