ভাষা সৃষ্টির ইতিকথা:

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছে হলো, দুনিয়াতে মানুষ সৃষ্টি করবেন। যেন তারা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে এবং
সদা তাঁর ইবাদাতে নিজেদের মগ্ন রাখে। সুতরাং মানুষ সৃষ্টির আগেই মানুষদের শিক্ষাদানের জন্য আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের নিয়ে পরামর্শ সভা ডাকেন। যেখানে মানুষ সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়, রব আর ফিরিশতাদের মধ্যে। যদিও
আল্লাহ সমস্ত সৃষ্টি থেকে বেনিয়াজ বা অমুখাপেক্ষী; তারপরও আমাদের অহংকার দূর করার লক্ষেই তিনি শিক্ষা দিয়েছেন ফেরেশতাদের সাথে পরামর্শ করে যে, তোমরাও কোনো কাজ করার আগে ছোট হোক বা বড় সবার সাথেই পরামর্শ করতে
দ্বিধা করো না।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা কোরআনে কারীমে এ বিষয়ে আয়াত অবতীর্ণ করেন—‘আর (স্মরণ করুন) যখন আপনার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব।’ তারা বলল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন; যারা অশান্তি ও রক্তপাত করবে? অথচ আমরাই তো আপনার গুণগান করছি এবং আপনারই পবিত্রতা বর্ণনা
করে থাকি।’ তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই আমি যা জানি তা তোমরা জান না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৩০)

আদম আ. এর ভাষা শিক্ষা:

আল্লাহ তায়ালা আদম আ.–কে সৃষ্টি করে ফিরিশতাদের সামনে উপস্থিত করলেন। সাথে সাথে আদমের শ্রেষ্ঠত্ব বৃদ্ধির জন্য
কিছু বস্তুও উপস্থিত করলেন, এবং ফিরিশতাদের লক্ষ্য করে বললেন, এগুলোর নাম বল— ফিরিশতাদের উত্তর ছিল, আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের তো অন্য কোনো বিষয়ের উপর জ্ঞানই নেই। তখন আল্লাহ আদমকে উদ্দেশ্য করে বললেন, উপস্থিত বস্তুগুলোর নাম বলার জন্য–যা তিনি তাকে শিক্ষা দিয়েছেন। আদম আ. আল্লাহর নির্দেশে সবকিছুর নাম একঝলকেই বলে দিলেন—যার প্রমাণ বহন করছে মহা গ্রন্থ আল কোরআন—

“এবং তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন, তারপর সে-সকল ফিরিশতাদের সম্মুখে পেশ করলেন এবং বললেন, ‘এই সমুদয়ের নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।”

“তারা (ফিরিশতারা) বলল, ‘আপনি মহান পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের তো অন্য কোন জ্ঞানই নেই। নিশ্চয় আপনি মহা প্রজ্ঞাময়।”

“তিনি বললেন, ‘হে আদম! ফিরিশতাদেরকে এ সব বস্তুর  নাম বলে দাও।’ অতঃপর যখন সে তাদেরকে সেসবের নাম বলে দিলেন, তখন তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আকাশ ও পৃথিবীর অদৃশ্য বস্তু সম্বন্ধে আমি অবহিত এবং তোমরা যা ব্যক্ত কর বা গোপন রাখ নিশ্চিতভাবে আমি তা জানি।”

যখন ফিরিশতাদেরকে বললাম, ‘আদমকে সিজদাহ কর। তখন সকলেই সিজদাহ করল; কিন্তু ইবলীস সিজদাহ করল না;
সে অমান্য করল ও অহংকার প্রদর্শন করল। সুতরাং সে অবিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হল।” (সূরা বাকারা: আয়াত ৩১-৩৪)

উক্ত আয়াতগুলো দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আদম বা আদম সন্তানকে আল্লাহ তায়ালা দুইভাবে সম্মানিত করেছেন। প্রথমত ভাষাজ্ঞান তথা বস্তুর নাম শিখিয়ে তা তাঁর মুখ দিয়ে বলিয়ে। আর দ্বিতীয়ত সম্মানিত করেছেন ফিরিশতা কর্তৃক আদম আ.–
কে সিজদা করিয়ে।

(সিজদার অর্থঃ নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ করা। আর তার সর্বশেষ পর্যায় হল, মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে দেওয়া। (ক্বুরতুবী)

