দ্বীন প্রচারে বাধা প্রদানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:

দ্বীন প্রচারের কাজে শয়তানের বাধা ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে লেগে আছে মহান
আল্লাহ আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করে জ্বিন-ফিরিশতা সবাইকে নির্দেশ দেন আদমকে
সিজদা  করার জন্য। সবাই নির্দেশ মেনে আদমকে সিজদা করলেও ইবলীস অহংকারবশতঃ আল্লাহর নির্দেশকে অমান্য করে অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হয়  (বাক্বারাহ: ৩৪)। আদমের কারণে যেহেতু ইবলীসের উচ্চ মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়, সেজন্য
সে আদম ও  তাঁর সন্তানদের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে পড়ে। সে মানুষের চিরশত্রুতে  পরিণত হয়। শুরু হয় তার চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র ও মানুষকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার  অপচেষ্টা। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ কুফরীতে লিপ্ত হ’লে সে বলে, ‘আমি তোমার থেকে মুক্ত এবং আমি মহান আল্লাহ্কে ভয় করি’ (হাশর ৫৯/১৬)।
ইবলীসের এই ধোঁকা দান শুরু হয় প্রথম মানব আদম (আঃ)-এর সময় থেকে।
আল্লাহ আদম ও হাওয়াকে সৃষ্টি করে বললেন, ‘তোমরা দু’জনে জান্নাতে বসবাস
কর এবং সেখান থেকে যা খুশি খাও। তবে এই গাছটির নিকটে যেও না। তাহ’লে
তোমরা সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’ (বাক্বারাহ ২/৩৫)। কিন্তু ইবলীস
আদম ও হাওয়াকে সুকৌশলে তাদের প্ররোচিত করতে লাগল ঐ নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার জন্য। এক পর্যায়ে সে বলল, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে ঐ গাছটির নিকটে যেতে
নিষেধ করেছেন এজন্য যে, তোমরা তাহ’লে ফেরেশতা হয়ে যাবে কিংবা তোমরা
এখানকার চিরস্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যাবে। এরপর সে শপথ করে বলল, আমি অবশ্যই তোমাদের হিতাকাংখী’। এভাবে সে আদম ও হাওয়াকে রাযী করে। তার প্রতারণার
ফাঁদে জড়িয়ে পড়ে তাঁরা উভয়ে নিষিদ্ধ গাছের ফল ভক্ষণ করেন।
আদম (আঃ)-এর এক হাযার বছর পরে পৃথিবীতে আগমন করেন নূহ (আঃ)। আদম
(আঃ)-এর সময় শিরক ছিল না। কিন্তু কালের বিবর্তনে মানব সমাজে শিরকের
অনুপ্রবেশ ঘটে। নূহ (আঃ)-এর সম্প্রদায়ে ওয়াদ, সু‘আ, ইয়াগূছ, ইয়াউক্ব ও নাসর
নামক পাঁচজন সৎকর্মশীল লোক ছিলেন। তাদের মৃত্যুর পর সে সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের অসীলায় পরকালে মুক্তির আশায় তাদের পূজা আরম্ভ করে।
কওমে মূসা তথা বনী ইসরাঈল শয়তানের প্ররোচনায় গো-বৎসের পূজা আরম্ভ করেছিল। মূলতঃ তারা শয়তানের কারণে আল্লাহর দ্বীন এর কাজ পরিহার করে বেদ্বীন বা বদ্বীনি কাজ শুরু করে।

কেবল পূর্ববর্তী উম্মতের ক্ষেত্রেই নয়;

