তওবা কী? এটি আরবি শব্দ, আভিধানিক অর্থ প্রত্যাবর্তন করা অর্থাৎ যাবতীয় পাপের কাজ থেকে পূণ্যপথে ফিরে আসা। শরিয়তের পরিভাষায় তওবা বলা হয়, পাপকর্মকে পাপ বলে বিশ্বাস করে আল্লাহ তায়ালার ভয়ে তা পরিহার করে চলা
এবং অতীতের স্বয়ংকৃত গুনাহের ওপর অনুতপ্ত হয়ে সামর্থ থাকা সত্ত্বেও ভবিষ্যতে সেই গুনাহের কাজ না করার দৃঢ়
প্রতিজ্ঞা করা এবং পরিত্যাক্ত পুণ্যবান কাজের যথাসাধ্য ক্ষতিপূরণ ও সংশোধনের চেষ্টা চালানো। সব নবী-রাসুল ও
অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুসন্তান ছাড়া আর কেউ নিষ্পাপ নয়। মানুষ পাপকাজে লিপ্ত হওয়া স্বাভাবিক। পাপ-পুণ্যের সংমিশ্রণেই
মানুষ। মানুষ কেবল নেক আমল করবে অথবা গুনাহের সমুদ্রে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থাকবে, তা সংগত নয়। শুধু নেক
আমল ও কল্যাণকর্মে আত্মনিবেদিত হওয়া ফেরেশতাদের বৈশিষ্ট্য।আর শুধু যাবতীয় পাপাচারে নিমজ্জিত থাকা
শয়তানের স্বভাব।
তওবার গুরুত্ব ও ফজিলত :
আল্লাহ তায়ালা সুরা নূরের ৩১ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, “মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে ‘তাওবা’ করো,
যাতে তোমরা সফলকাম হও। ” আল্লাহ পাক আগে থেকেই জ্ঞাত যে, তাঁর বান্দারা বিভিন্ন সময়ে নানা প্রকার গুনাহের
কাজে জড়িয়ে পড়বে, তাই তিনি এর থেকে পরিত্রাণের উপকরণ হিসেবে রেখেছেন ‘তওবা’কে। বিশুদ্ধ তওবার মাধ্যমেই
মানুষ যাবতীয় গুনাহ থেকে পূত-পবিত্র হতে পারে।
রাসুল (সা.) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও সর্বদা ‘তওবা’ করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল
(সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং দৈনিক সত্তরের অধিকবার আল্লাহর কাছে
তাওবা করি (বুখারি, ১১/৬৩০৭)। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর দরবারে
‘তওবা’ করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো; আমিও প্রতিদিন ১০০ বার তওবা করি’ (বুখারি, ২৭০২)। তওবা করার
ফলে বান্দার সমূহ পাপকে আল্লাহ তায়ালা পুণ্যে পরিণত করে দেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস
স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের পাপকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দেন’ (সুরা ফুরকান, আয়াত-৭০)।
তওবা গৃহীত হওয়ার শর্তাবলি :
আল্লাহ রাব্বুল আঃ সুরা তাহরিমের ৮ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ! তোমরা তাওবা করো- বিশুদ্ধ তওবা।
মূলত যে তাওবা নিম্নের শর্তগুলো সাপেক্ষে হবে সেটি খাঁটি তওবা হিসেবে বিবেচ্য হবে।
* তওবা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা। * সম্পূর্ণরূপে পাপকর্ম ত্যাগ করা।
* অতীতে স্বয়ংকৃত পাপের ওপর অনুতপ্ত হয়ে বর্তমানে তা বর্জন করে ভবিষ্যতে অনুরূপ পাপাচারে লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা।
* আন্তরিক ও মৌখিক তওবার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবে পুণ্য কাজের মাধ্যমে তা প্রকাশ করা।
* তওবাকারী স্বীয় তওবার ওপর অবিচল থাকা। * নির্ধারিত সময়ের ভেতরে তওবা করা।
* কৃত পাপকর্ম যদি কোনো মানুষের সঙ্গে সংঘটিত হয়, তাহলে তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া; সঙ্গে সঙ্গে তার
কোনো প্রকার অধিকার হরণ করে থাকলে যথাসাধ্য ফেরত দেওয়ার পূর্ণ চেষ্টা চালানো। (তাফসিরে মা’আরেফুল
কোরআন : খণ্ড ৭, পৃ. ৫০৬)।
তওবা করার সঠিক সময় :
সুরা নিসার ১৭ ও ১৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘অবশ্যই তাদের তাওবা কবুল করেন যারা ভুলবশত
মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তাওবা করে; এরাই হলো সেই সব লোক, যাদের আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোনো ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন তাদের
কারো মাথার ওপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে আমি তওবা করছি। ‘ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘পশ্চিম দিগন্তে সূর্য উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বান্দার তওবা কবুল করা হবে। ‘ (মুসলিম, ২৭০৩)।
প্রকৃত তওবাকারীর জন্য চারটি পুরস্কার
* তওবাকারীকে স্বয়ংকৃত গুনাহ থেকে এমনভাবে পবিত্র করা হয় যেন তার কোনো গুনাহই নেই।
* আল্লাহ তাবারাকা ওতায়ালার সন্তুষ্টি লাভ হয়। * আল্লাহ তায়ালা যাবতীয় পাপাচার থেকে হেফাজত করেন।
* চিরবিদায়ের সময়ে তাকে সব ধরনের ভয়ভীতি থেকে নিরাপদ রাখেন। আল্লাহ তায়ালা সুরা হা-মীম-সিজদার ৩০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘মৃত্যুকালে তাদের কাছে ফেরেশতারা অবতীর্ণ হবে, (বলবে) তোমরা ভয় পেয়ো না, চিন্তিত হয়ো না, জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো, যার প্রতিজ্ঞা তোমাদের দেওয়া হয়েছে।