আদম আ. যখন ফিরিশতাদের সামনে ও-ই সমস্ত বস্তুর নাম বলে দিলেন তখন একথা স্পষ্ট যে, তিনি তা মুখ দিয়েই উচ্চারণ করে বলেছেন। কোনো প্রকার ইশারা বা ইঙ্গিতে নয়। আর মানুষের মুখনিঃসৃত অর্থবোধক প্রত্যেকটা শব্দ বা বাক্যেকেই ভাষা বলে।

 বিভিন্ন ভাষাবিদগণ ভাষা এর বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন:

★বাগযন্ত্রের সাহায্যে তৈরিকৃত অর্থবোধক ধ্বনির সংকেতের সাহায্যে মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকেই ভাষা বলে। এখানে বাগযন্ত্র হলো গলনালি, মুখবিবর, কন্ঠ, জিহ্বা, তালু, দাঁত, নাক ইত্যাদির সমাবেশ।

আরো সহজভাবে, মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য কন্ঠনিঃসৃত বা মুখ থেকে বেরিয়ে আসা অর্থপূর্ণ কতগুলো আওয়াজ বা ধ্বনির সমষ্টিকে ভাষা বলা হয়।

★ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, “মনুষ্যজাতি যে ধ্বনি বা ধ্বনিসকল দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করে, তার নাম ভাষা”

★ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “মনের ভাব প্রকাশের জন্য, বাগযেন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনি দ্বারা নিষ্পন্ন, কোনো বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত, তথা বাক্যে প্রযুক্ত, শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে”

আদম আ. এর ঘটনা দ্বারা অনুধাবন হল যে, মানুষ সৃষ্টির সাথে সাথেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা ভাষা সৃষ্টি করেছেন।
কারণ মানুষ সামাজিক জীব। একা-একা বসবাস করতে পারে না। সবাই একসাথে দলবদ্ধভাবে থাকাতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। মানুষ যখন একসাথে একই জায়গায় বসবাস করবে—তখন প্রয়োজন হবে একে অপরের ভালো-মন্দের খোঁজখবর নেয়ার, মনের ভাবপ্রকাশ করার। আর খোঁজখবর নেওয়ার সর্বোত্তম উপায় হল, কথার মাধ্যমে একে অপরের হালচাল সম্পর্কে
অবগত হওয়া।

কিন্তু বর্তমান সময়ের কিছু ভাষাবিজ্ঞানী ভাষার উৎস নিয়ে বিভিন্ন মত দিয়েছেন যা নিতান্তই অবাস্তব। ভাষার উৎপত্তি
নিয়ে যেসব বিতণ্ডা হয়েছে, সেগুলো হয়েছে নিতান্তই কোরআনিক শিক্ষা অগ্রাহ্য করার কারণে। এ বিষয়ে কোরআন তো
বহু আগেই মীমাংসা করে দিয়েছে যে, “এবং তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন, তারপর সে-সকল ফিরিশতাদের
সম্মুখে পেশ করলেন এবং বললেন, ‘এই সমুদয়ের নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।”
“তারা (ফিরিশতারা) বলল, ‘আপনি মহান পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের তো অন্য
কোন জ্ঞানই নেই। নিশ্চয় আপনি মহা প্রজ্ঞাময়।” (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩১-৩২)

কাজেই ভাষা এর ইতিহাস মানব ইতিহাসের সমসাময়িক:

ভাষাজ্ঞান নিয়েই মানুষের জন্ম হয়েছে, এটা কোরআনের বক্তব্য। এ বক্তব্য অকাট্য, সুনির্দিষ্ট ও শাশ্বত। সুতরাং আদি
মানব আদম আ. ভাষাজ্ঞান লাভ করেছেন মহান আল্লাহর কাছ থেকে। অতঃপর বংশপরম্পরায় তাঁর সন্তানদের মধ্যে
ভাষার বিকাশ হতে থাকে। সে হিসেবে বলা যায়, একসময় পৃথিবীর মানুষ অভিন্ন ভাষায় কথা বলত। তখন ভাষা ছিল মাত্র
একটি। কালক্রমে মানুষের চিন্তা ও রঙের বৈচিত্র্যের মতো ভাষাবৈচিত্র্যের উদ্ভব হয়। সেই উদ্ভাবনী ক্ষমতাও মহান আল্লাহ
দান করেছেন। ভাষাবৈচিত্র্য মহান আল্লাহর অসীম কুদরতের নিদর্শন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন আছে।’
(সুরা : রুম, আয়াত : ২২)