বরং ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেও শয়তানের ঐ প্ররোচনা অব্যাহত আছে। বদর যুদ্ধের সময় ইবলীস সুরাকা বিন মালেক বিন জুশুম মুদলিজীর আকৃতিতে এসে মুশরিকদের
যুদ্ধে অবতীর্ণ হ’তে প্ররোচিত করেছিল এবং সে মুশরিকদের সাথেই ছিল। কিন্তু যখন
সে মুশরিকদের বিরুদ্ধে ফিরিশতাদের ভূমিকা প্রত্যক্ষ করল, তখন সে পিছনে ফিরে পলায়ন করতে থাকল। মুশরিকরা তখন বলতে লাগল যে, সুরাকা কোথায় যাচ্ছ?
তুমি কি বলনি যে, তুমি আমাদের সাহায্য করবে এবং কখনই আমাদের থেকে পৃথক
হবে না? সে বলল, ‘আমি যা দেখছি, তোমরা তা দেখতে পাচ্ছ না। আমি আল্লাহ্কে ভয় করি। তিনি শাস্তি দানে কঠোর’ (আনফাল: ৪৮)। এরপর শয়তান পলায়ন করে সমুদ্রের ভিতরে চলে যেতে থাকে।
এভাবে শয়তানী কারসাজিতে যুগে যুগে মানুষ আল্লাহদ্রোহী কাজে লিপ্ত হয়েছে।
আদ, ছামূদ, কওমে লূত্ব, আহলে মাদইয়ান প্রভৃতি গোত্র আল্লাহদ্রোহী কাজে লিপ্ত
হয়েছে। ফলে আল্লাহ তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছেন এবং বিভিন্ন গযব দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। এ পৃথিবীতে নমরূদ, ফিরাউন, কারূণ, হামান, শাদ্দাদ,
আবরাহা, আবু জাহল প্রভৃতি প্রতাপশালী মুশরিক রাজা-বাদশাহ ও নেতৃবৃন্দ
আল্লাহদ্রোহী কাজ করেছে, আবার মানুষকে সে কাজে উৎসাহিত-উদ্বুদ্ধ করেছে।
কখনো তাদেরকে আল্লাহবিরোধী কাজে বাধ্য করেছে। কিন্তু তাদের কারো পরিণতি
শুভ হয়নি। সবাইকে আল্লাহ ধবংস করে দিয়েছেন। আর তাদের ইতিবৃত্ত পরবর্তীদের
জন্য উপদেশ হিসাবে রেখে দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না বলেই
এ যুগেও সুনামি, ক্যাটরিনা, সিডর, নার্গিস, ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয় দিয়ে আল্লাহ পৃথিবীর মানুষকে সতর্ক-সাবধান করেন। তবে মানুষ খুব কমই উপদেশ
গ্রহণ করে। বিপদ-আপদ দূর হয়ে গেলেই তারা আবার অভ্যাসবশতঃ পূর্বের কাজে ফিরে যায়। এ পর্যায়ে বাধা দান সম্পর্কে আল্লাহ প্রদত্ত হুঁশিয়ারী ও  দ্বীন ইসলামের পথে বাধা দানের পরিণতি সম্পর্কিত আলোচনা উপস্থাপন করব ইনশাআল্লাহ।

দ্বীন প্রচারের কাজে বাধা দানে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা :

দ্বীনে হক্বের কাজ মূলতঃ আল্লাহর নির্দেশ। এ নির্দেশ বাস্তবায়নে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল
(ছাঃ) তাকে বিভিন্নভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি দ্বীনী কাজে বাধা প্রদান করতে
মহান আল্লাহ কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পথে-ঘাটে
একারণে বসে থেকো না যে, আল্লাহ বিশ্বাসীদেরকে হুমকি দিবে, আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করবে এবং তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করবে। স্মরণ কর, যখন তোমরা সংখ্যায় অল্প ছিলে অতঃপর আল্লাহ তোমাদেরকে অধিক করেছেন এবং লক্ষ্য কর কিরূপ অশুভ পরিণতি হয়েছে অনর্থকারীদের’ (আ‘রাফ :৮৬)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদের মত হয়ে
যেয়ো না, যারা বেরিয়েছে নিজেদের অবস্থান থেকে গর্বিতভাবে এবং লোকদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্যে। আর আল্লাহর পথে তারা বাধা দান করত। বস্ততঃ আল্লাহর আয়ত্বে রয়েছে সে সমস্ত বিষয় যা তারা করে’ (আনফাল: ৪৭)।

