করে ফেলাটা খারাপ কিছু নয়।কেননা মানুষের ভূল হবেই। কখনো ভূল করেনি, এমন মানুষের নজির নেই। বরং ভূল
মানুষের অপকারের চাইতে উপকার করেছে বেশি। মানুষ কোন কিছু শিখার আগে শিখে নেয় ভুল করাটা। পৃথিবীতে
প্রতিটা মানুষ যত না কাজ করে তার অধিক ভূল আর ভূল কিছুই। জন্ম থেকে শুরু হয়ে মৃত্যু অবধি মানুষ নিরন্তর ভূল
করতে থাকে। এই নিরন্তর ভুল ভ্রান্তি করতে করতে মানুষ শিখে নেয় নতুন কিছু। শিখে নেয় কোনটা উচিত, কোন কাজটি
অনুচিত। ভুল থেকে মানুষ পায় জীবনের সার্থকতার চাবিকাঠি।
ভুল ভ্রান্তি আমরা সকলেই করি৷ কিছু ভূল হয় ছোট, কিছু বড়, আবার কিছু ভুল হয় মারাত্মক৷ যেমন নিজেদের ভুলের জন্যই
কখনও ফ্লাইট মিস করি, কখনও ভুলে যাই বিল জমা দিতে, আবার ইস্ত্রির সুইচ অফ না করা বা গ্যাস ওভেন বন্ধ না করার
মতো এমন কোনও মারাত্মক ভুলও করে বসি যার ফলে ঘটে যেতে পারে বড়সড় দুর্ঘটনা৷ মানুষ ভুল করে,আর ভুল কে
ডিফেন্স করে ভুলের জায়গায় দাড়িয়ে। হাও ইস পসিবল? কথা তো একটাই ভুল মানুষের হয়! মানুষ ভুল হলে বুঝত,এবং শুধারানোর পথ খুজত। হযরত আদম আঃ যে, ভুল করেছেন আল্লাহ তাকে ভুল সংশোধনের পথ দেখিয়েছেন এবং
বলেছেন ,আদম ভুলে গেছেন এবং তিনি অনুধাবন করেন নি। আল্লাহ তার ভুলকে মার্জনা করেছেন।এটা অপরাধ বা
দোষ নয়। উপাদানতগ মনুষ্য চরিত্র থেকে উৎপাদিত ভুল যা দোষ বা অপরাধ নয়। কিন্তু এরই ফাঁক দিয়ে কিছু মানুষ
এটাকে তাদের অপরাধ ঢাকার জন্য অপাত্র ব্যবহার করে।তারা তাদের কৃত পাপের ক্লিনসেড নিতে চায়।
প্রশ্ন হল ভুল স্বীকার করার প্রশ্নে:
কেউ নিজেদের ভূল খুব সহজেই মেনে নিতে পারেন৷ কেউ সহজে মেনে নিতে না পারলেও কিছুটা নিমরাজি হয়েও স্বীকার
করে নেন৷ যাতে হয়তো সামনের মানুষটা বিশেষ সন্তুষ্ট হন না৷ কিন্তু কিছু মানুষ রয়েছেন যারা কখনই নিজেদের ভূল মেনে নিতে পারেন না৷ ছোট হোক বা বড়, নিজেদের কোনও ভুলই স্বীকার করতে পারেন না৷ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও নিজেদের মারাত্মক ভুলের জন্যও কোনও না কোনও অজুহাত খাড়া করেন তারা৷ আমাদের সকলের পরিবার, বন্ধুদের
মধ্যেই রয়েছেন এমন মানুষরা৷ কিন্তু কেন কিছু মানুষ এমন হন? কী বলছেন মনোবিদরা?