ভাষার জরিপ প্রকাশকারী সংস্থা অ্যাথনোলোগের সর্বশেষ তথ্য মতে, পৃথিবীতে মোট সাত হাজার নিরান্নব্বইটি ভাষা
বর্তমানে চলমান। ভাষার শুরুটা কীভাবে হয়েছে, কীভাবে এতগুলো ভাষার জন্ম হয়েছে, কীভাবে ভাষার ক্রমবিকাশ ঘটেছে,
এ নিয়ে ভাষাবিজ্ঞানীদের বিরোধের অন্ত নেই। বহু আগ থেকেই এ বিরোধ চলে আসছে। প্রত্যেকে নিজ নিজ চিন্তা, দর্শন
ও বিশ্বাসের আলোকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। চার্লস ডারউইন বলেছেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ভাষার উৎপত্তি
হয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শব্দের ইঙ্গিত, প্রাণীদের আওয়াজ ও মানুষের স্বভাবগত উচ্চারিত ধ্বনির অনুসরণ ও সংশোধন
করে।’ সূত্র–The Descent of Man, and Selection in Relation to Sex, 2 vols. London : Murray, p. 56.

ভাষাবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে ভাষা এর উৎপত্তি নিয়ে প্রধান দুটি তত্ত্ব সুবিদিত:

এক. অবিচ্ছিন্নতাতত্ত্ব বা Continuity theories. সেটি হল, ‘ভাষার বিষয়টি এত জটিল যে তার চূড়ান্ত প্রকৃতি বিষয়ে কল্পনা
করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এটি পূর্বপুরুষদের থেকে পরম্পরাগতভাবে চলে আসছে।’

দুই. বিচ্ছিন্নতাতত্ত্ব বা Discontinuity theories. এ তত্ত্ব আগেরটির বিপরীত। অর্থাৎ ‘ভাষা এমন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত যে, মানুষ
ছাড়া অন্য কারো মধ্যে ভাষার ব্যবহার পাওয়া যায় না। মানবীয় বিবর্তনপ্রক্রিয়ার কোনো একসময়ে একবারেই হঠাৎ
ভাষার প্রকাশ ও বিকাশ ঘটেছে।’ এমন ধারণা নৃবিজ্ঞানীদেরও। নৃবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভাষার উৎপত্তির ঘটনা
ইতিহাসে একবারই ঘটেছিল, একাধিকবার নয়। বিশ্বের সব জায়গায় প্রচলিত মানব ভাষাগুলোর মধ্যে গাঠনিক সাদৃশ্য
এই অনুমানের ভিত্তি।

বহু শতাব্দী ধরে লেখালেখি হচ্ছে, কিন্তু ভাষার পরিবর্তনশীলতার জন্য প্রাচীন ভাষাগুলোর উৎসের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য নেই বললেই চলে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে মনে করা হতো, প্রাকৃতিক ধ্বনি থেকে ভাষা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এর
যথার্থ কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। এবং এ থেকে যে তত্ত্বগুলো তৈরি করা হয়েছিল, তা-ও ছিল মনগড়া ও হাস্যকর। বলা
হয়ে থাকে, সর্বপ্রথম প্রাণী ও পাখির আওয়াজ থেকে ধ্বনি তৈরি হয়েছে। এ তত্ত্বের নাম ‘ওউ-ভৌ’ (wow-Bow) তত্ত্ব। এ
তত্ত্বের প্রবক্তা ছিলেন জার্মান লেখক ও দার্শনিক Johann Gottfried Herder (জুহান গটপ্রেড হার্ডার)

★কারো কারো মতে, মানুষের আনন্দ, বেদনা ও আবেগ অনুসৃত ধ্বনি থেকে ভাষার জন্ম। এটা হলো ‘পুঃ পুঃ’
(Phoo-phoo) তত্ত্ব।

★মুইলরের মতে, বস্তুর প্রাকৃতিক বুদ্বুদ বা আওয়াজ থেকে পাওয়া ধ্বনি থেকে ভাষার জন্ম। এটা ‘ডিঙ-ডঙ’ (Ding-dong)
তত্ত্ব। এ ছাড়া রয়েছে ‘ইউ হে হু’ (Yo-he-ho) তত্ত্ব। সেটি হলো, মানুষের যৌথ কায়িক কসরতের পরিণতিতে ভাষার উদ্ভব হয়েছে। কায়িক প্রচেষ্টার সমন্বয় সাধন করার সময় যে আওয়াজ বের হয়, তা থেকে ভাষার জন্ম। সূত্র–The Origin of Language. pp. 7-41.

বিংশশতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদ নোয়াম চমস্কি এ সম্পর্কে একটি অভিমত দিয়েছেন। তাঁর মতে, ‘ভাষা কোনো যান্ত্রিক
প্রক্রিয়া নয়। ভাষা মানুষের সৃজনী চেতনার সঙ্গে যুক্ত।’

ইন্দো-ইউরোপীয় আদি ভাষা থেকে সব ভাষার উৎপত্তি:

অনেক ভাষাবিজ্ঞানী এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে ইন্দো-ইউরোপীয় আদি ভাষা থেকে সব ভাষার উৎপত্তি। খ্রিস্টপূর্ব
৪৫০০ থেকে ৩৫০০ অব্দের মাঝামাঝি সময়ে এ ভাষার জন্ম হয়। তবে তা অকাট্যভাবে প্রমাণিত নয়। ভাষার উৎপত্তি
বিষয়ে এত জটিলতা থাকার কারণেই ১৮৬৬ সালে প্যারিসের ভাষাতাত্ত্বিক সমিতি Linguistic Society of Paris ভাষার উৎসসংক্রান্ত যেকোনো গবেষণাপত্র পাঠে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আজও বেশির ভাগ ভাষাবিজ্ঞানী ভাষার উৎস সম্পর্কে কথা বলতে তেমন আগ্রহী নন, কেননা তাদের মতে ভাষার উৎস নিয়ে যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত এতটাই কল্পনাপ্রসূত যে এগুলোকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া সম্ভব নয়। মানবসভ্যতার ইতিহাসে আকার-ইঙ্গিতের নির্বাক অথবা প্রাক-ভাষা থেকে অন্তত একবার মৌখিক ভাষার জন্ম হয়। এমন ধারণা ব্যাপকভাবে-প্রচলিত। কিন্তু এর বেশি কিছু
জানা যায় না। বরং বলা হয়ে থাকে, বৈজ্ঞানিক গবেষণা যেসব জায়গায় অক্ষমতা প্রকাশ করেছে, ভাষার উৎপত্তিবিষয়ক গবেষণা তেমনই একটি স্পর্শকাতর জায়গা। সূত্র—H. Christiansen, Language evolution. Oxford University Press.
pp. 77-93

তবে চিকিৎসা ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁদের মতে, শিশুর ভাষার বিকাশ শুরু হয় মাতৃগর্ভ থেকেই। তখন
থেকেই সে শব্দের প্রতি সচেতন হয়। এ সময় উচ্চারণ করতে না পারলেও মা-বাবার কণ্ঠস্বর শুনতে পায় ও বুঝতে চেষ্টা
করে এবং শব্দভাণ্ডারে শব্দ-সঞ্চয় করতে থাকে। তাদের সপক্ষে দলিল হল, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের
গর্ভ থেকে এমনভাবে বের করেছেন যে, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদের দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও হৃদয়, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। (নাহল-আয়াত : ৭৮)

আল্লাহ মানবজাতিকে জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষ পরস্পর ভাববিনিময় করতে পারে।
তারা পার্থিব প্রয়োজন পূরণের উত্তম পন্থা আবিষ্কার করতে পারে, আল্লাহর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি, ন্যায়-অন্যায় বোধের জ্ঞানও অর্জন করতে পারে। মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর এ যোগ্যতা নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই (আল্লাহ) মানুষকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে।’ (রাহমান-আয়াত : ৪) ভাব প্রকাশের মৌখিক পদ্ধতি ছাড়াও রয়েছে লিখিত পদ্ধতি। সে পদ্ধতিও আল্লাহর শেখানো। আল্লাহ-বলেন, ‘পড়ো, তোমার প্রভু মহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।’ (আলাক-আয়াত : ৩-৪) “তথ্য সূত্র–”ভাষা যেভাবে জন্ম নিয়েছে” মাওলানা কাসেম।

লেখক:- মুহাম্মদুল্লাহ আহনাফ, সম্পাদক: ফিলহাল প্রকাশন।