দ্বীন ইসলামের পথে বাধা সৃষ্টি করা শয়তানী কাজ :

দ্বীন ইসলামের পথে বাধা, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা মূলতঃ শয়তানী কাজ। মানব সৃষ্টির
সূচনালগ্ন থেকে শয়তান এ কাজ করে আসছে। প্রথম মানব ও প্রথম নবী আদম (আঃ) থেকে অদ্যাবধি শয়তানের এ কাজ অব্যাহত আছে। শয়তানের সাথে সাথে কিছু
মানুষও দ্বীনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আল্লাহ বলেন, ‘শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার
মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং
আল্লাহর স্মরণ ও ছালাত থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব তোমরা এখনও কি
নিবৃত্ত হবে’? (মায়েদাহ: ৯১)।
আল্লাহর পথে বাধা দান ইহুদী-নাছারাদের কাজ :
আল্লাহর দ্বীনে বাধা দেওয়া ইহুদী-নাছারাদের কাজ। তারা একদিকে নবী-রাসূলগণকে অস্বীকার করতো, অপরদিকে কেউ কেউ আল্লাহর দ্বীনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি
করতো। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, হে কিতাবধারীগণ! কেন তোমরা আল্লাহর পথে ঈমানদারদেরকে বাধা দান কর, তোমরা তাদের দ্বীনের মধ্যে বক্রতা অনুপ্রবেশ
করানোর পন্থা অনুসন্ধান কর, অথচ তোমরা এ পথের সত্যতা প্রত্যক্ষ করছ। বস্ততঃ আল্লাহ তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অনবগত নন’ (আলে-ইমরান: ৯৯)।
আল্লাহর দ্বীন থেকে দূরে সরে যাওয়া মুনাফিক্বী :
মুনাফিকদের অন্যতম আচরণ হচ্ছে বাহ্যিক দিকে এক রকম অন্তরে ভিন্ন। তারা
প্রকাশ্যে আল্লাহর পথে থাকার অভিনয় করলেও প্রকৃত পক্ষে দ্বীন থেকে অনেক দূরে থাকে। আল্লাহপাক বলেন, ‘আর যখন বলা হবে, আল্লাহর নির্দেশের দিকে এসো, যা তিনি রাসূলের প্রতি নাযিল করেছেন, তখন আপনি মুনাফিকদের দেখবেন, তারা আপনার
কাছ থেকেও সম্পূর্ণভাবে সরে যাচ্ছে’ (নিসা ৪/৬১)।
দ্বীন এর পথে বাধা দান করলে বহু কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হ’তে হয় :
ইহুদীরা আল্লাহর দ্বীনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করত। ফলে তাদের জন্য অনেক কল্যাণকর বস্ত্ত হারাম করা হয়, যা পূর্বে তাদের জন্য হালাল ছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘বস্ততঃ ইহুদীদের জন্য আমি হারাম করে দিয়েছি বহু পূত-পবিত্র বস্ত্ত, যা তাদের
জন্য হালাল ছিল, তাদের পাপের কারণে এবং আল্লাহর পথে অধিক পরিমাণে বাধা
দানের দরুন’ (নিসা ৪/১৬০)। অনুরূপভাবে এখনও কেউ আল্লাহর দ্বীনে বাধা দিলে
সেও কল্যাণকর বহু জিনিস থেকে বঞ্চিত হবে।

দ্বীনের পথে বাধা দান করলে পথভ্রষ্ট হয় :

