অন্যান্যবার বিশ্বকাপে দর্শকদের জন্য সেভাবে বিধিনিষেধ না থাকলেও এবারের
বিশ্বকাপে বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছে কাতার সরকার। যেমন নিষিদ্ধ হয়েছে
মদ বিক্রি, তেমনি নিষিদ্ধ হয়েছে মহিলাদের খোলামেলা পোশাক পরিধান। নির্দেশ
অমান্য করলেও জেলে যেতে হতে পারে বিদেশী দর্শকদের। বিধিনিষেদের তালিকায়
আরও বেশ কিছু নির্দেশিকা কার্যকর করেছে কাতার। এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে শুরু
হয়ে গেছে বিতর্কের ঝড়। কি সেই বিধিনিষেধ? তা জেনে নেওয়া যাক….
বিধিনিষেধগুলির তালিকার মধ্যে প্রথমত, দেশের জনপ্রিয় স্থানগুলির ফটোগ্রাফি এবং ভিডিয়োগ্রাফির জন্য সংবাদমাধ্যমগুলিকে অনুমতি নিতে হবে কাতার সরকারের। অনুমতি ছাড়া ছবি তোলা দণ্ডনীয় অপরাধ। মিডিয়া কভারেজের ক্ষেত্রেও
বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। মধ্য-প্রাচ্যের দেশটিতে বিশ্বকাপ চলাকালীন
স্থানীয়দের বাড়িতে সাক্ষাৎকার নেওয়া চলবে না। পরিচর্যা শ্রমিকদের থাকার জায়গাগুলিতে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ। বিধিনিষেধের তালিকা
এখানেই শেষ নয়। সরকারি ভবন, বিশ্ববিদ্যালয়, উপাসনালয় এবং হাসপাতালের
কাছাকাছি বা ভিতরে ফুটেজ নেওয়া যাবে না। কোনও বাড়ির মালিকের সম্মতি
থাকলেও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পত্তির ভিডিয়ো রেকর্ডিং করা যাবে না।
দোহার শুধুমাত্র তিনটি স্থান এই বিধিনিষেধের আওতায় থাকবে না। সেগুলি হল-
কর্নিচে ওয়াটারফ্রন্ট প্রমনেড, দ্য ওয়েস্ট বে এলাকা এবং টাওয়ার এলাকা।
ধূমপান, অ্যালকোহল ও পোশাকের ক্ষেত্রে কড়া বিধিনিষেধের মুখে পড়বেন
ফুটবল-দর্শকরা।
অ্যালকোহলে নিষেধাজ্ঞা:
কাতার বিশ্বকাপে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সকল প্রকার অ্যালকোহল। মাঠে
বসে পান করা যাবে না বিয়ার। অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় নিষিদ্ধ থাকলেও বিশ্বকাপ চলাকালে শর্ত সাপেক্ষে শুধু বিয়ার পানের অনুমতি দেয়া হয়েছিল দর্শকদের। কিন্তু বিশ্বকাপের দুই দিন আগে শুক্রবার সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।
ধূমপানে নিষেধাজ্ঞা: কাতার বিশ্বকাপে দর্শকদের ধূমপানে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি
করেছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। মাঠে তো নয়ই, বাইরে খোলা জায়গাতেও ধূমপান নিষিদ্ধ
করা হয়েছে বিদেশি দর্শকদের।
পোশাকের ক্ষেত্রে কড়া বিধিনিষেধ:
কাতার বিশ্বকাপে নারী দর্শকদের পোশাকের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে দেশটির সরকার। খোলামেলা পোশাক পরলে তৎক্ষণাৎ শাস্তির আওতায় আনা হবে হবে
জানানো হয়েছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে। বিশ্বকাপ দেখতে আসা বিদেশি নারী সমর্থকদের খোলামেলা পোশাক পরতে বারণ করা হয়েছে। তাদের অবশ্যই কাঁধ ও
হাঁটু ঢেকে রাখতে হবে। দর্শকরা নিজ ইচ্ছামতো পোশাক পরলেও সেটি খোলামেলা
হওয়া যাবে না। স্টেডিয়ামে তো বটেই, অন্যান্য দর্শনীয় স্থান ও সরকারি দপ্তরে গেলেও শরীর ঢাকা পোশাক পরতে হবে। এমনকি পোশাকের বিষয়ে নজরদারি করতে স্টেডিয়ামের ভেতর ক্যামেরাও বসানো হয়েছে। পুরুষদের ক্ষেত্রেও রয়েছে বিধিনিষেধ। হাতা কাটা কোনো টি-শার্ট পরতে পারবেন না পুরুষ দর্শকরা। একই সঙ্গে বিতর্কিত কিছুও লেখা যাবে না টি-শার্টে। নিয়ম ভঙ্গকারীকে জেল থেকে শুরু করে প্রায় ২ হাজার ৮০০ ডলার পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে বলে জানিয়ে রেখেছে আয়োজকরা।
চলাফেরার সময় লক্ষ রাখতে হবে যেসব বিষয়:
কাতার বিশ্বকাপ দেখতে আসা দর্শকদের চলাফেরার সময়ও মেনে চলতে হবে কঠোর নিয়মকানুন। স্টেডিয়ামে দর্শকদের থাকতে হবে সংযত। বান্ধবী বা স্ত্রীকে নিয়ে কাতারের রাস্তায় হাত ধরে হাঁটা যাবে ঠিকই, কিন্তু তাকে প্রকাশ্যে জড়িয়ে ধরা বা চুমু খাওয়া যাবে না। আর অন্য কোনো নারীর দিকে করমর্দনের জন্য হাত বাড়ানোর তো প্রশ্নই ওঠে না।
কাতারে সমকামিতা বেআইনি ও এর জন্য শাস্তির বিধান থাকলেও বিশ্বকাপ চলাকালে সমলিঙ্গেরা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাত ধরতে পারবেন। আলিঙ্গন ও চুম্বনেও বাধা নেই।
তবে লোকজনকে দেখানোর উদ্দেশে এ কাজগুলো করা যাবে না।