৩৫. লোকেরা কালো রং দিয়ে চুল দাড়ি রাঙ্গাবে:
সাদা চুল-দাড়ি মেহদী বা অন্য রং দিয়ে পরিবর্তন করা নবী করিম সা. এর সুন্নাত। তিনি সাদা চুলকে কালো রং বাদ দিয়ে
অন্য রং দিয়ে পরিবর্তন করতে আদেশ দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সা. বলেন ‘‘ইয়াহুদী ও নাসারারা
চুল ও দাড়িতে খেযাব লাগায় না। সুতরাং তোমরা খেযাব লাগিয়ে তাদের বিপরীত কর’’। কিন্তু কিয়ামতের পূর্বে লোকেরা
এ আদেশ অমান্য করে কালো রং দিয়ে খেজাব (কলপ) লাগাবে। নবী সা. বলেনঃ ‘‘আখেরী যামানায় একদল লোকের
আগমণ হবে যারা সাদা চুল-দাড়ি কালো রং দিয়ে পরিবর্তন করবে। তারা জান্নাতের গন্ধও পাবেনা’’।
৩৬. ভূমিধস ও চেহারা বিকৃতির শাস্তি দেখা দিবে:
আখেরী যামানায় যখন অশ্লীলতা ও পাপাচার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে তখন এই উম্মাতের কিছু লোককে বিভিন্ন প্রকার
শাস্তিতে পাকড়াও করা হবে। নবী সা. বলেনঃ ‘‘আখেরী যামানায় এই উম্মাতের কিছু লোককে ভূমিধস, চেহারা পরিবর্তন
এবং উপরে উঠিয়ে নিক্ষেপ করে শাস্তি দেয়া হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের
মাঝে সৎ লোক থাকতেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো? উত্তরে নবী সা. বললেনঃ হ্যাঁ, যখন অশ্লীলতা বৃদ্ধি পাবে’’।
৩৭. কিয়ামতের পূর্বে ব্যাপকভাবে মিথ্যা কথা বলার প্রচলন ঘটবে: এমনকি এক শ্রেণীর লোক নবী সা. এর নামে মিথ্যা
হাদীছ রচনা করে মানুষের মাঝে প্রচার করবে। বাস্তবে তাই হয়েছে। ইসলাম প্রচার ও তাবলীগের নামে বানোয়াট কিচ্ছা
কাহিনী ও জাল হাদীছ তৈরী করে এক শ্রেণীর লোক মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। নবী সা. বলেনঃ ‘‘আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের কিছু লোক তোমাদের কাছে এমন কথা বর্ণনা করবে, যা তোমরাও শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। তোমরা তাদের থেকে সাবধান থাকবে। তারা যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে না পারে’’।
কিয়ামত এর আগে আরব উপদ্বীপ পূর্ণ হয়ে যাবে:
৩৮. আরব উপদ্বীপ নদ-নদী এবং গাছপালায় পূর্ণ হয়ে যাবে:
বর্তমানে আরব উপদ্বীপে কোন নদী-নালা নেই। গাছপালার সংখ্যা খুবই কম। চাষাবাদের উপযোগী ভূমির পরিমাণ অতি
নগণ্য। কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে আরব উপদ্বীপের পরিবেশ পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং তা গাছপালা ও নদী-নালায় পরিপূর্ণ
হয়ে যাবে। নবী সা. বলেনঃ ‘‘ততদিন পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা যে পর্যন্ত না আরব উপদ্বীপ গাছপালা ও নদী-নালায়
পূর্ণ হবে’’।
৩৯. প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে ফসল হবেনা:
নবী সা: বলেনঃ ‘‘ততদিন কিয়ামত হবেনা যতদিন না আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। এতে মাটির তৈরী ঘরগুলো
ভেঙ্গে পড়বে এবং পশমের ঘরগুলো রক্ষা পাবে’’। তিনি আরো বলেনঃ ‘‘ততদিন কিয়ামত হবেনা যেপর্যন্ত না ব্যাপক
বৃষ্টিপাত হবে। কিন্তু যমিনে কোন ফসলই উৎপন্ন হবেনা’’।
৪০. কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ফুরাত নদী থেকে একটি স্বর্ণের পাহাড় বের হবে। নবী সা. বলেনঃ ‘‘তত দিন
পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা যতদিন না ফুরাত নদী থেকে একটি স্বর্ণের পাহাড় বের হবে। মানুষেরা এটি দখল করার
জন্যে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এ যুদ্ধে শতকরা নিরানববই জনই নিহত হবে। তাদের প্রত্যেকেই বলবেঃ আমিই এযুদ্ধে রেহাই
পাবো এবং স্বর্ণের পাহাড়টি দখল করে নিবো’’
পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার আগে জীব ও জড় পদার্থ মানুষের সাথে কথা বলবে:
৪১. কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে হিংস্র প্রাণী এবং জড় পদার্থ মানুষের সাথে কথা বলবে।
ইমাম আহমাদ (রঃ) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, ‘‘জনৈক রাখাল মাঠে ছাগল চরাচ্ছিল। হঠাৎ একটি নেকড়ে
বাঘ এসে একটি ছাগলের উপর আক্রমণ করলো। রাখাল বাঘের পিছনে ধাওয়া করে ছাগলটি ছিনিয়ে আনল। বাঘটি একটি টিলার উপর বসে বলতে লাগলোঃ তুমি কি আল্লাহকে ভয় করোনা? আল্লাহ আমাকে একটি রিজিক দিয়েছিলেন। আর তুমি
তা ছিনিয়ে নিলে। রাখাল বললঃ কি আশ্চর্য্য ব্যাপার! মানুষের ন্যায় বাঘও আমার সাথে কথা বলছে। বাঘ বললোঃ আমি কি তোমাকে এর চেয়ে আশ্চর্য্যজনক খবর দিবোনা? মদ্বীনায় মুহাম্মাদ সা. অতীতে যা ঘটেছে এবং আগামীতে যা ঘটবে তা
সম্পর্কে মানুষকে সংবাদ দিচ্ছে। রাখাল তার ছাগলের পাল নিয়ে মদ্বীনায় প্রবেশ করে ছাগলগুলো এক স্থানে রেখে রাসূল
সা. এর কাছে এসে ঘটনা খুলে বলল। এতক্ষণে নামাযের সময় হয়ে গেল। নামায শেষে রাসূল সা. রাখালকে বললেনঃ ‘‘তুমি
সবার সামনে ঘটনা খুলে বল’’। সে ঘটনা বর্ণনা শেষ করলে নবী কিরীম সা. বললেনঃ রাখাল সত্য বলেছে। ঐ আল্লাহর শপথ!
যার হাতে আমার প্রাণ ততদিন পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবেনা যতক্ষণ না হিংস্র প্রাণী মানুষের সাথে কথা বলবে। মানুষ তার হাতের লাঠির সাথে কথা বলবে, পায়ের জুতার সাথে কথা বলবে। এমনকি ঘরের স্ত্রী তার স্বামীর অনুপস্থিতে কি করছে
শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাকে বলে দিবে’’।
৪২. ফিৎনায় পতিত হয়ে মানুষ মৃত্যু কামনা করবে:
নবী করীম সা. বলেনঃ ঐ আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ ততদিন দুনিয়া ধ্বংস হবেনা যতদিন না একজন লোক
কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তার উপর গড়াগড়ি করবে এবং বলবেঃ হায় আফসোস! আমি যদি এ কবরবাসীর স্থানে হতাম। ফিতনা ও মুসীবত সহ্য করতে না পেরেই সে এরূপ কথা বলবে। যখন ফিতনা বিস্তার লাভ করবে পৃথিবীর অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং ইসলামী শরীয়ত মিটে যাবে তখন এ ধরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
কিয়ামত সঙ্গটিত হওয়ার আগে কাহতান গোত্রিয় সৎ লোকের আগমণ:
৪৩. আখেরী যামানায় কাহতান গোত্র থেকে একজন সৎ লোক আগমণ করবে। মানুষ তাঁর নেতৃত্বে ঐক্য বদ্ধ হয়ে তাঁর আনুগত্য করবে। নবী করীম সা. বলেনঃ ‘‘ততদিন কিয়ামত হবেনা যতদিন না কাহতান গোত্র থেকে একজন লোক বের
হয়ে তার লাঠির মাধ্যমে লোকদেরকে পরিচালিত করবে’’।
কিয়ামত এর বড় বড় আলামত হল ১০টি যা পর্যায়ক্রমে দশটি অনুচ্ছেদে প্রকাশ করব ইনশাআল্লাহ।