বাংলাদেশের ৯২ ভাগ মুসলমান ‘নারায়ে তাকবীর’ শব্দের সাথে ব্যাপকভাবে পরিচিত। ইসলামী সভা সমাবেশ ওয়াজ মাহফিল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের
মিছিল-মিটিংয়ে স্লোগানটি প্রায় ব্যবহৃত হয়। ‘নারায়ে তাকবীর’ এর মধ্যে ১ম ‘নারায়ে’
শব্দ উর্দু। এর অর্থ : ধ্বনী বা উচ্চ আওয়াজ। আর দ্বিতীয় ‘তাকবীর’ আরবি শব্দ।
অর্থ : আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব। উর্দু ও আরবি শব্দের সংমিশ্রণে ‘নারায়ে তাকবীর’
অর্থ হলো, ‘তোমরা উচ্চ আওয়াজে আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা দাও।’ এ দেশে তো
এই স্লোগান খুবই প্রাসঙ্গিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ।
‘‘নারায়ে তাকবীর এটা মুসলমানদের ইমানের ধ্বনী। আর এটা কে যারা বিতর্কিত
করতে চায় মনে রাখতে হবে এরা ইসলাম ও মুসলমানের শত্রু, তারা এদেশকে
হিন্দুত্ববাদি রাষ্ট্র বানাতে চায়!!’’
তাকবীর এর আওয়াজ শুনলে শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালায় কারণ সে
তাকবীরের আওয়াজ সহ্য করতে পারে না। তবে কোনো মুসলিম যদি তাকবীর এর আওয়াজ সহ্য করতে পারে না অথবা তাকবীর শুনলে তার চুলকায় ধরে নিতে
হবে এর মধ্যে শয়তানের ডিএনএ আছে।
এদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যখন একক সত্ত্বা হিসেবে আল্লাহর নাম
উচ্চারণ করা হয়, তখন যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর সংকুচিত
হয়ে যায়; আর যখন আল্লাহ ব্যতীত অন্য উপাস্যদের নাম উচ্চারণ করা হয়,
তখন তারা আনন্দে উল্লসিত হয়ে উঠে।” (যুমার: ৪৫)
যেসব সম্প্রদায় আল্লাহ আকবর ধ্বনি নিয়ে আপত্তি তুলে, তারা মুমিন নাকি
কাফের আল্লাহর এই আয়াতই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।’’
তবে হ্যা অন্য ধর্মের লোকেরা এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারে এতে আমার বা কারো
কোনো আপত্তি নেই ।
বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজি গ্রামারে দেখা যায়, নানান ভাষার শব্দের সংমিশ্রণে
বাংলাভাষা সমৃদ্ধি লাভ করেছে। প্রচলিত যেসব শব্দ ব্যবহার করে আমরা বাংলায়
কথা বলি তার অনেক শব্দ বাংলা নয়, বিদেশি। যেমন- আমাদের ব্যবহৃত শব্দ চেয়ার।
এটা বিদেশি শব্দ। চেয়ারের বাংলা শব্দ কেদারা। চেয়ারকে ‘কেদারা’ নাম বললে
কতজন চিনতে পারবেন? দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নামকরণ। ‘আওয়াম’ উর্দু শব্দ, এর অর্থ জনগণ আর ‘লীগ’ শব্দের অর্থ দল।
একসঙ্গে হয়ে আওয়ামী লীগ অর্থ জনগণের দল। কবিতা, সাহিত্যে যত বেশি
ভাষার সংমিশ্রণ ঘটেছে, ততই সাহিত্য সমৃদ্ধি লাভ করেছে।
কোনো এক মহাসমাবেশে একজন বক্তা বক্তৃতায় ‘নারায়ে তাকবীর’ স্লোগান দেন।
ওই স্লোগানে উপস্থিত লাখো জনতা উচ্ছসিতভাবে ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগানের
মাধ্যমে জবাব দেন। এই ‘নারায়ে তাকবীর’ স্লোগান নিয়ে কয়েকজন তথাকথিত
প্রগতিশীল নেতা বলেছেন, ‘ওই স্লোগান বক্তার নিজের ব্যক্তিগত, এটা দলের স্লোগান নয়।’ প্রশ্ন হচ্ছে- ওই স্লোগান নিয়ে এতো বিতর্ক কেন? আমাদের কিছু হলুদ মিডিয়ার
কাজ হল কোথাও ইসলামের গন্ধ খুঁজে পেলে এটাকে রাষ্ট্রবিরোধী স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানপ্রীতি সাজাতে আদাজল খেয়ে লেগে পড়ে।
এ জন্য সমাবেশের ব্যাপকতা প্রচারের বদলে শব্দটির ব্যবহার নিয়ে নেতাদের প্রশ্ন করেন।
তার জবাবে প্রগতিশীল নেতারা জানান, ‘ওটা দলের স্লোগান নয়, ওটা বক্তার ব্যক্তিগত স্লোগান।’ আরেক নেতা বলেছেন, ‘সমাবেশে এই স্লোগান কেউ দেয়নি। একজন
বক্তা তার বাবার স্লোগান দিয়েছেন।’ আরেক নেতা আরো কয়েক হাত এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, ‘বক্তার বাবা ধর্মীয় রাজনীতি করতেন; তিনি তার বাপের স্লোগান দিয়েছেন’। চমৎকার! প্রশ্ন হলো- তাহলে ওই দলের স্লোগান কি?
গণমাধ্যমের যে সাংবাদিক, সমাবেশের বিশালত্বতা তুলে ধরার বদলে একটি শব্দকে ‘হাইলাইট’ করার প্রয়াস পায় তার উদ্দেশ্য কি ওই নেতারা বুঝতে পারেননি?
ওই নেতারা আসলে বুঝতে না পেরেই লাখো জনতার সমাবেশে ‘নারায়ে তাকবীর’
শব্দটির ব্যবহার নিয়ে বিদ্বেষ প্রকাশ করেছেন? নাকি তথাকথিত প্রগতিশীলতার
খাতায় নিজেদের নাম লেখানোর জন্য দাদাদের খুশি করতে চাচ্ছেন?
তথাকথিত প্রগতিশীল নেতারা মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনায় উজ্জীবিত স্লোগান
‘নারায়ে তাকবীর’কে নাকচ করতে চান? তারা কি দিল্লির দাদাদের খুশি করতে এমন
মন্তব্য করেছেন, নাকি দাদাদের এদেশীয় এজেন্টদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন? প্রশ্ন হলো-
যে সমাবেশে নারায়ে তাকবীর স্লোগান দেয়া হয়েছে, সেখানে লাখো মানুষ কি ওই
স্লোগানের প্রতিবাদ করছে? নাকি মানুষ উচ্ছসিত হয়েছেন? খবরের ভিডিও ফুটেজে
দেখা যায়, সমাবেশে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ ওই স্লোগানে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।