বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে ইসলামের প্রচার ও প্রসার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিচয় 

শেখ মুজিবুর রহমান সংক্ষিপ্তাকারে শেখ মুজিব বা বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এ শিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানকে
স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। শুরুতে তিনি আওয়ামীলিগের সভাপতি, এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক
স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রয়াস এবং পরবর্তীকালে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের
স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেছনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে
শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ
তাকে বাংলাদেশের  ”জাতির জনক” বা “জাতির পিতা” হিসেবে অভিহিত করা হয়।
এছাড়াও তাকে প্রাচীন  বাঙ্গালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ
বাঙালি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জনসাধারণের কাছে তিনি “শেখ মুজিব” বা
“শেখ সাহেব” নামে এবং তার উপাধি “বঙ্গবন্ধু” হিসেবেই অধিক পরিচিত।
তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন উদার চেতনার অধিকারী একজন
খাঁটি মুসলমান। ১৪৬৩ খ্রিষ্টাব্দে সুদূর ইরাক থেকে তত্কালে বঙ্গদেশের চট্টগ্রামে যে সুফিসাধক ও দরবেশরা ইসলাম প্রচারে এসেছিলেন তাদের অন্যতম ছিলেন শেখ
আউয়াল (রহ)। এই মহান সাধকের তৃতীয় অধস্তন পুরুষ হলেন শেখ বুরহান উদ্দিন (রহ)।বুরহান উদ্দিন (রহ)-এর চতুর্থ অধস্তন পুরুষ হলেন জাতির পিতার শ্রদ্ধেয় পিতা শেখ লুত্ফর রহমান। বাংলাদেশের মহান স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার স্বল্পকালীন শাসনকালে দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ভৌত অবকাঠামোগত পদক্ষেপ যেমন ছিল, তেমনি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয়
অনুভূতি ও মূল্যবোধের কথা চিন্তা করে তিনি ইসলামের প্রচার-প্রসারে বাস্তবভিত্তিক
ও কার্যকরী নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

বঙ্গবন্ধুর আমলে ইসলামের প্রচার ও প্রসার

১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশের স্থাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
এক অধ্যাদেশবলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। তার প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন এখন সরকারি অর্থে পরিচালিত একটি বৃহত্ সংস্থা। এ প্রতিষ্ঠান থেকে
এযাবত্ পবিত্র কোরআনের বাংলা তরজমা, তাফসির, হাদিস গ্রন্থের অনুবাদ, রসুলে
করিম (স)-এর জীবন ও কর্মের ওপর রচিত ও অনূদিত গ্রন্থ, ইসলামের ইতিহাস, ইসলামি আইন ও দর্শন, ইসলামি অর্থনীতি, সমাজনীতি, সাহাবি ও মনীষীগণের জীবনীসহ নানা বিষয়ে প্রায় পাঁচ হাজারের কাছাকাছি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ
মানুষ এ থেকে উপকৃত হচ্ছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪টি জেলায় আর্তমানবতার সেবায় ২৮টি ইসলামিক মিশন ও সাতটি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির মাধ্যমে নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এসব কিছুর পেছনে রয়েছে জাতির পিতার প্রথম অবদান। তিনি এটি প্রতিষ্ঠা না করলে এসব সেবা থেকে আমরা বঞ্চিত থাকতাম।

মাদ্রাসা শিক্ষায় বঙ্গবন্ধুর অবদান

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন করেছিলেন।
এর আগে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড স্বায়ত্তশাসিত ছিল না। তিনিই প্রথম মাদ্রাসা শিক্ষা
বোর্ডকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেন ও এর নাম রাখেন ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড’। বেতার ও টেলিভিশনে তার নির্দেশেই প্রথম কোরআন তেলাওয়াত ও তাফসির সম্প্রচার
শুরু হয়। তাই যখন বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান শুরু ও
সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় তখন আমরা কোরআন তেলাওয়াত শুনতে পাই।
ইসলামে মদ, জুয়া, হাউজি ও অসামাজিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ
স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুই প্রথম আইন করে মদ, জুয়া, হাউজি ও অসামাজিক
কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করে শাস্তির বিধান করেন। বিশ্ব ইজতেমার জন্য টঙ্গীতে সরকারি জায়গা বরাদ্দ, কাকরাইলের মারকাজ মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য জমি বরাদ্দ ও হজ পালনের জন্য সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই করেন।
আরব-ইসরাইল যুদ্ধে আরববিশ্বের পক্ষ অবলম্বন করে বঙ্গবন্ধু আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেন। তিনি ফিলিস্তিনিদের চিকিত্সাসেবায় ২৮ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম ও
ত্রাণও পাঠান। ইসলামের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল বলেই তিনি ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ান। ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে যোগদান ও মুসলিম বিশ্বের
সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তিনিই জোরদার করেন। এভাবে আমরা দেখতে পাই, বঙ্গবন্ধু
তার সাড়ে তিন বছরের সংক্ষিপ্ত শাসনামলে ইসলামের প্রচার-প্রসারে বিপুল অবদান রেখেছেন। আমরা দোয়া করি, ইসলামের এই বিশাল খেদমতের কারণে আল্লাহ তাকে
ও তার পরিবারের সদস্যদের জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন। আমিন!