পৃথিবীর প্রতিটি জিনিস ধ্বংস হওয়ার পূর্বে সেটি দুর্বল হওয়ার আলামতগুলো প্রকাশ পায়। আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীকে ধ্বংস করার পূর্বে কিছু আলামত প্রকাশ করবেন। যাতে পৃথিবীতে বসবাসরত মানুষগুলো সতর্ক হয় এবং পরকালের স্থায়ী জীবনের জন্য পূর্ণ প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে। কিন্তু এমন এক সময় আসবে যেদিন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। সূর্যকে আলোহীন করা হবে। নক্ষত্র রাজি খসে পড়বে। পাহাড়সমূহ উড়তে থাকবে। সমুদ্রগুলিকে অগ্নিময় করা হবে। আকাশকে আবরণমুক্ত করা হবে। সাগরের ঢেউ থেমে যাবে। নদ-নদীর পানি শুকিয়ে যাবে। সেদিন সকলকে নতুন এক জগতে ফিরে যেতে হবে। সেখানে
মানুষের পার্থিব কাজের হিসাব নেয়া হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা সেদিনকে ভয় কর, যেদিন কেউ কারো
কোন উপকারে আসবে না এবং কারো পক্ষে কোন সুফারিশ কবুল করা হবে না। কারো কাছ থেকে বিনিময় নেয়া হবে না
এবং কেউ কোনরূপ সাহায্য পাবে না’ (বাক্বারাহ ২/৪৮)। আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, আর তোমরা
ঐ দিনকে ভয় কর, যেদিন তোমরা সকলে আল্লাহর নিকটে ফিরে যাবে। অতঃপর সেদিন প্রত্যেকে স্ব স্ব কর্মের ফল পুরোপুরি পাবে এবং তাদের প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২৮১)।
আলোচ্য নিবন্ধে ক্বিয়ামতের আলামত সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। কিয়ামত দু’ভাগে বিভক্ত। ব্যক্তির মৃত্যুই তার জন্য ক্বিয়ামত। আরেকটি ক্বিয়ামত যখন ইসরাফীল (আঃ) শিঙ্গায় ফুৎকার দিবেন তখন পুরো বিশ্ব একই সাথে ধ্বংস হয়ে যাবে।
ক্বিয়ামতের আলামত অবহিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা :
এই দিনকে কুরআনে বিভিন্ন নামে উল্লেখ করা হয়েছে। আখেরাত দিবস, বিচার দিবস, মহান দিবস, ক্বিয়ামত দিবস, আবার কোথাও মহাপ্রলয় ইত্যাদি। ক্বিয়ামত দিবস এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস ঈমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুকন। ক্বিয়ামত
দিবসের প্রতি এবং আখেরাতের শাস্তি কিংবা নে‘মতের উপর বিশ্বাসই মানুষকে সকল প্রকার কল্যাণের পথে নিয়ে যায় এবং সকল অন্যায় পথ হতে বিরত রাখে।
১. ক্বিয়ামতের আলামতের প্রতি বিশ্বাস করা ঈমানের পরিএবং আখেরাতের উপর ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
২. দ্বীনের উপরে সুদৃঢ় থাকার উপায় ক্বিয়ামতের আলামত সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে দ্বীনের উপর সুদৃঢ় থাকা যায়।
৩. ক্বিয়ামতের আলামত আল্লাহর ইবাদত ও নেক আমলে উদ্বুদ্ধ করে।
৪. মানুষের সীমিত জ্ঞানের প্রমাণ : ক্বিয়ামতের আলামত শিক্ষা দেয় যে, মানুষের জ্ঞান সীমাবদ্ধ। ক্বিয়ামত কখন ঘটবে
কেউ বলতে পারবে না।
৫. ঈমান বৃদ্ধির কারণ : ক্বিয়ামতের আলামত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ পাওয়া মুমিনের ঈমানকে বৃদ্ধি করবে।
৬. ক্বিয়ামতের আলামত মানুষকে লোভ ত্যাগ করতে ও অল্পে তুষ্ট থাকতে শিখায়।
৭. ক্বিয়ামতের আলামত আমাদের ইহুদী-খৃষ্টানদের সাদৃশ্য পোষণ থেকে দূরে রাখে এবং স্বতন্ত্র ইসলামী জীবন যাপনে
অভ্যস্ত হতে সহায়তা করে।
৮. ক্বিয়ামতের আলামত আমাদের বড়দের থেকে জ্ঞান অর্জন করতে নির্দেশনা দেয়।
৯. ক্বিয়ামতের আলামত লোকদের ভয়ংকর বিপদের সময় আলেমগণের শরণাপন্ন হতে সহায়তা করে।
১০. ক্বিয়ামতের আলামত আমাদেরকে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে, সুন্দর প্রতিবেশী হতে ও সালামের ব্যাপক
