দারুল উলুম দেওবন্দ এর প্রথম ছাত্র ও উস্তাদ :
দারুল উলুম দেওবন্দের গর্বিত প্রথম উস্তাদ ছিলেন হজরত মাওলানা মোল্লা মাহমুদ
রহ. আর প্রথম ছাত্র ছিলেন, মৌলভি মাহমুদ রহ.। যিনি পরবর্তীতে শায়খুল হিন্দ
নামে পুরো বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন। মোল্লা মাহমুদ সর্বপ্রথম ছবক দান করেন
সর্বপ্রথম ছাত্র মৌলভী মাহমুদকে। কী চমৎকার কাকতালীয় ব্যাপার! ছাত্রও মাহমুদ, উস্তাদও মাহমুদ। আরবী মাহমুদ শব্দের অর্থ প্রশংসিত। আল্লাহপাক মানুষের মধ্যে
এ প্রতিষ্ঠানের প্রশংসা বদ্ধমূল করে দিয়েছেন।
দারুল উলুম দেওবন্দের নামকরণঃ প্রতিষ্ঠাকালীন মাদরাসার বিশেষ কোনো নাম
নির্ধারণ করা হয়নি দারুল উলুম দেওবন্দের৷ লোকমূখে তখন মাদরাসাটি দেওবন্দ
আরবী মাদরাসা নামে পরিচিত হয়ে এটিই মাদরাসার নাম হয়ে যায়। ১২৯৬ হিজরিতে তৎকালীন সদরুল মুদাররিসীন হযরত মাওলানা ইয়াকুব নানুতুবী রহ.-এর প্রস্তাবে মাদরাসার নামকরণ করা হয় “দারুল উলুম দেওবন্দ”।
দেওবন্দ এর শিক্ষা কারিকুলামঃ
দেওবন্দে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা পর্যন্ত চালু আছে দরসে নেজমীর আদলেই৷ দীনিয়াত বিভাগ নামে শুরু হয় প্রাইমারী শিক্ষা ব্যবস্থা৷ যেখানে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদেরকে উর্দু হিন্দী ইংরেজীর প্রথমিক শিক্ষার সাথে সাথে গনিত
ও সামাজিক বিষয়ে এবং বিজ্ঞানের বুনিয়াদী বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়৷ এই দীনিয়াত বিভাগ মোট পাঁচ বছরের কোর্স৷ পঞ্চম বছর ফারসি ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়৷ যেহেতু উর্দু ভাষার পান্ডিত্য ও দক্ষতা অর্জনের জন্য ফারসি ভাষা জানা জরুরী৷
তবে দেওবন্দের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোর্স হলো ফাযেল কোর্স৷ যা আট
বছরের সমাপনী কোর্স৷ এই কোর্স সমাপ্তকারীদের আলেম বলা হয়৷
এ ফাযেল কোর্সের প্রথম চার বছরকে ছানুভী তথা মাধ্যামিক বিভাগ বলা হয়৷ যেখানে আরবী নাহু ছরফ, আরবী ইনশা, মান্তেক তথা তর্কশাস্ত্র, কোরআন তরজমা এবং
ইসলামী ইতিহাস সহ দীনের মৌলিক বিষয়ে তা’লীম দেয়া হয়৷
আর শেষ চার বছরে তাফসীর, উসূলে তাফসীর, ফিকাহ, উসূলে ফিকাহ, এবং হাদীস ও উসূলে হাদীসের পাঠ দান করা হয়৷ এবং ইলুমল বালাগাত ও ফাসাহাতের তালীমও
দেয়া হয়৷ শেষ বছর তথা দাওরার বছর সিহাহ সিত্তাহ সহ মোয়াত্তাইন ও তহাবী এবং শামায়েলে তিরমিজীকে রেওয়াতান ও দেরায়াতান পাঠদান করা হয়৷
দারুল উলুম দেওবন্দ এর সনদের মানঃ
দারুল উলুম দেওবন্দের এই ফাযেল কোর্সকে বর্তমান সময়ের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি, হায়দারাবাদ, মাওলানা আযাদ ন্যাশনাল উর্দু ইউনিভার্সিটি, হামদর্দ ইউনিভার্সিটি নিউ দিল্লী এবং লৌখনো ইউনিভার্সিটিসহ অনেক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বি-এ (Bachelor Of Arts) এর সমমানে মূল্যায়ণ করে থাকে৷ কেননা
দারুল উলুম দেওবন্দে কোনো সরকারী স্বীকৃতি নেই৷ তাই উক্ত ভার্সিটিগুলো দারুল
উলুম দেওবন্দকে বিশ্বের ইলমী মারকাজ হওয়ার সুবাধে ব্যাক্তিগতভাবে বিএ-এর
মানে মূল্যায়ণ করে৷
এই ফাযেল কোর্সের পরে তাকমীলাত নামে বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক ডিগ্রী অর্জনের জন্য উচ্চতর গবেষনা কেন্দ্র হিসাবে বহু বিভাগ রয়েছে৷ যেখানে তাফসীর, হাদীস, ফিকাহ
এবং ইসলামী জ্ঞান ও আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ এবং ফেরাকে বাতেলা ও বিভিন্ন
ধর্মীয় বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে৷
এছাড়া, ইসলামী জ্ঞান ব্যাতিত আরো বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা ব্যাবস্থা রয়েছে৷ যেমন
ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষা কম্পিউটার এ্যপ্লিকেশন এবং সাংবাদিকতা ইত্যাদি
যেখানে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে শিক্ষার্থীরা ফায়েদা অর্জন করে থাকে৷
তাছাড়া দারুল উলুম দেওবন্দে রয়েছে তাজবীদ এবং নাজেরা ও হিফজুল কোরআন
বিভাগ৷ সাথে আছে কোরআন তাজবীদ হাফস্ রেওয়াতে উর্দু ও আরবী এবং কেরাতে
ছাবয়া’ ও আশারা৷