দ্বীনের কাজে বাধা দান করা বিভ্রান্তিতে নিপতিত হওয়ার কারণ। ধর্মের কাজে যারা
বাধা দেয় তারা পথভ্রষ্ট হয়, সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হয়। মহান আল্লাহ বলেন,
‘যারা কুফরী অবলম্বন করেছে এবং আল্লাহর পথে বাধার সৃষ্টি করেছে, তারা সুদূর
বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে’ (নিসা: ১৬৭)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ‘যারা
পরকালের চাইতে পার্থিব জীবনকে পসন্দ করে, আল্লাহর পথে বাধা দান করে এবং
তাতে বক্রতা অন্বেষণ করে, তারা পথ ভুলে দূরে পড়ে আছে’ (ইবরাহীম ১৪/৩)।
আল্লাহর দ্বীনের পথে বাধা দানপাপ :
দ্বীনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা এক জঘন্যতম কাজ। এর জন্য পরকালে রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা তাদের শপথকে ঢাল করে রেখেছে, অতঃপর তারা আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বাধা প্রদান করে। অতএব তাদের জন্য
রয়েছে অপমানজনক শাস্তি’ (মুজাদালাহ: ১৬)।
আল্লাহর দ্বীনের পথে বাধা দেওয়া অত্যন্ত জঘন্য পাপ। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
‘সম্মানিত মাস সম্পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে যে, তাতে যুদ্ধ করা কেমন?
বলে দাও, এতে যুদ্ধ করা ভীষণ বড় পাপ। আর আল্লাহর পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা
এবং কুফরী করা, মসজিদে হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদের বহিষ্কার করা আল্লাহর নিকট তার চেয়েও বড় পাপ। আর ধর্মের ব্যাপারে ফেতনা সৃষ্টি করা নর হত্যা অপেক্ষাও মহাপাপ। বস্ত্ততঃ তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদেরকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে, যদি তা সম্ভব হয়। তোমাদের মধ্যে যারা নিজের দ্বীন থেকে ফিরে দাঁড়াবে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর তারাই হ’ল জাহান্নামী। তাতে তারা চিরকাল বসবাস করবে’ (বাক্বারাহ ২/২১৭)। এ আয়াতে দ্বীনের
পথে বাধা দেওয়াকে বড় পাপ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

আল্লাহর দ্বীন প্রচারের পথে বাধা দান কুফরী:

আল্লাহর দ্বীনের পথে বাধা দান করা কুফরীর নামান্তর। কেননা আল্লাহ আমাদের স্রষ্টা।
এ পৃথিবীতে তাঁর বিধানই চলবে। কিন্তু কেউ যদি তাঁর বিধান কায়েমের পথে বাধা দেয় তাহ’লে সেটা হবে তাঁর কাজে বাধা দানের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহর কাজে বাধা দেওয়া তাঁকে অস্বীকার করার শামিল। এজন্য যারা আল্লাহর পথে বাধা দেয় তাদেরকে তিনি
কাফের বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে বাধা দিত এবং তাতে বক্রতা অন্বেষণ করত। তারা পরকালের বিষয়েও অবিশ্বাসী ছিল’ (আ‘রাফ: ৪৫)।
দ্বীনের পথে বাধা দান ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ :
দ্বীনের কাজে বাধা দান করা অমার্জনীয় অপরাধ। এ অপরাধ করে কেউ তওবা না
করলে আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা কাফের এবং
আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে, অতঃপর কাফের অবস্থায় মারা যায়,
আল্লাহ কখনোই তাদের ক্ষমা করবেন না’ (মুহাম্মাদ: ৩৪)।
দ্বীনের পথে বাধা দান জঘন্য অপরাধ। এর জন্য আল্লাহ পরকালে কঠিন শাস্তির
ব্যবস্থা রেখেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদের মধ্যে এমন কি বিষয় রয়েছে,
যার ফলে আল্লাহ তাদের উপর আযাব দান করবেন না। অথচ তারা মসজিদে হারামে
যেতে বাধা দান করে, অথচ তাদের সে অধিকার নেই। এর অধিকার তো তাদেরই রয়েছে যারা পরহেযগার। কিন্তু তাদের অধিকাংশই সে বিষয়ে অবহিত নয়’ (আনফাল: ৩৫)।
তিনি আরো বলেন, ‘যারা কাফের হয়েছে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করেছে, আমি তাদেরকে আযাবের পর আযাব বাড়িয়ে দেব। কারণ তারা অশান্তি সৃষ্টি করত’ (নাহল: ৮৮)।
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তোমরা স্বীয় কসম সমূহকে পারস্পরিক কলহদ্বন্দ্বের বাহানা
করো না। তাহ’লে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পা ফসকে যাবে এবং তোমরা শাস্তির
স্বাদ আস্বাদন করবে, এ কারণে যে, তোমরা আমার পথে বাধা দান করেছ এবং তোমাদের কঠোর শাস্তি হবে’ (নাহল: ৯৪)।