ইগো বা অতিরিক্ত সেল্ফ-এর জন্যই এমনটা করে থাকেন তারা৷ এদের আত্ম-মর্যাদা বোধ এতটাই ঠুনকো হয় যে নিজের
ভূল স্বীকার করা তারা মনে করেন ইগোর প্রতি আঘাত৷ তারা মনে করেন এতে তাদের আত্ম-মর্যাদা ভেঙে চুরমার হয়ে
গেল৷ নিজেদের খুবই শক্ত বা কঠিন চরিত্রের মানুষ মনে করলেও মনোবিদরা জানাচ্ছেন, এই মানুষরা আসলে অত্যন্ত
দুর্বল চরিত্রের৷ এরা কিন্তু নিজেদের সিদ্ধান্তে নিজেদের বক্তব্যে স্থির থাকছেন না, নিজেদের বক্তব্যে স্থির থাকতে বাধ্য
হচ্ছেন৷ মনোবিদদের মতে, নিজের ভূল স্বীকার করার জন্য যে সাহস ও মানসিক জোর লাগে তা এদের থাকে না৷ তাই
কোনও সময়ই এরা ভুল স্বীকার করতে পারেন না৷ একজন সফল মানুষ যে ব্যর্থ হন না, তা নয়। কিন্তু তিনি তার প্রতিটি
ব্যর্থতা থেকে শেখেন। ব্যর্থতা তাকে হতোদ্যম না করে নতুনভাবে, নতুন কৌশলে কাজ করার উদ্দীপনা যোগায়। আর
সাধারণ মানুষ তা থেকে শেখে না। একই ভূল বারবার করে।
ভুল যখন ভুল মানুষের তরে:
ভূল তখন নিজেকেও নিজে ধিক্কার দেয়। ভূল যদি কথা বলতে পারত তাহলে আমার মনে হয় ভূল এই মানুষ রুপি হায়ওয়ান গুলোর গালে ক’টা থাপ্পড় দিয়ে নিজের আক্রোশ কিছুটা হলেও হালকা করত। অধিকাংশ মানুষের বৃত্ত হলো তারা একই ভুল
বার বার করে। যেমন, দৈনন্দিন জীবনেও সে একই ভূল অভ্যাস, আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গিরই পুনরাবৃত্তি করে এবং সমস্যায় পড়ে। যেমন, স্বামী-স্ত্রী হয়তো রাগারাগি বা ঝগড়া করছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এই ঝগড়া, মনোমালিন্য একই ইস্যু নিয়ে,
একই প্যাটার্নে। আবার একজন ছাত্র/ছাত্রী পরীক্ষায় খারাপ করছে হয়তো অমনোযোগের কারণে, সময় নষ্ট করার কারণে
বা বিশেষ কোনো ভুলের কারণে। ভালো রেজাল্ট করতে চাইলেও এই ভুলগুলো সে শোধরাচ্ছে না। আবার কেউ হয়তো
সময় মেনে চলে না। এর জন্যে অনেক রকম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লেও যে কারণগুলোর জন্যে তার দেরি হয় সে কারণগুলো সে দূর করছে না। এবং বারবার সময় মতো কাজ না করার ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
ভুল নামের অপরাধ করার কয়েকটি কারণ! ১. কারো প্রতি হিংসাত্মক মনোভাব চুড়ান্ত পর্যায়ে গেলে। ২. মনে মাঝে অন্যের প্রতি ক্ষোভের এগ্রেশন প্রকাশ! ৩. যোগ্যতার চেয়ে বড় কিছু পাওয়া। ৪. ইলম ও আমলের শূণ্যতা। ৫. পাপের বুঝা সীমাহীন। ৬. দুনিয়ার লোভ। ৭. আল্লাহ কে ভুলে যাওয়া। ৮. মানুসিক অবস্থার লেভেল জিরো হওয়া। ৯. মানুষের প্রতি অবিচার করার আগ্রহের চুড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়া। ১০. ভদ্রলোক সাজা যা শুধু লোক দেখানোই মাকসুদ।
লেখক:- মাওঃ হাবিবুর রহমান, প্রতিষ্টাতা মুহতামিম দারুল উলূম মাদরাসাতুল উম্মাহ ফ্রান্স।
One thought on “ভুল বার বার করে কেনো মানুষ?”
Comments are closed.