কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের পরিচিতি ও তাদের দাবি সম্পর্কে পূর্বের দুটি পর্বে বিস্তরিত
আলোচনা হয়েছেঃ
নবীজী সা. এর যামানায় কিছু লোক ঈমান আনল। তারা নামাযও পড়ত। কিন্তু তারা
কিছু কুফরি কথা বলে বসল। নবীজী জানতে পেরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন।
তখন তারা অনুনয়বিনয় করে বলতে লাগল, কথাগুলো আমরা মন থেকে বলিনি, ভেবেচিন্তে বলিনি। এমনিই হাসি মজাক করতে করতে বলে ফেলেছি। তাদের বিষয়ে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল করলেন, (অর্থ) ‘অজুহাত দিতে হবে না। তোমরা
ঈমান আনয়নের পর কাফের হয়ে গেছ। (সূরা তাওবা : ৬৬)
অনুরূপ কিছু লোক ঈমান এনে মুসলমানদের দলভুক্ত হয়েছিল। যারা কেবলামুখী
হয়ে নামায আদায় করতো। তারাও কিছু কুফুরী কথা বলল। ফলে আল্লাহ পাক
তাদেরকে ইসলাম থেকে খারেজ সাব্যস্ত করলেন। কাফের আখ্যায়িত করে আয়াত
নাযিল করলেন, (অর্থ) ‘তারা কুফরী কথা বলেছে এবং ইসলাম অবলম্বনের পর কাফের
হয়ে গেছে।’ (সূরা তাওবা:৭৪)
কোরআন মাজীদের এই আয়াতসমূহ থেকে স্পষ্ট যে, কেউ যদি নিজেকে মুসলমান
বলে, কালিমা পড়ে, কা’বা শরীফকে কেবলা মানে, আবার কোনো কুফরী কথাও বলে
কিংবা এ জাতীয় কোনো আকিদা প্রকাশ করে, তাহলে সে ইসলাম থেকে খারেজ হয়ে
যাবে। এটাই উম্মতের ইজমায়ী ফায়সালা; সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত।
হাঁ, এতটুকু ঠিক, যে নিজেকে মুসলমান বলবে, কালিমা পড়বে, তাকে আমরা মুসলমানরূপে মেনে নেব, যতক্ষণ না তার থেকে কোনো কুফুরী কথা বা আচরণ
প্রকাশ পাবে। কিন্ত যখনই তার থেকে কোনো কুফর প্রকাশ পাবে, তৎক্ষণাৎ সে
ইসলাম থেকে খারেজ হয়ে যাবে।
সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত কাদিয়ানীরা কাফের:
মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ও তার অনুসারিদের কাফের ঘোষণা করার সবচে’
বড় বুনিয়াদ হল নবুওত দাবী করে তার দেয়া স্পষ্ট বক্তব্যসমূহ। এগুলোতে ভিন্ন কোনো ব্যাখ্যা চলে না। যারা এই দাবীর অনর্থক ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে চান, মির্জাপুত্র বশীরুদ্দীন মাহমুদ তাদের সেই সুযোগ একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি পিতার স্পষ্ট
বক্তব্যসমূহ একের পর এক উদ্ধৃত করে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, মির্জা গোলাম
আহমদ কাদিয়ানী স্বতন্ত্র শরয়ী নবুওতের দাবীদার। তিনি ঈসা, মুসা প্রমুখ নবীগণের
মতোই নবী। পূর্বেকার কোনো নবীকে অস্বীকার করা যেমন কুফর, মির্জা গোলাম
আহমদ কাদিয়ানীকে অস্বীকারকারীরাও কাফের।
প্রথম যুগে মুসায়লামা এবং আসওয়াদ ‘আনাসী নবুওতের দাবীদার ছিল। এ যুগের
মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীও নবুওতের দাবীদার। সবাই খতমে নবুওত সম্পর্কিত কুরআন মাজীদের আয়াত এবং তাওয়াতুরের সঙ্গে বর্ণিত অকাট্ট হাদীসসমূহের
অর্থহীন ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, যা মৌলিকভাবে নবীজী সা. কে ‘তাকযীব’ করার নামান্তর। এজন্য শরীয়তের দৃষ্টিতে মিথ্যুক মুসায়লামার অবস্থান যা, মির্জা গোলাম
আহমদ কাদিয়ানী এবং তার অনুসারীদের অবস্থানও তা।