প্রচার- প্রসার করতে শিক্ষা দেয়।
১১. মানুষকে আমানতদার হতে শিক্ষা দেয় : ক্বিয়ামতের পূর্বে আমানতদারী উঠে যাবে।
১২. পরিবারকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার শিক্ষা : ক্বিয়ামতের আলামত আমাদের পরিবারকে সঠিকভাবে পরিচালনা
করতে শেখায় এবং স্ত্রী ও সন্তানদের পর্দার ব্যাপারে সতর্ক হতে শেখায়। কারণ নারীদের পর্দা ব্যবস্থা পরিহার করা ক্বিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন।
১২. ফিৎনা-ফাসাদ থেকে দূরে থাকতে শেখায় : ক্বিয়ামতের পূর্বে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে যে, যেখানে সেখানে
ফিৎনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়বে। হত্যাকারী জানবে না কেন সে হত্যা করল। আবার নিহত ব্যক্তিও জানবে না কেন তাকে
হত্যা করা হল।
১৩. দুনিয়ার চাকচিক্যে মেতে উঠতে বাধা দেয় : ক্বিয়ামতের পূর্বে এমন অবস্থা সৃষ্টি হবে যে, লোকেরা বড় বড় দালান-কোঠা নিয়ে প্রতিযোগিতা করবে।
ক্বিয়ামতের আলামত সমূহ
ক্বিয়ামতের আলামত সমূহের মধ্যে কিছু রয়েছে যা ঘটে গেছে। আবার এমন কিছু আলামত রয়েছে যা প্রকাশ পেয়েছে
এবং দিন দিন এর পরিমাণ বাড়ছে। কিছু আলামত রয়েছে, যা এখনও ঘটেনি। সেগুলো ক্বিয়ামতের বড় আলামত হিসাবে প্রকাশিত হবে।
ক্বিয়ামতের ছোট আলামত যেগুলো প্রকাশিত হয়েছে :
১। শেষ নবীর আগমন : নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পৃথিবীতে আগমন ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত। হাদীছে এসেছে,
সাহল ইবনু সা‘দ-সাঈদী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি প্রেরিত হয়েছি এমন সময় যে, আমি
ও ক্বিয়ামত এই দু’টি আঙ্গুলের মত কাছাকাছি। এটা বলে তিনি শাহাদত ও মধ্যমা দু’টি আঙ্গুল মিলিয়ে দেখালেন’। ইমাম
কুরতুবী বলেন, ক্বিয়ামতের প্রথম আলামত নবী করীম (ছাঃ)-এর আগমন। কারণ তিনি শেষ যামানার নবী। আর তিনি
চলে এসেছেন। তাঁর মাঝে ও ক্বিয়ামতের মাঝে কোন নবী নেই’।
২। শেষ নবী (ছাঃ)-এর মৃত্যু : শেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) মৃত্যুবরণ করাও ক্বিয়ামতের একটি আলামত। হাদীছে এসেছে,
আওফ ইবনু মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখ। আমার মৃত্যু, অতঃপর বায়তুল মুক্বাদ্দাস বিজয়, অতঃপর তোমাদের মধ্যে মহামারী ঘটবে, বকরীর পালের মহামারীর মত, সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যক্তিকে একশ’ দীনার দেয়ার পরেও সে অসন্তুষ্ট থাকবে। অতঃপর এমন এক ফিৎনা আসবে
যা আরবের প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করবে। অতঃপর যুদ্ধ বিরতির চুক্তি, যা তোমাদের ও বানী আসফার বা রোমকদের মধ্যে সম্পাদিত হবে। অতঃপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং আশিটি পতাকা উড়িয়ে তোমাদের বিপক্ষে আসবে; প্রত্যেক পতাকার নীচে থাকবে বার হাযার সৈন্য’।
৩। ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত বায়তুল মুক্বাদ্দাস বিজয় :
মুসলমান কর্তৃক বায়তুল মুক্বাদ্দাস তথা জেরুযালেম বিজয় হওয়া ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত, যা ইসলামের দ্বিতীয়
খলীফা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর যুগে ঘটেছিল। যেমন হাদীছে এসেছে, আওফ ইবনে মালেক আল-আশজাঈ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, তাবূক যুদ্ধকালে আমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি একটি চামড়ার তাঁবুর
