কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল এমন একটি আয়োজন যা প্রথমবারের মতো আম পাবলিক
থেকে শুরু করে আলেম পর্যায় পর্যন্ত উন্মাদনা তৈরী করেছে। আর আগ্রহের অন্যতম কারণ হলো, কাতার এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে একটির পর একটি “হালাল”
পদক্ষেপ নিচ্ছে আর সকলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে তা নিয়ে বাহবা দিচ্ছেন!
আম (আবেগী) পাবলিক তাদের অজ্ঞতা ও ঈমানী দুর্বলতার দরুন এইসব ফাহেশা কার্যকলাপ নিয়ে উচ্ছসিত হতে পারে কিন্তু আলেম পর্যায়ের মানুষজনও কিভাবে
এইসবকে প্রোমোট করেন! কিভাবে এই জগণ্য একটা ফিতনাহ ইন্ডাস্ট্রিকে সাপোর্ট
করে? এই একটি খেলা বা আয়োজনকে ঘিরে কত অজস্র হারাম কাজ হচ্ছে সেই
বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষও কি ধারণা রাখেন? কাতার বিশ্বকাপ কোটি কোটি
টাকার একটি বিসনেজ ইন্ডাস্ট্রি যার মধ্যে জুয়া, বেহায়াপনা, অবাধ মেলা-মেশা, গান-বাজনা, নাচ, অশ্লীলতা, মানুষের মূর্তি বানিয়ে প্রদর্শন, সময় অর্থ অপচয় এবং আরো
নানা ভয়ঙ্কর সব হারাম কাজ সংযুক্ত।
এটি কোন তরিকা যার মাধ্যমে কাতার বিশ্বকাপ নামে একটি ফিতনাহ ইন্ডাস্ট্রিকে
প্রোমোট করে ইসলাম প্রচার করতে চাইছে? বরং তারা তো একটি ফিতনাহর মঞ্চে
কুরআন তিলাওয়াত করে কুরআনের অবমাননা করেছে এবং কুরআনের আদবের মারাত্মক খেলাফ করেছে! ইসলামের কি আমাদের প্রয়োজন? নাকি আমাদের
ইসলাম প্রয়োজন? ইসলাম কি কোনো অন্ত:সারশূন্য ধর্ম যার অনেক অনেক অনুসারী দরকার এবং তা যেকোনো মূল্যে? কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের মাধ্যমে যদি লক্ষ
মানুষও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তারপরেও কি আপনি তা জায়েজ বলতে পারবেন? ইসলামের অনুসারী বৃদ্ধি পেলে কি তারা ইসলামকে আরো Glorify করেছে মনে হবে?
আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে বলেন:
“তারা মুসলমান হয়ে আপনাকে ধন্য করেছে মনে করে। বলুন, তোমরা মুসলমান
হয়ে আমাকে ধন্য করেছ মনে করো না। বরং আল্লাহ ঈমানের পথে পরিচালিত
করে তোমাদেরকে ধন্য করেছেন, যদি তোমরা সত্যনিষ্ঠ হয়ে থাক।” সূরা হুজরাত
আয়াত: ১৭
ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা শুধু মানুষকে নেক কাজ করারই আদেশ দেয় না বরং
সাথে সেই নেক কাজ কিভাবে করতে হবে এবং কিভাবে করলে আল্লাহ তা কবুল
করবেন সেই পদ্ধতিও বলে দেয়া হয়েছে।
একটি সহজ উদাহরণের মাধ্যমেই বিষয়টি ভাবি তো, একজন ব্যক্তি কোনো গরুর মালিককে হত্যা করে গরু চুরি করে এনে হাজারো গরিবকে খাওয়াচ্ছেন আর অমুসলিমের দাওয়াহ দিচ্ছেন এই বলে যে, “দেখো এটি আমাদের ইসলাম যা গরিবদের সাহায্য
করতে বলে”! অমুসলিমরা তার এই সাদকা দেখে খুব মুগ্ধ এবং ইসলামের প্রশংসা
করছে। আর লোকটির এই হারাম পন্থা জানা সত্ত্বেও আমরা সকলে মিলে তার কাজকে
খুব বাহবা দিচ্ছি!
কাতার বিশ্বকাপ কি ইসলাম প্রচারের মাধ্যম ?
ইসলাম প্রচার-প্রসারে খাতের কি অভাব রয়েছে? কাতার যদি ইসলাম প্রচারের ব্যাপারে এতই সৎ হয়ে থাকে তবে তারা এই কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন পশ্চিমা দেশের ইসলামিক প্রতিষ্ঠান, স্ট্রিট দাওয়াহ, ইসলামিক সেমিনার, ফ্রী ইসলামিক বুকলেট, ইসলামিক চ্যানেল, প্রোগ্রাম ইত্যাদি আরো নানা কাজগুলোকে অনেক বেশি বেগবান করার কাজে সহয়তা করতে পারে। কতক ইসলামিক চ্যানেল দেখেছি অর্থের অভাবে ভালো কনটেন্ট তৈরী করতে পারেনা।
বর্তমানের এই ভয়াবহ ফিতনাহর যুগকে সংশোধন ও পুনরায় ইসলামকে যথার্থভাবে মানুষের মাঝে প্রতিষ্ঠা করতে আবারো ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং ঈমাম মাহ্দীকে আল্লাহ দুনিয়াতে প্রেরণ করবেন। তারা কোনো ভিন্ন তরিকা দিয়ে ইসলাম প্রচার-প্রসার করতে আসবেন না বরং তারা এইসব ফিতনাময় “হালালের মোড়কে” হারাম কাজগুলোকে ধ্বংস করতেই আসবেন।
ইসলাম নিজে প্রতিষ্ঠিত একটি দ্বীন। কোনো হারাম পন্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করলে ইসলামের কোনো উপকার নেই তাতে। বরং জাহান্নামের তপ্ত আগুন থেকে বাঁচতে নিজ তাগিদে পরিপূর্ণভাবে আমাদের ইসলামে প্রবেশ করতে হবে।
ইসলাম কোন বিশেষ মানুষ বা সংখ্যাধিক্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। হাদীসে উল্লেখ করাই আছে ইসলাম তার মর্যাদা লাভ করবে অল্পসংখ্যক লোক দ্বারা, যারা হবে গুরাবা। মুসনাদে আহমাদ: হাদীস ৬৬৫০, সহীহ তারগীব: হাদীস ১৮৮
আল্লাহ আমাদের সেই সকল অল্পসংখ্যকদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুক। আমীন