খেলাধূলা নামে শুরু হলো এ কোন খেলা!

সুস্থ, স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবনটাই যেনো বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে এখন খেলা। শুধু ব্যক্তির জীবন নয়; দেশ ও সমাজের এবং জাতি ও মানবজাতিরও জীবন! একসময় বলা হতো খেলাধূলা। কেনো বলা হতো? মাঠে খেলতে গেলে ধূলা ওড়ে এজন্য? কিংবা গায়ে ধূলা লাগে? কিন্তু কেউ কি কল্পনাও করেছিলো কখনো, খেলার ধূলা এবং ধূলিঝড় এভাবে অন্ধকার করে দেবে জীবন? জাতি ও মানবজাতির জীবন! একজন ছাত্র যদি রাত
জাগে পড়ার জন্য নয়, খেলার জন্য! না, খেলার জন্য নয়, শুধু খেলা দেখার জন্য!
তাহলে শিক্ষার আলোতে কীভাবে আলোকিত হতে পারে তার জীবন! জ্ঞানের প্রদীপ নিভিয়ে দিয়ে টিভি-স্ক্রিনের আলো কি উজ্জ্বল করতে পারে কারো ভবিষ্যত?
একজন ছাত্র, হোক সে বিদ্যালয়ের, বিশ্ববিদ্যালয়ের, এমনকি – – – হাঁ,
লজ্জার সঙ্গে বলছি, এমনকি হোক সে মাদরাসার ছাত্র, এখন সে জানতে চায় না
জ্ঞান-বিজ্ঞানেরসর্বশেষ তথ্য! কোনো বিষয়ের উপর প্রকাশিত গ্রন্থের সর্বশেষ তালিকা। এখন সবার আগে সে জানতে চায় খেলার সর্বশেষ খবর এবং দেখে নিতে চায়
পদতালিকার সর্বশেষ অবস্থান! আমি যার দিকে তাকিয়ে আছি, আমার জাতি যার
দিকে তাকিয়ে আছে তাদের দিনরাতের ভাবনা এখন ফিলিস্তীন, বা ইরাক-
আফগানিস্তান নয়! কোথায় হিংস্র হায়েনাদের থাবায় মুসলিম উম্মাহর কত রক্ত
ঝরছে তাদের চিন্তা সে সম্পর্কে নয়। তাদের কৌতুহল শুধু কোন খেলোয়াড়ের কত
ঘাম ঝরছে স্বর্ণপদকের জন্য! হায়, কারা হতে পারতো ‘স্বর্ণজয়ী’, অথচ ছুটছে
স্বর্ণজয়ের পিছনে! আর কারা সন্তুষ্ট শুধু স্বর্ণজয়ের খবর শুনে!

খেলাধূলা নিয়ে গোটা দেশ যখন উত্তাল:

গোটা দেশ যখন মেতে ওঠে শুধু খেলার ধূলো গায়ে মাখার জন্য, তখন সে দেশের
ভবিষ্যত কী হতে পারে? এমন যে বাংলাদেশ, খেলার মাঠেও যার কোনো প্রাপ্তি নেই
একরাশ লজ্জা ছাড়া; ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের সঙ্গে যার নিত্য বাস, যে দেশের সত্যি সত্যি
‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’, খেলাধূলার নামে সে দেশেরও রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে
ঢালা হয় কোটি কোটি টাকা, অথচ বিভিন্ন সেবাকর্ম এবং বহু গবেষণা-প্রকল্প থেমে
থাকে প্রয়োজনীয় টাকার অভাবে! সেই দেশ, সেই জাতি কীভাবে স্বপ্ন দেখতে পারে
উজ্জ্বল ভবিষ্যতের? সারা পৃথিবী এখন শুধু মেতে আছে নয়, বরং মত্ত ও উন্মত্ত হয়ে
আছে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে। যেনো পৃথিবীতে এখন ক্ষুধা নেই, দারিদ্র্য নেই, রোগ-ব্যাধি নেই, শিক্ষার সমস্যা নেই এবং সম্পদের অভাব নেই। তাই তো নির্মম রসিকতা করে।
সম্প্রতি কেউ বলেছেন, ‘মানবজাতির এখন কোনো সমস্যা নেই, তিনশ টুকরো স্বর্ণ ছাড়া।’
এই বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজক দেশের খরচ হচ্ছে হাজার হাজার কোটি ডলার। খেলা চলাকালে দৈনিক খরচ কয়েক শত কোটি ডলার। এছাড়া রয়েছে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর বিপুল ব্যয়।
অথচ পৃথিবীর দেশে দেশে কোটি কোটি বনি আদম চরম দারিদ্র্যের শিকার। তারা যাপন করছে মানেবেতর জীবন। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিত্সা ও শিক্ষা- এসব মৌলিক
মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত পৃথিবীর অন্তত একশ কোটি মানুষ। এই বিপুল অর্থ,
মেধা ও শ্রম খেলাধূলা  এর পিছনে ব্যয় না করে যদি ব্যয় হতো পৃথিবী থেকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করার কাজে এবং মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে, তাহলে মানবতার জন্য কতো কল্যাণকর হতো! আমরা হয়ত পারবো না বিশ্বকে সংশোধন করতে, এমনকি
আপন দেশ ও জাতিকে সাবধান করতে, কিন্তু আমি কি পারি না অন্তত নিজেকে রক্ষা করতে অর্থের, চিন্তার এবং  সময়ের অপচয় থেকে! নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট পরিমাণে
খেলাধূলা র অবশ্যই প্রয়োজন আছে, তবে খেলার ধুলা থেকে তো নিজেকে অবশ্যই
রক্ষা করতে হবে, যদি সত্যি আমি পেতে চাই আলোর ভুবন এবং আলোকিত জীবন ।
হে কিশোর! হে তরুণ! ‘আগামীকাল’ বলো না, ‘গতকাল’ আমাকে সতর্ক করা হয়নি।