ভিতরে ছিলেন। আমি তাঁবুর আঙ্গিনায় বসে পড়লাম। রাসূল (ছাঃ) বললেন, হে আওফ! ভেতরে এসো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি সম্পূর্ণ প্রবেশ করব? তিনি বলেন, হ্যাঁ, সম্পূর্ণভাবে এসো। অতঃপর তিনি বললেন, হে আওফ! ক্বিয়ামতের পূর্বেকার ছয়টি আলামত স্মরণ রাখবে। সেগুলো একটি হচ্ছে আমার মৃত্যু। আওফ (রাঃ) বলেন, আমি একথায় অত্যন্ত মর্মাহত হলাম । তিনি বললেন, তুমি বল, প্রথমটি। অতঃপর বায়তুল মুক্বাদ্দাস বিজয়। অতঃপর তোমাদের মধ্যে
এক মহামারী ছড়িয়ে পড়বে, যার দ্বারা আল্লাহ তোমাদের বংশধরকে ও তোমাদেরকে শাহাদত নছীব করবেন এবং তোমাদের আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করবে। ১৬ হিজরীতে ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর আমলে বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয় হয়। তিনি
নিজে সেখানে গমন করেন এবং মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করেন। তিনি সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ
করেন যে দরজা দিয়ে রাসূল (ছাঃ) মে‘রাজের রাতে উক্ত মসজিদে প্রবেশ করেছিলেন।
৪। মহামারী : বিভিন্ন প্রকারের মারাত্মক রোগ-ব্যাধি ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়াও ক্বিয়ামতের আলামত। আওফ বিন মালেক
হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলছেন, ক্বিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখ। অতঃপর তোমাদের
মধ্যে মহামারী ঘটবে, বকরীর পালের মহামারীর মত’। এই আলামতও ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর আমলে বায়তুল
মুক্বাদ্দাস বিজয় হওয়ার দু’বছর পরে ঘটেছে। এই ঘটনাটি ১৮ হিজরীতে ঘটে। পরে সিরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং এই
মহামারীতে বহু ছাহাবী ও অন্যান্য লোক মারা যান। বলা হয়, এতে প্রায় পঁচিশ হাযার মুসলমান মৃত্যুবরণ করেন। যার মধ্যে
আবু ওবায়দাহ বিন আমের বিন জাররাহ অন্যতম ছিলেন। আওফ বিন মালেক (রাঃ) মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)-কে বলেন,
রাসূল (ছাঃ) আমাকে ক্বিয়ামতের ছয়টি আলামত গণনা করতে বলেন, এর মধ্যে তিনটি ঘটেছে। তন্মধ্যে রাসূল (ছাঃ) এর
মুত্যু, বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয় এবং মহামারী। আর বাকী তিনটির জন্য অপেক্ষা করছি’।
৫। মু‘আবিয়া ও আলী (রাঃ)-এর মধ্যে যুদ্ধ :
ইসলামের চতুর্থ খলীফা আলী বিন আবী তালিব ও মু‘আবিয়া বিন আবু সুফিয়ানের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া ক্বিয়ামতের
অন্যতম আলামত। দু’টিই ইসলামী দল। দু’টি দলেরই দাবী তারা হকের উপরে বিদ্যমান। রাসূল (ছাঃ) এরূপ দু’টি ইসলামী
দলের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হওয়াকে ক্বিয়ামতের আলামত বলে উল্লেখ করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামত ঐ পর্যন্ত সংঘটিত হবে না, যে পর্যন্ত না দু’টি বড় দল পরস্পর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তাদের
মধ্যে এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হবে। অথচ তাদের উভয়ের দাবী হবে একই’। হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, দু’টি বড় দল দ্বারা উদ্দেশ্য আলী ও তার সৈন্যরা এবং মু‘আবিয়া ও তার সৈন্যরা।
৬। হিজায থেকে ভয়ঙ্কর আগুন বের হওয়া : ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হল মদীনার পার্শবর্তী হিজায থেকে আগুনের আবির্ভাব। হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না