দ্বীনের পথে বাধা দানকারী ব্যর্থ ও পরাজিত হবে :

দ্বীনের পথে বাধা দানকারীরা যতই কৌশল অবলম্বন করুক, তারা যতই প্রভাবশালী
হোক, এক সময় ব্যর্থতার গ্লানি তাদের বরণ করতে হবে। পরাজয়ের মালা তাদের গলায় পরতেই হবে। এটা মহান আল্লাহর ঘোষণা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যারা কুফরী করে
এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে, আল্লাহ তাদের সকল কর্ম ব্যর্থ করে দেন’ (মুহাম্মাদ: ১)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা কাফের এবং আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে
রাখে এবং নিজেদের জন্য সৎ পথ ব্যক্ত হওয়ার পর রাসূলের বিরোধিতা করে, তারা
আল্লাহর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না এবং তিনি ব্যর্থ করে দিবেন তাদের কর্মসমূহকে’ (মুহাম্মাদ: ৩২)।

দ্বীনের কাজে বাধা দানে সম্পদ ব্যয় আফসোসের কারণ হবে:

পৃথিবীর পূর্ববর্তী উম্মতের ন্যায় বর্তমানেও এমন অনেক লোক আছে, যারা ব্যক্তিস্বার্থে
দলীয় স্বার্থে কিংবা নিজেদের বশবর্তী হয়ে দ্বীনের কাজে বাধা দানের জন্য অকাতরে
অর্থ ব্যয় করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে দ্বীনের কাজে বাধা দানের জন্য তাদের সকল প্রচেষ্টা
ব্যর্থ হবে।এজন্য তাদের ব্যয়িত অর্থের জন্যও তারা আফসোস করবে। আল্লাহ আরো বলেন, ‘নিঃসন্দেহে যেসব লোক কাফের, তারা ব্যয় করে নিজেদের ধন-সম্পদ,
যাতে করে বাধা দান করতে পারে আল্লাহর পথে। বস্ততঃ এখন তারা আরো ব্যয় করবে। তারপর তাই তাদের জন্য আক্ষেপের কারণ হবে এবং শেষ পর্যন্ত তারা হেরে যাবে।
আর যারা কাফের, তাদেরকে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে’ (আনফাল: ৩৬)।
পরিশেষে বলতে পারি যে, পৃথিবীতে ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থে কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাছিলের পথে বাধা মনে করে যারা আল্লাহর দ্বীনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে, তারা সাময়িকভাবে সফল হ’লেও মূলতঃ ব্যর্থতা তাদেরকে বরণ করতেই হবে। তারা ইহকালে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ক্ষমার অযোগ্য এ পাপাচারের কারণে পরকালেও তারা মুক্তি পাবে না; বরং জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। এজন্য এখন থেকে সাবধান হওয়া আবশ্যক যে, আমাদের কোন কথা বা কাজে কিংবা কোন আচরণে দ্বীনের প্রচার-প্রসারে যেন বিঘ্ন না ঘটে। পাশাপাশি হক্বের প্রচার-প্রসারে আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দ্বীনে হক্বের সেবায় আত্মনিয়োগ করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!