দাজ্জালঃ দাজ্জাল আরবি দাজলুন থেকে ব্যুৎপন্ন। ‘দাজলুন’ অর্থ আচ্ছাদিত করা। দাজ্জাল অর্থ অনেক আচ্ছাদনকারী। দাজ্জালকে এজন্য দাজ্জাল বলা হয় যে, সে নিজের মিথ্যা ও প্রতারণার মাধ্যমে সত্যকে ঢেকে ফেলবে। প্রতারণার মাধ্যমে
সে বড় বড় লোকদেরকে বিভ্রান্ত করে ফেলবে। তার ধোঁকা ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে মানুষ দেখতে না দেখতে ঈমান থেকে
হাত ধুয়ে বসবে । দাজ্জালের গুণবাচক নাম মাসিহ। অপরদিকে নবী ঈসা (আ.)-এরও গুণবাচক নাম মাসিহ। তবে উভয়ের মধ্যে ব্যবধান রয়েছে। মাসিহ শব্দটি দাজ্জালের সঙ্গে যুক্ত করে আনা হয়। বলা হয়-মাসিহুদ-দাজ্জাল। আর ঈসা (আ.)-এর
সঙ্গে যুক্ত করে আনা হয় না। বলা হয়-মাসিহ আলাইহিস সালাম কিংবা ঈসা আল-মাসিহ। আবার অর্থগত দিক দিয়েও
উভয়ের মধ্যে ব্যবধান রয়েছে। যেমন-দাজ্জালের চোখ সমতলবিশিষ্ট হওয়ার দরুণ মাসিহ বলা হয়, আর ঈসা (আ.)- কে
মাসিহ বলার কারণ হলো, তিনি জন্মগত অন্ধকে হাত বুলিয়ে দিলে দৃষ্টিশক্তি এসে যেত। তাছাড়া দাজ্জাল কল্যাণ মুছে দেবে,
আর ঈসা (আ.) অকল্যাণ মুছে দেবেন । (উমদাতুল কারি : ১০/২৪২-২৪৩)।
দাজ্জাল এমন একজন পথভ্রান্ত ব্যক্তি শেষ জমানায় যার আবির্ভাব হবে। তার আবির্ভাব শেষ জমানায় অনেক বড়
বিপর্যয়ের কারণ হবে। সব নবী-রাসুলরা তার ফেতনা থেকে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। কেননা অনেক আশ্চর্যজনক
কিছু বিষয় আল্লাহ তার দ্বারা ঘটাবেন এবং সে তার সময়কালে মানুষের আকিদায় বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটিয়ে ছাড়বে।
দাজ্জাল কিয়ামতের বড় আলামত:
তার ফেতনা থেকে মহানবী (সা.)ও খুব সতর্ক করেছেন। নাওয়াস ইবনে সামআন বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) একদিন সকাল
বেলা দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। আলোচনার শুরুতে তিনি তার ব্যক্তিত্বকে তুচ্ছ করে তুলে ধরেন। পরে বেশ
গুরুত্ব সহকারে পেশ করেন। যাতে তাকে আমরা ওই খেজুর বাগানের নির্দিষ্ট এলাকায় (যেখানে তার আবাসস্থল) কল্পনা
করতে লাগলাম। এরপর যখন সন্ধায় আমরা তার কাছে গেলাম তখন তিনি আমাদের মনোভাব বুঝতে পেরে জিজ্ঞস
করলেন, তোমাদের ব্যাপার কী? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, সকাল বেলা আপনি দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা
করলেন। প্রথমে তাকে খুব তুচ্ছ করে তুলে ধরেছেন, যাতে আমরা তাকে খেজুর বাগানের ওই নির্দিষ্ট এলাকায় কল্পনা
করতে থাকি (যেখানে সে খুব জাঁকজমক সহকারে অবস্থান করছে)। তখন তিনি বললেন, আমি তো তোমাদের জন্য
দাজ্জাল ছাড়া অন্য বিষয়কে অধিকতর আতঙ্কের কারণ মনে করছি। যদি আমি তোমাদের মাঝে বেঁচে থাকাকালীন সে আত্মপ্রকাশ করে তবে আমি তোমাদের সামনে তার সঙ্গে বাকযুদ্ধে অবতীর্ণ হব, আর যদি সে আত্মপ্রকাশ করে আর
আমি তোমাদের মধ্যে না থাকি, তবে প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তি নিজেই তর্কে লিপ্ত হবে এবং আমার পরে মহান আল্লাহই
প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির একমাত্র তত্ত্বাবধানকারী।’ (মুসলিম : ২৯৭৩)।
দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়ঃ
নবী (সা.) দাজ্জালের ফিতনা হতে রেহাই পাওয়ার উপায়ও বলে দিয়েছেন। তিনি উম্মাতকে একটি সুস্পষ্ট দ্বীনের উপর
রেখে গেছেন। সকল প্রকার কল্যাণের পথ প্রদর্শন করেছেন এবং সকল অকল্যাণের পথ হতে সতর্ক করেছেন। উম্মাতের
উপরে যেহেতু দাজ্জালের ফিতনা সবচেয়ে বড় তাই তিনি দাজ্জালের ফিতনা থেকে কঠোরভাবে সাবধান করেছেন এবং দাজ্জালের লক্ষণগুলো সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। যাতে মুমিন বান্দাদের জন্য এই প্রতারক, ধোকাবাজ ও মিথ্যুক
দাজ্জালকে চিনতে কোনরূপ অসুবিধা না হয়। ইমাম সাফারায়েনী (রঃ) বলেনঃ প্রতিটি বিজ্ঞ মুসলিমের উচিৎ তার ছেলে
মেয়ে, স্ত্রী-পরিবার এবং সকল নারী-পুরুষদের জন্য দাজ্জালের হাদীছগুলো বর্ণনা করা। বিশেষ করে ফিতনায় পরিপূর্ণ
আমাদের বর্তমান যামানায়। দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়গুলো নিম্নরূপঃ-
১) ইসলামকে সঠিকভাবে আঁকড়িয়ে ধরাঃ এবং ঈমানের উপর অটল থাকাই দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। যে মুমিন আল্লাহর নাম ও তাঁর অতুলনীয় সুমহান গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে সে অতি সহজেই দাজ্জালকে
চিনতে পারবে। সে দেখতে পাবে দাজ্জাল খায় পান করে। মু’মিনের আকীদা এই যে, আল্লাহ তা’আলা পানাহার ও অন্যান্য মানবীয় দোষ-গুণ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। যে পানাহারের প্রতি মুখাপেক্ষী সে কখনও আল্লাহ বা রব্ব হতে পারেনা। দাজ্জাল
হবে অন্ধ। আল্লাহ এরূপ দোষ-ত্রুটির অনেক উর্ধে। আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অধিকারী মুমিনগণের মনে
প্রশ্ন জাগবে যে নিজের দোষ থেকে মুক্ত হতে পারেনা সে কিভাবে প্রভু হতে পারে? মু’মিনের আকীদা এই যে, আল্লাহকে
দুনীয়ার জীবনে দেখা সম্ভব নয়। অথচ মিথ্যুক দাজ্জালকে মুমিন কাফের সবাই দুনিয়াতে দেখতে পাবে।
২) দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করাঃ আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “আমি নবী (সা.)কে নামাযের ভিতরে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাইতে শুনেছি । তিনি নামাযের শেষ তাশাহুদে বলতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ عَذَابِ النَّارِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আযাব, জাহান্নামের আযাব, জীবন-মরণের ফিতনা এবং মিথ্যুক দাজ্জালের
ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই ।
দাজ্জাল থেকে দূরে থাকাঃ
৩) দাজ্জাল থেকে দূরে থাকাঃ নবী (সা.) দাজ্জালের নিকট যেতে নিষেধ করেছেন। কারণ সে এমন একজন লোকের কাছে আসবে, যে নিজেকে ঈমানদার মনে করবে। দাজ্জালের কাজ-কর্ম দেখে সে বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হয়ে যাবে।
মুমিনের জন্য উত্তম হলো সম্ভব হলে সে সময়ে মদীনা অথবা মক্কায় বসবাস করার চেষ্টা করা। কারণ দাজ্জাল তথায় প্রবেশ করতে পারবেনা। নবী (সা.) বলেনঃ যে ব্যক্তি দাজ্জাল বের হওয়ার কথা শুনবে সে যেন তার কাছে না যায়। আল্লাহর শপথ!
