ঈসা (আঃ) এর আগমন কিয়ামতের বড় আলামত:

হযরত ঈসা ইবনে মরিয়মের পরিচয়:

হযরত ঈসা আঃ বনী ইসরাইলের প্রতি প্রেরিত একজন রাসূল ছিলেন। পুরো নাম আল-মসীহ ঈসা ইবনে মরিয়ম।
৩৩ খ্রিস্টপূর্ব ফিলিস্তিনের বেথেলহাম শহরে বিবি মরিয়মের উদরে পিতা ছাড়াই জন্ম নেন। নবুওয়ত লাভ করেন সাড়ে
৩২ বছর বয়সে। মাত্র তিন মাস নবুওয়তের দায়িত্ব পালন করেন [আত-তবকাতুল কোবরা ১/৩৫, ইবনে সা’আদ]।
তিনি ইঞ্জিল কিতাব লাভ করেন। যা বর্তমানে রহিত।

আল্লাহর নবী ঈসা (আ.) যখন ইহুদিদের মধ্যে আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দিলেন তখন তারা তাঁর নবুওয়াতকে
অস্বীকার করে। এমনকি তাকে দাজ্জাল সাব্যস্থ করে। তারা তাকে হত্যা করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়। হত্যা করার
জন্য তার ঘর ঘেরাও করে। তখন সবার আগে শামউন কারিনি নামে এক ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করে। তখন আল্লাহ নবীকে
নিজ কুদরতে আসমানে উঠিয়ে নেন। আর সঙ্গে সঙ্গে তাদের ওই ব্যক্তির চেহারা ঈসা (আ.) এর মতো করে দেন। বাকি
লোকেরা ঘরে প্রবেশ করে তাকে ধরে ফেলে এবং তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করে। কেউ কেউ বলতে থাকে, তার চেহারা
তো ঈসা (আ.)-এর মতো মনে হয়; কিন্তু তার শরীর তো আমাদের লোকের মতো মনে হয়। কেউ কেউ বলতে লাগে,
এ নিহত ব্যক্তি যদি ঈসা হয়, তাহলে আমাদের লোক গেল কোথায়? আর সে যদি আমাদের লোক হয়, তাহলে ঈসা (আ.) কোথায় গেল? এভাবে ধারণা করে একেকজন একেক রকম কথা বলতে থাকে। কারও কাছে সঠিক জ্ঞান ছিল না।
আল্লাহ তায়ালা প্রকাশ করে দেন, ঈসা (আ.) নিহত হননি; বরং তাকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং ইহুদিদের ধাঁধায় ফেলা হয়েছে। মহাগ্রন্থ কোরআনে রয়েছে, ‘বরং আল্লাহ তার কাছে তাকে তুলে নিয়েছেন এবং আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী। তাদের (এ) কথার কারণে, আমরা আল্লাহর রাসুল মারিয়াম পুত্র ঈসা মাসিহকে হত্যা করেছি। অথচ তারা তাকে হত্যা
করেনি এবং তাকে শূলেও চড়ায়নি; বরং তাদের ধাঁধায় ফেলা হয়েছিল। আর নিশ্চয় যারা তাতে মতবিরোধ করেছিল,
অবশ্যই তারা তার ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে ছিল। ধারণার অনুসরণ ছাড়া এ ব্যাপারে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। আর এটা নিশ্চিত, তারা তাকে হত্যা করেনি।’ (সুরা নিসা : ১৫৭-১৫৮)।

ঈসা (আ.) এর ব্যপারে ইহুদি-খ্রিস্টানরা  ভুলের শিকার:

বর্তমানে ইহুদি-খ্রিস্টান উভয় দল ভুলের শিকার। ইহুদিরা গর্ব করে বলে, আমরা ঈসা (আ.)-কে হত্যা করে ক্রুশবিদ্ধ
করেছি। আর খ্রিস্টানরা মনে করে, ঈসা (আ.) ক্রুশবিদ্ধ হয়ে নিজের উম্মতের গুনাহের কাফফারা আদায় করেছেন।
অথচ ঈসা (আ.) আসমানে জীবিত আছেন। কেয়ামতের আগে দাজ্জাল বের হলে তিনি পৃথিবীতে অবতরণ করবেন
এবং তাকে হত্যা করবেন। সে সময় ইহুদি-খ্রিস্টান সবার দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে যাবে যে, নবী ঈসা (আ.)-কে হত্যাও করা হয়নি,
শূলিতেও চড়ানো হয়নি; বরং তাকে আসমানে তুলে নেয়া হয়েছে। সেখানে তিনি জীবিত আছেন। তিনি তাদের বিরুদ্ধে
সাক্ষী দেবেন।
ঈসা (আ.)-এর অবতরণের পর (আহলে কিতাব) ইহুদি-খ্রিস্টান সবাই তার মৃত্যুর আগে তার প্রতি ঈমান আনবে। তাফসিরগ্রন্থগুলোতে বর্ণিত এ ব্যাখ্যাটিকে ইমাম ইবনে জারির তাবারি (রহ.) শুদ্ধতার বিচারে উত্তম বলেছেন।
(তাফসিরে তাবারি : ৯/৩৮৬)। ইমাম ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ইবনে জারির (রহ.) যা
বলেছেন তাই সঠিক। কেননা পরবর্তী আয়াতগুলো দ্বারা তাই বুঝা যায়। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ২/৪৫৪)।
কেয়ামতের পূর্বে ঈসা (আ.) পৃথিবীতে অবতরণ করার পক্ষে এ আয়াতটিও প্রমাণ-‘তিনি মায়ের কোলো থাকাকালীন
মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন, মধ্যবয়সেও।’ (সুরা আলে ইমরান : ৪৬)। অর্থাৎ তাকে জীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে
নেয়া হবে। তারপর মধ্যবয়সে পৃথিবীতে নামানো হবে, তখনও তিনি মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন।
ঈসা (আ.)-এর পৃথিবীতে অবতরণ কেয়ামতের একটি আলামত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তা হলো কেয়ামতের
নিদর্শন। কাজেই তোমরা কেয়ামতে সন্দেহ করো না এবং আমার কথা মান। এটা এক সরল পথ।’ (সুরা জুখরুফ : ৬১)।
ঈসা (আ.)-এর অবতরণ কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার বিষয়টি বোঝার মাধ্যম হবে। আয়াতটি এ বিষয়ে প্রায় স্পষ্ট। হজরত
ইবনে আব্বাস, আবু হুরাইরা, তাবেয়িদের মধ্যে আবুল আলিয়া, ইকরিমা, কাতাদা, হাসান, দাহহাক প্রমুখের মতে
আয়াতটিতে ঈসা (আ.)-এর কথাই বলা হয়েছে। পরবর্তী আয়াতগুলো দ্বারাও তাই বুঝা যায়। এ প্রসঙ্গে তাফসিরকার
মুজাহিদ (রহ.) বলেন, কেয়ামতের আগে ঈসা ইবনে মারিয়ামের আগমন কেয়ামতের নিদর্শন। তাহলে আয়াতের মর্মার্থ
দাঁড়াল-নিশ্চিত বিষয় হলো, ঈসা (আ.)-এর অবতরণ কেয়ামতের নিদর্শন। অতএব এতে কোনো সন্দেহ করো না।
(তাফসিরে তাবারি : ২১/৬৩১; তাফসিরে দুররে মানসুর : ৭/৩৮৭)।

ঈসা (আ.) কোথায় এবং কখন অবতরণ করবেন?

তিনি ফজরের নামাজের সময় অবতরণ করবেন। দামেস্কের উমাইয়া জামে মসজিদে তাকবিরে উলা বলা হয়ে যাবে এমন
সময় অবতরণ করবেন। নামাজের জন্য প্রথম কাতারে দাঁড়াবেন। দায়িত্বরত মুসলিম ইমাম তখন শ্রদ্ধাভরে অনুরোধ করবেন, হে রুহুল্লাহ, আসুন, আমাদের ইমামতি করুন। তিনি বলবেন, না, তোমরা বরং একে অন্যের আমির। এটাই সেই সম্মান,
যা আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতকে দান করেছেন।’ (মুসলিম : ১৫৬)। অন্য হাদিসে আছে, দায়িত্বরত ইমাম হবেন ইমাম মাহদি। নাওয়াস ইবনে সামআন (রা.) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে এসছে, নবী ঈসা (আ.) জাফরানের রঙের দুটি পোশাক পরে
এবং দুজন ফেরেশতার পাখার ওপর হাত রেখে দামেশক শহরের পূর্বে অবস্থিত সাদা মিনারের উপরে অবতরণ করবেন।’ (মুসলিম : ২৯৩৭)।