নিম্নোক্ত বিষয়গুলো গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ও তার সম্প্রদায়ের কাফের হওয়া অনিবার্য করে:
১.তার নবুয়ত দাবী।
২.উপনিবেশবাদের সেবাস্বরূপ জিহাদের ফরযিয়তকে বিলুপ্ত করা।
৩. মক্কায় গিয়ে হজ্জ করাকে বাতিল করে সেটাকে কাদিয়ানের দিকে স্থানান্তর করা।
৪. আল্লাহ্কে মানুষের সাথে সাদৃশ্য দেয়া।
৫. পুনর্জন্ম ও হুলুল তত্ত্বে বিশ্বাস করা।
৬. আল্লাহ্র দিকে সন্তান সম্বোধিত করা এবং নিজেকে উপাস্যের সন্তান দাবী করা।
৭. মুহাম্মদ সা. এর খতমে নবুয়ত বা শেষ নবী হওয়াকে অস্বীকার করা এবং প্রত্যেক
দুষ্ট-শয়তানের জন্য নবুয়ত দাবীর পথ খুলে দেওয়া।
৮. কাদিয়ানীদের সাথে ইসরাইলে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ইসরাইল তাদের জন্য
বিভিন্ন সেন্টার ও মাদ্রাসা খুলে দিয়েছে। তাদের মুখপত্র হিসেবে পত্রিকা বের করা ও বিশ্বব্যাপী প্রচার করার জন্য বই ও প্রচারপত্র ছাপানোর সুযোগ করে দিয়েছে।
৯. তারা যে খ্রিস্টান ধর্ম, ইহুদী ধর্ম ও গোপন আন্দোলনগুলো দ্বারা প্রভাবিত সেটা
তাদের বিশ্বাস ও চলাফেরা দেখলেই স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। যদিও বাহ্যত তারা ইসলাম
দাবী করে।
কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রসার ও প্রভাব বিস্তারের স্থান:
বর্তমানে অধিকাংশ কাদিয়ানী ভারত ও পাকিস্তানেই বাস করে। তাদের সামান্য কিছু
সংখ্যা ইসরাইল ও আরব বিশ্বেও বাস করে। তারা সাম্রাজ্যবাদীদের সহযোগিতায়
প্রত্যেক দেশের স্পর্শকাতর কেন্দ্রগুলো দখল করতে চায়; যাতে করে তারা সেখানে
আস্তা গেঁড়ে অবস্থান করতে পারে। আফ্রিকাতে ও পাশ্চাত্যের কিছু দেশে
কাদিয়ানীদের বড় ধরণের কর্ম তৎপরতা রয়েছে। শুধু আফ্রিকাতেই তাদের পাঁচ
হাজারেরও বেশি মুবাল্লিগ ও দাঈ আছে। যাদের কাজ হলো মানুষকে কাদিয়ানী ধর্মের দাওয়াত দেওয়া। তাদের ব্যাপক তৎপরতা নিশ্চিত করে যে, তারা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা পায়। ইংরেজ সরকার এ মতবাদকে কোলে তুলে রাখে। এ মতবাদের অনুসারীদের জন্য আন্তর্জাতিক অফিসগুলোতে পদ পাওয়া, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ও কনস্যুলেট অফিসগুলোতে নিয়োগ পাওয়া সহজীকরণ করে। এবং
এদের মধ্য থেকে তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে বড় মাপের অফিসার নিয়োগ দেয়।
কাদিয়ানীরা বড় ধরণের মিডিয়া; বিশেষত সাংস্কৃতিক মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের মতবাদের দিকে দাওয়াত দিতে খুবই তৎপর। যেহেতু তারা শিক্ষিত। তাদের মধ্যে অনেক বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার ও ডাক্তার রয়েছে। ব্রিটেনে ‘ইসলামী টিভি’ নামে একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলই আছে যা কাদিয়ানীরা চালায়।
কাদিয়ানী একটি পথভ্রষ্ট আহ্বান। এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। এ মতবাদের আকিদা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। মুসলিম আলেমগণ তাদের কাফের হওয়ার উপর ফতোয়া দেয়ার পর তাদের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে মুসলমানদেরকে সাবধান করা বাঞ্ছনীয়। আরও বিস্তারিত জানতে পড়ুন: ‘আল-কাদিয়ানিয়্যা’, লেখক: ইহসান ইলাহি জহির।