গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণে ইসলামের নির্দেশ।সমালোচনা একটা বিশাল গুন।যদি সেটাতে ক্রোধ না থাকে। সমালোচনা ই শুদ্ধপথ দেখায়। যদি তা সমালোচিতকে আঘাত(কষ্ট) না করে।
বিশ্লেষণ : (গঠনমূলক সমালোচনা) গঠন মানে তৈরি করা, উপযোগী করে তোলা। আর মূলক মানে
শুরুতে, প্রথমে।সারকথা উপকারী কোনো কথা বা বিষয়েরঅনুকূলে নিজেকে
প্রথমেই উপযোগী করে তোলা।তবে সমালোচিত ব্যক্তিকে অবশ্যই গঠনমূলক সমালোচনা
সহ্য করার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে।
কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর ইতিবাচক কথোপকথন যা ওই
বিষয়ের বিশদ তথ্য উপস্থাপন করে এবং বিষয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে
মত প্রকাশ করে তাকে আলোচনা বলে।
পক্ষান্তরে সমালোচনা বলা হয়, কোনো বিষয়ের ওপর চুলচেরা বিশ্লেষণকে।
বিশেষ করে ওই বিষয়টি সম্পন্ন হলে তার ইতিবাচক দিক এবং সম্পন্ন না হলে
এর নেতিবাচক দিক অথবা ওই বিষয়টি সম্পন্ন না হলে দেশ জাতি ও
সমাজের কি উপকার হবে আর সম্পন্ন হলে কি ক্ষতি হবে এবং এর প্রভাব কি হবে
এ নিয়ে করা বিশ্লেষণ ও মন্তব্যকে।
অনেক ক্ষেত্রে সমালোচনা সবচেয়ে বিনয়ী মানুষটির জন্যও মোকাবেলা করা
কঠিন হয়ে যায়, যদি এটা হয় অন্যায়ভাবে কিংবা ভুল পদ্ধতিতে।
অথবা সংশোধনের জন্য নয় শুধু সমসমালোচনা করার জন্য সমালোচনা করা
তাহলে এটা অনেকাংশেই উপকারের বদলে অপকার বয়ে আনে।
গভীর সম্পর্কে বিষাক্ত ক্ষত সৃষ্টি করে, ঘনিষ্ঠতম বন্ধুদের মধ্যে
বিভেদ তৈরি করে।ইসলাম অবশ্য ঢালাও সমালোচনাকে সমর্থন করে না।
তবে গঠনমূলক সমালোচনা কে সবিনয়ে গ্রহণ করে সেখান থেকে ইতিবাচক কিছু গ্রহণের কথা বলে।
ইসলাম সমাজ-সংস্কৃতি, গণমানুষের স্বার্থ,
সার্বজনীন নৈতিকতা ও জীবন পদ্ধতির সঙ্গে সম্পর্কিত জনগুরুত্বপূর্ণ
স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজনে সমালোচনার স্বাধীনতাকে বৈধতা দিয়েছে।
কাউকে তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সত্য কথা বলা,
সমালোচনা করা, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ
করাকে ধর্মীয় কর্তব্যের অংশ বলে গণ্য করা হয়েছে। সত্যের প্রতি আহ্বান,
সৎ লোকদের উৎসাহ প্রদান, দুষ্কৃতিকারীদের নিন্দা করাকে ঈমানদারীর
লক্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ঈমানদার ব্যক্তির নীরবতা যদি সমাজের
ক্ষতির কারণ হয়, তাহলে এ জন্য আল্লাহর কাছে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।
এ কারণে ঈমানদার ব্যক্তির ওপর অপরিহার্য দায়িত্ব হয়ে পড়ে,
সত্যের পক্ষে কথা বলার জন্য এগিয়ে আসা এবং এক্ষেত্রে কোনো রক্ত চক্ষুর হুমকি
বা কোনো পরিণতির পরোয়া না করে সত্যকে সবার ওপরে স্থান দেওয়া।
আর সমালোচনা থেকে ইতিবাচক কিছু গ্রহণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা প্রমাণ দেওয়ায় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন অনুপম দৃষ্টান্ত।
যেমন, একদিন এক ইহুদি ধর্মযাজক যায়েদ ইবনে সানাহ মহানবী (সা.)-এর কাছে এলেন তার থেকে নেওয়া ঋণের অর্থ আদায়ের জন্য। তিনি নবী করিম (সা.)-
এর কাঁধ বরাবর তার জামা ধরে খুব জোরে টান দিলেন এবং কর্কশভাবে বললেন, তুমি আব্দুল মুত্তালিবের বংশধর; আমার পাওনা পরিশোধে টালবাহানা করছো। হজরত উমর (রা.) এতে ক্রুদ্ধ হয়ে ওই যাজককে মন্দ বলে সমালোচনা করলেন।
তখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মুচকি হেসে হজরত উমর (রা.)-কে বললেন,
এই মানুষটি তোমার কাছ থেকে উত্তম আচরণ লাভের যোগ্য।
তোমার উচিত ছিলো- অবিলম্বে ঋণ পরিশোধের জন্য আমাকে বলা এবং
নম্রভাবে দাবি পেশ করার জন্য তাকে বলা।
বর্ণিত ঘটনায় নবী করিম (সা.) কোনো আত্মরক্ষামূলক মনোভাব দেখাননি।
ইস্যুটিকে ব্যক্তিগত ব্যাপার হতে না দিয়ে নবী করিম (সা.) সমালোচনার
যুক্তিসম্মত মূল্যায়ন এবং যথাসময়ে ঋণ শোধের দায় নিশ্চিত করতে সক্ষম
হয়েছিলেন। এটাই ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ।
বস্তুত হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যেভাবে সমালোচনা মোকাবেলা করতেন,
তার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা সুন্নত। নবী করিম (সা.) শিখিয়েছেন, সব সময়
অন্যের সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা, সব পরিস্থিতিতে বিনয়ী থাকা
এবং শুধু আল্লাহর স্বার্থে ক্রোধ প্রকাশ করা।
যারা সমালোচক, তাদের বুঝতে পারাও গুরুত্বপূর্ণ বৈকি। সমালোচনার বক্তব্যকে
এর বহিঃপ্রকাশের মাধ্যম থেকে আলাদা করার জন্যই তা দরকার। এমন বিষয় মূল্যায়ন করতে হবে যুক্তির ভিত্তিতে। যদি সমালোচনা ন্যায্য হয়ে থাকে,
সমালোচিত ব্যক্তি এর সুরাহা করতে যথাসাধ্য প্রয়াসী হওয়া কর্তব্য।
অন্তত শান্তভাবে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। তখন নিজের
উপলব্ধি প্রকাশ করার সঙ্গে সমালোচকদের উদ্বেগের হেতুও অনুভব করা চাই।
এক কথায়, ইসলাম গঠনমূলক সমালোচনাকে সাদরে গ্রহণের কথা বলে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ প্রশংসাকে খুব ভালোবাসেন এবং যখন প্রশংসা
করা হয় খুশি হন। অপরদিকে সমালোচনাকে মানুষ সহ্য করতে পারে না।
যদিও সেটা সত্য হয়। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।গঠনমূলক সমালোচনা শুনতে হবে
এবং সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবন পরিচালনা করতে হবে।
এটাই ইসলামের নির্দেশ।আল্লাহ আমাদের সঠিক ভাবে বুঝার এবং
আমল করার তৌফিক দান করুন আমীন।