গীবত করার পরিণাম: গীবত কবীরা গুনাহ্র অন্তর্ভুক্ত। পরনিন্দার পাপ সুদ অপেক্ষা বড়;
বরং হাদিসে গীবতকে বড় সুদ বলা হয়েছে (সহীহ আত্ তারগীব) রাসূলুল্লাহ্ (সা:)-এর
নিকটে আয়েশা (রা) ছাফিইয়া (রা:)-এর সমালোচনা করতে গিয়ে বলেনঃ হে আল্লাহ্র
রাসূল (সা:)! আপনার জন্য ছাফিইয়ার এরকম এরকম হওয়াই যথেষ্ট। এর দ্বারা তিনি ছাফিইয়ার বেঁটে সাইজ বুঝাতে চেয়েছিলেন। এতদশ্রবণে নাবী কারীম (সা:) বললেনঃ
“হে আয়েশা! তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সাগরের পানির সঙ্গে মিশানো যেত তবে
তার রং তা বদলে দিত।”
(১) গীবত জাহান্নামে শাস্তি ভোগের কারণ: রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেনঃ “মিরাজ কালে আমি
এমন কিছু লোকের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখগুলি পিতলের তৈরি,
তারা তা দিয়ে তাদের মুখমণ্ডল ও বক্ষগুলিকে ছিঁড়ছিল। আমি জিজ্ঞাস করলাম, এরা
কারা হে জিবরীল? তিনি বললেনঃ “এরা তারাই যারা মানুষের গোশত খেত এবং তাদের ইজ্জত-আবরু বিনষ্ট করত।” অর্থাত তারা পরনিন্দাকারী অন্যের সমালোচনাকারী।
পরনিন্দা মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার শামিল:
(২) গীবত মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার শামিল: আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ “তোমাদের
কেউ যেন কারো গীবত না করে, তোমাদের কেউ কি চায় যে, সে তার মৃত ভাইয়ের
গোশত ভক্ষণ করবে? তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই করে থাকো।” [সূরা হুজুরাত:১২]
অত্র আয়াত প্রমাণ করে যে, গীবত করা মৃত ব্যক্তির গোশত ভক্ষণ করার শামিল।
আনাস ইবন মালেক (রা:) বলেনঃ আরবরা সফরে বের হলে একে অপরের খেদমত করত। আবু বকর ও ওমর (রা:)-এর সাথে একজন খাদেম ছিল। (একবার সফর অবস্থায়) ঘুম থেকে তারা উভয়ে জাগ্রত হয়ে দেখেন যে, তাদের খাদেম তাদের জন্য খানা প্রস্তুত করেনি, তখন তারা পরস্পরকে বললেন, দেখ এই ব্যক্তিটি বাড়ির ঘুমের ন্যায় ঘুমাচ্ছে। অতঃপর তারা তাকে জাগিয়ে দিয়ে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সা:)-এর কাছে যাও এবং বল আবু বকর ও ওমর আপনাকে সালাম দিয়েছেন এবং আপনার কাছে তরকারী চেয়ে পাঠিয়েছেন (নাস্তা খাওয়ার জন্য)। লোকটি রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর নিকটে গেলে তিনি বললেনঃ তারাতো তরকারী খেয়েছে, তখন তারা বিস্মিত হলেন এবং নাবী কারীম (সা:)-এর নিকটে এসে বললেনঃ হে আল্লাহ্র রাসূল (সা:)! আমরা আপনার নিকটে এসে লোক পাঠালাম তরকারী তলব করে, অথচ আপনি বলেছেন, আমরা তরকারী খেয়েছি? তখন নাবী কারীম (সা:) বললেনঃ তোমরা তোমাদের ভাইয়ের (খাদেমের) গোশত খেয়েছ। কসম ঐ সত্তার! যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই আমি ঐ খাদেমটির গোশত তোমাদের সামনের দাঁতের ফাঁক দিয়ে দেখতে পাচ্ছি। তারা বললেনঃ [ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সা:)] আপনি আমাদের জন্য ক্ষমা তলব করুন। আলবানী হাদিসটিকে সহিহ্ বলেছেন।
গীবত কবরে শাস্তি ভোগের অন্যতম কারণ:
আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা:) বলেনঃ “(একদা) আমরা নাবী কারীম (সা:)-এর নিকটে
ছিলাম। এমতাবস্থায় একজন ব্যক্তি উঠে চলে গেল। তার প্রস্থানের পর একজন তার সমালোচনা করল। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা:) তাকে বললেনঃ তোমার দাঁত খিলাল কর।
লোকটি বললঃ কি কারণে দাঁত খিলাল করব? আমিতো কোন গোশত ভক্ষণ করিনি।
তখন তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই তুমি তোমার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করেছ অর্থাৎ
‘গীবত’ করেছ।”
গীবত কবরে শাস্তি ভোগের অন্যতম কারণ: একদা রাসূলুল্লাহ্ (সা:) দু’টি কবরের পাশ
দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি থমকে দাঁড়ালেন এবং বললেনঃ “এই দুই কবরবাসীকে
শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদেরকে তেমন বড় কোন অপরাধে শাস্তি দেওয়া হচ্ছেনা
(যা পালন করা তাদের পক্ষে কষ্টকর ছিল)। এদের একজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, চুগলখোরী করার কারণে এবং অন্যজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে পেশাবের ব্যাপারে অসতর্কতার কারনে।” অপর হাদিসে চুগলখোরীর পরিবর্তে গীবত করার কথা
উল্লেখ রয়েছে।
গীবত জেনার চেয়েও মারাত্মক
রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! গীবত কি
জেনার চেয়েও মারাত্মক?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। কারণ, কোনো ব্যক্তি জেনার
পর তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন। কিন্তু গিবতকারীকে যার গিবত করা হয়েছে,
তিনি মাফ না করলে আল্লাহ মাফ করবেন না।’ (মুসলিম)। হাদিস শরিফে বর্ণিত
আছে, গিবতের কাফফারা হলো তুমি যার গিবত করেছ, তার জন্য মাগফিরাতের
দোয়া করবে। তুমি এভাবে বলবে, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার ও তার গুনাহ মাফ করে
দাও।’ (বায়হাকি)। সংশোধনের জন্য বলতে চাইলে যার বিষয় শুধু তাকেই বলা যাবে, অন্যকে নয়। সমালোচনাকারীকে বিচারের দিনে নিজের নেক আমল দিয়ে এর
বিনিময় পরিশোধ করতে হবে। যার সমালোচনা করেছে, তার গুনাহ নিয়ে সমালোচনাকারীকে জাহান্নামে যেতে হবে।