যতক্ষণ না হিজাযের যমীন থেকে এমন আগুন বের হবে, যা বছরার উটগুলোর গর্দান আলোকিত করে দিবে’। এই আগুন হিজরী সপ্তম শতাব্দীতে প্রকাশিত হয়েছে। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, আমাদের যুগে ৬৫৪ হিজরীতে এই আগুনের আবির্ভাব ঘটে। ইমাম কুরতুবী বলেন, মদীনার পার্শ্ববর্তী হিজায থেকে আগুন বের হয়। এর সূচনা হয়েছিল মারাত্মক একটি ভূমিকম্পের মাধ্যমে। যা ৬৫৪ হিজরীর জুমাদাল আখিরাহ মাসের তৃতীয় দিন বুধবার রাতে এশার পরে ঘটেছিল। এটি শুক্রবার দিপ্রহর
পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
৭. তাতার ও তুর্কীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ : তুর্কীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুসলমানদের জড়িয়ে পড়া ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত।
রাসূল (ছাঃ) তাদের মুখমন্ডলের যে বিবরণ দিয়েছেন তা তাতার ও তুর্কীদের সাথে মিলে যায়। তাতার ও তুর্কীরা একই
বংশোদ্ভূত দু’টি জাতি। তুর্কীদের সহায়তায় তাতাররা বিশ্বজয় করতে সক্ষম হয়েছিল। বর্তমান তুর্কী জাতি ও তাতাররা
ইয়াজূজ-মাজূজের বংশধর ছিল। বাদশাহ যুলকারনাইনের প্রাচীরের বাইরে থাকা লোকেরাই পরে তুর্কী, তাতারী বা মোগল
নামে পরিচিত হয়ে পৃথিবীতে বহু ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। তাদের ধ্বংসলীলা ভবিষ্যতে আগত ইয়াজূজ-মাজূজের ধ্বংসলীলার ভয়াবহতা স্মরণ করিয়ে দেয়। এদের অনেকে ইসলাম গ্রহণ করে এবং শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত হয়।
৮. চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া :
ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হল চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘ক্বিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে এবং চন্দ্র
বিদীর্ণ হয়েছে। তারা যদি কোন নিদর্শন দেখে তাহলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে যে, এটা তো চিরাচরিত যাদু’
(ক্বামার ৫৪/১-২)। হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার ঘটনা রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে ঘটেছিল।
যা ছহীহ সনদে মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের ঐক্যমত রয়েছে যে,
চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার ঘটনা রাসূল (ছাঃ)-এর যুগেই ঘটেছিল এবং এটি তার প্রকাশ্য মু‘জিযা।
‘তারীখে ফিরিশতা’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার এই দৃশ্য ভারতের মালাবারের জনৈক মহারাজা স্বচক্ষে
দেখেন এবং তা নিজের রোজনামচায় লিপিবদ্ধ করেন। পরে আরব বণিকদের মুখে ঘটনা শুনে তখনকার রাজা ‘সামেরী’
উক্ত রোজনামচা বের করেন। অতঃপর তাতে ঘটনার সত্যতা দেখে তিনি মুসলমান হয়ে যান। যদিও সামরিক কর্মকর্তা ও সমাজনেতাদের ভয়ে তিনি ইসলাম গোপন রাখেন’। ১৯৬৯ সালের ২০শে জুলাই চন্দ্রে প্রথম পদার্পণকারী দলের নেতা
নেইল আর্মষ্ট্রং স্বচক্ষে চন্দ্রপৃষ্ঠের বিভক্তি রেখা দেখে বিস্ময়াভিভূত হন এবং ইসলাম কবুল করেন। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনের
ভয়ে তিনি একথা কয়েক বছর পরে প্রকাশ করেন।
চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার ঘটনায় বড় শিক্ষণীয় এই যে, সূর্য-চন্দ্র-নক্ষত্র সবই আল্লাহর অনুগত এবং মানুষেরই কল্যাণে সৃষ্ট ও তাদেরই সেবায় নিয়োজিত। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞানীদের জন্য অফুরন্ত চিন্তার উৎস। আর তা এই যে, মহাশূন্যে ঘূর্ণায়মান নক্ষত্ররাজি কোনটাই নিজ ইচ্ছায় সৃষ্টি হয়নি এবং কোনটাই নিজ ইচ্ছায় চলে না। অবশ্যই এগুলির একজন
সুনিপূণ ও সুদক্ষ পরিচালক ও ব্যবস্থাপক রয়েছেন। যিনি বিশ্ব চরাচরের ধারক।
[চলবে]