এমন একজন লোক দাজ্জালের নিকটে যাবে যে নিজেকে ঈমানদার মনে করবে। অতঃপর সে দাজ্জালের সাথে প্রেরিত সন্দেহময় জিনিষগুলো ও তার কাজ-কর্ম দেখে বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হয়ে তার অনুসারী হয়ে যাবে। হে আল্লাহ!
আমরা আপনার কাছে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।
৪) সূরা কাহাফ পাঠ করাঃ নবী (সা.) দাজ্জালের ফিতনার সম্মুখিন হলে মুমিনদেরকে সূরা কাহাফ মুখস্থ করতে এবং তা
পাঠ করতে আদেশ করেছেন। তিনি বলেনঃ “যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের
ফিতনা হতে হেফাযতে থাকবে ।
সূরা কাহাফ পাঠের নির্দেশ সম্ভবতঃ এজন্য হতে পারে যে, এই সূরায় আল্লাহ তা’আলা বিস্ময়কর বড় বড় কয়েকটি ঘটনা
বর্ণনা করেছেন। মুমিন ব্যক্তি এগুলো গভীরভাবে পাঠ করলে দাজ্জালের বিস্ময়কর ঘটনা দেখে কিছুতেই বিচলিত হবেনা।
এতে সে হতাশ হয়ে বিভ্রান্তিতেও পড়বেনা।
দাজ্জাল কি মানুষ না জিন? এ বিষয়ে গবেষকদের মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, সে মানুষ। আবার কেউ কেউ বলেছেন, সে হবে শয়তানের অন্তর্ভুক্ত। তবে প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত হলো সে মানুষই হবে। নওয়াস ইবনে সামআন (রা.) থেকে
বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে আছে, ‘সে (দাজ্জাল) হবে একজন যুবক, মাথার চুল কোঁকড়ান, ফোলা চোখবিশিষ্ট। আমি তাকে [ইহুদি] আবদুল উজ্জা ইবনে কাতানের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। সুতরাং যে কেউ তাকে পাবে, সে যেন তার সম্মুখে সুরা কাহাফের শুরুর আয়াতগুলো পাঠ করে।’ (মুসলিম : ২৯৩৬)
দাজ্জালের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য:
তার পরিচয়ে বহু হাদিস বিবৃত হয়েছে। মহানবী (সা.) তার পরিচয় প্রদান করে মানুষকে সতর্ক করেছেন যেন কেউ তার
খপ্পরে না পড়ে যায়। সে হবে কানা। হোজাইফা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘দাজ্জালের বাম চক্ষু কানা, মাথার
কেশ হবে অত্যধিক।’ (মুসলিম : ২৯৩৪)। তার দুচোখের মধ্যখানে কাফের লেখা থাকবে। হাদিসে এসেছে, ‘তার চোখের
ওপর নখ পরিমাণ মোটা চামড়া থাকবে, চক্ষুদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে লেখা থাকবে কাফের। প্রত্যেক শিক্ষিত ও অশিক্ষিত
মোমিন তা পড়তে পারবে।’ (মুসলিম : ২৯৩৪)। সে নিজেকে মিথ্যা খোদা দাবি করবে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)
থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালার পরিচিতি তোমাদের কাছে গোপন নয়। নিশ্চয় আল্লাহ কানা নন,
কিন্তু দাজ্জালের ডান চোখ কানা হবে। তার এই চোখটি হবে ফোলা আঙ্গুরের মতো।’ (বোখারি : ৩৪৩৯)। কোনো কোনো
বর্ণনায় বাম চোখ কানা হওয়ার কথাও রয়েছে যা উপরে বর্ণিত হয়েছে।
দাজ্জালের ফেতনা:
দাজ্জালের ফেতনা হবে অনেক বড় ফেতনা যা মুসলমানদের গ্রাস করবে। আল্লাহ তার হাতে এমন কিছু আশ্চর্যজনক
ক্ষমতা দান করবেন যার দ্বারা মানুষ পরীক্ষায় পড়ে যাবে। ইমরান ইবনে হোসাইন (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে
বলতে শুনেছি, আদম (আ.)-এর সৃষ্টি হতে কেয়ামত কায়েম হওয়া পর্যন্ত দাজ্জালের ফেতনা অপেক্ষা কোনো ফেতনা
বৃহত্তর নয়।’ (মুসলিম : ২৯৪৬)। উম্মে শারিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘লোকেরা দাজ্জালের [ফেতনা]
হতে পালাবে, এমনকি পাহাড়-পর্বতসমূহে গিয়ে আশ্রয় নেবে।’ (মুসলিম : ২৯৪৫)।
সে জমিনে চলার সময় তাকে সত্যায়ন করার জন্য মানুষকে আহ্বান করবে। কতক মানুষ তাকে অস্বীকার করবে, তাকে
কোনো রকম বিশ্বাস করবে না। ফলে তাদের ভূমি বিরান হয়ে যাবে। খেত-ফসল সব পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। কোনো কিছু
]এতে ফলবে না। অপর আরেক দল মানুষের কাছে অতিক্রম করলে তারা তাকে বিশ্বাস করবে ও অনুসরণ করবে। ফলে
তাদের ভূমিতে ফল-ফসলে ভরে যাবে। তাদের গবাদি-পশুর সংখ্যা বেড়ে যাবে। এভাবে মানুষ তার ফেতনায় পড়ে যাবে।
সে জমিনের খনিজ পদার্থ সব বের করে ফেলবে। হাদিসে আছে, ‘যে তার অবাধ্যতা করবে তাকে আগুনে ফেলে দেবে
অথচ সেটি প্রকৃতপক্ষে জান্নাত। যে তাকে অনুসরণ করবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে যা প্রকৃতপক্ষে জাহান্নাম।
আল্লাহ পানাহ! (মুসলিম : ২৯৩৮)।
দাজ্জাল এর অনুসারী:
তার অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদি, অনারব ও তুর্কীদের মধ্য হতে। আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)
বলেন, ‘দাজ্জাল পূর্বাঞ্চলের খোরাসান এলাকা হতে বের হবে, এমন এক সম্প্রদায় তার আনুগত্য গ্রহণ করবে যাদের
চেহারা হবে ঢালের ন্যায় চেপ্টা।’ (তিরমিজি : ২২৩৭)। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার
উম্মতের ৭০ হাজার লোক দাজ্জালের অনুসরণ করবে, তাদের মাথায় থাকবে সবুজ বর্ণের নেকাব।’ (শরহুস সুন্নাহ
লিলবাগাবি : ৪২৬৫)।
দাজ্জাল বের হওয়ার স্থান:
নবী (সা.) বলেন, দাজ্জাল পূর্বাঞ্চলের খোরাসান এলাকা থেকে বের হবে।’ (তিরমিজি : ২১৬৩)। খোরাসান মধ্য এশিয়ার
একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল। অতীতে ইরানের পূবদিকে খোরাসান নামের একটি বিশাল-বিস্তৃত প্রদেশ ছিল। যার সীমান্ত
‘মা-ওয়ারাউন নাহার’ এর সঙ্গে যুক্ত হতো। খোরাসানের সবচেয়ে বড় নগরীর নাম ছিল বালখ (বাখতার)। এর বাইরে সারাখস, হেরাত, মার্ভ, তুস ও নিশাপুর নামের জনপদগুলোও বিখ্যাত। বর্তমানে খোরাসান নামে যেই পূর্বাঞ্চলী প্রদেশ রয়েছে, তা
সীমিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত। (সীরাত বিশ্বকোষ, মাকতাবাতুল আযহার অনুদিত : ১/৫৯৭)।
একটি হাদিসে খোরাসানের প্রসিদ্ধ এলাকা ইসফাহানকে দাজ্জাল আবির্ভাবের স্থান হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। আনাস
(রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘দাজ্জাল ইসফাহানের ইহুদিয়া থেকে বের হবে।’ (মুসলিম : ৫২২৮)। ইসফাহান বর্তমান ইরানের অন্যতম জনবহুল একটি নগরী যা জাগ্রোস পর্বতমালার পাদদেশে জায়েন্দে নদীর তীরে অবস্থিত।
এমন কোনো এলাকা থাকবে না যেখানে সে প্রবেশ করবে না, তবে মক্কা ও মদিনায় গন্তব্য হলেও সে সেখানে প্রবেশ
করতে পারবে না। ফেরেশতারা শহর দুটিকে হেফাজত করে রাখবে। আবু বাকরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন,
‘মদিনায় কানা দাজ্জালের ভীতি কখনও পৌঁছবে না। সে সময় মদিনার সাতটি দরজা থাকবে এবং প্রত্যেক দরজায় দুজন
করে ফেরেশতা [প্রহরায়] থাকবেন।’ (বোখারি : ১৮৭৯)।
দাজ্জালের অবস্থানকাল :
দাজ্জাল বের হয়ে নিহত হওয়া পর্যন্ত ৪০ দিন অবস্থান করবে। আসমা বিনতে ইয়াজিদ ইবনে সাকান (রা.) থেকে বর্ণিত,
রাসুল (সা.) বলেন, ‘দাজ্জাল ৪০ দিন জমিনে অবস্থান করবে। এক বছর হবে মাসের মতো, মাস হবে সপ্তাহের মতো এবং
সপ্তাহ হবে একদিনের মতো। আর দিন হবে খেজুরের একটি শুকনা ডাল আগুনে জ্বলে নিঃশেষ হওয়ার মতো।’ (শরহুস
সুন্নাহ লিলবাগাভি : ৪২৬৪)।
দাজ্জাল নিহত হওয়ার স্থান:
দাজ্জালের শেষ সময়ে ঈসা (আ.) পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। তার হাতেই হবে দাজ্জালের সলিল সমাধি। নবী (সা.)
বলেন, ‘ঈসা ইবনে মারিয়াম দামেশক শহরের পূর্বে অবস্থিত সাদা মিনারের উপরে অবতরণ করবেন। অতঃপর তাকে
বাবে লুদে পেয়ে হত্যা করবেন।’ (আবু দাউদ : ৪১২১)। লুদ হচ্ছে বাইতুল মাকদিসের পশ্চিমে উপকূলীয় নগরী তেল
আবিব ইয়াফু থেকে রামাল্লাহগামী রাজপথের ধারে ফিলিস্তিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নগরী। বর্তমানে ইসরাঈল সেখানে
একটি বিশাল বিমানবন্দর বানিয়ে রেখেছে। (সীরাত বিশ্বকোষ, মাকতাবাতুল আযহার অনুদিত : ১/৫৪১)।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, মাসিহে দাজ্জাল পূর্বদিক হতে আগমন করে মদিনায় প্রবেশ করতে
চাইবে। এমনকি সে উহুদ পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। অতঃপর ফেরেশতারা তার চেহারা [গতি] সিরিয়ার দিকে ফিরিয়ে দেবেন এবং সেখানেই সে [ঈসা (আ.)-এর হাতে] ধ্বংস হবে।’ (মুসলিম ১৩৮০)। আল্লাহ আমাদের সবাইকে
দাজ্জালের ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।