 

তিনি এসে যে সমস্ত দায়িত্ব পালন করবেনঃ

১) দাজ্জালকে হত্যা করবেন পৃথিবীতে তখন দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। সে ধোঁকাবাজি ও শঠতার জাল বিস্তার করে
নিজেকে মাসিহ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াবে। এক পর্যায়ে সে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে।
নবী ঈসা (আ.) ‘লুদ’ ফটকের কাছে তাকে হত্যা করবেন। মুজাম্মি ইবনে জারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন,
ঈসা ইবনে মারিয়াম দাজ্জালকে বাবে লুদে হত্যা করবেন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ৩৮৬৮৯)। লুদ হচ্ছে বাইতুল মাকদিসের পশ্চিমে উপকূলীয় নগরী তেল আবিব ইয়াফু থেকে রামাল্লাহগামী রাজপথের ধারে ফিলিস্তিনের অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ নগরী। বর্তমানে ইসরাঈল সেখানে একটি বিশাল বিমানবন্দর বানিয়ে রেখেছে। (আউনুল মা‘বুদ, মুহাম্মদ
আবাদিকৃত : ১১/৩০২)।

নবী (সা.) বলেনঃ ‘‘মুসলমানদের ইমাম যখন তাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায পড়ার জন্য সামনে চলে যাবেন তখন ঈসা
ইবনে মারইয়াম অবতরণ করবেন। ইমাম যখন ঈসা (আঃ)এর আগমণ অনুভব করবেন তখন তিনি পিছিয়ে আসতে চেষ্টা করবেন যাতে ঈসা (আঃ) সামনে গিয়ে মানুষের ইমামতি করেন। ঈসা (আঃ) ইমামের কাঁধে হাত রেখে বলবেনঃ তুমিই
সামনে যাও এবং তাদের নামায পড়াও। কারণ তোমার জন্যই এ নামাযের ইকামত দেয়া হয়েছে। অতঃপর তিনি ইমামতি করবেন। নামায শেষে তিনি দরজা খুলতে বলবেন। তারা দরজা খুলে দিবে। পিছনে তিনি দাজ্জালকে দেখতে পাবেন।
তার সাথে থাকবে অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত সত্তুর হাজার ইহুদী। দাজ্জাল ঈসা (আঃ)কে দেখেই পানিতে লবন গলার ন্যায়
গলতে থাকবে এবং পালাতে চেষ্টা করবে। ঈসা (আঃ) তাকে লক্ষ্য করে বলবেনঃ তোমাকে আমি একটি আঘাত করবো যা
থেকে তুমি কখনো রেহাই পাবেনা। ঈসা (আঃ) লুদ্দ শহরের পূর্ব গেইটে তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করবেন।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা ঈসা (আঃ)এর মাধ্যমে ইহুদীদেরকে পরাজিত করবেন। আল্লাহর কোন সৃষ্টির অন্তরালে ইহুদীরা পালাতে চাইলে আল্লাহ সেই সৃষ্টিকে কথা বলার শক্তি দিবেন। পাথর, গাছ, দেয়াল কিংবা চতুষ্পদ জন্তুর আড়ালে পলায়ন
করলে সকলেই বলবেঃ হে মুসলিম! হে আল্লাহর বান্দা! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে
হত্যা করো। তবে গারকাদ নামক গাছের পিছনে লুকালে গারকাদ গাছ কোন কথা বলবেনা। এটি ইহুদীদের গাছ বলে
পরিচিত।

২) ইয়াজুয-মাজুযকে ধ্বংস করবেনঃ

ইয়াজুয-মাজুযের আগমণ কিয়ামতের একটি অন্যতম বড় আলামত। দাজ্জালের ফিতনা খতম করার পর ইয়াজুয-মাজুযের দলেরা পৃথিবীতে নতুন করে মহা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। এই বাহিনীর মোকাবেলা করা মুসলমানদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই ঈসা (আঃ) আল্লাহর কাছে এই বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য প্রাণ খুলে দু’আ করবেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর দু’আ কবূল করবেন এবং ইয়াজুয-মাজুযের বাহিনীকে সমূলে খতম করে দিবেন।

৩) সমস্ত মতবাদ ধ্বংস করে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করবেনঃ

ঈসা (আঃ) আগমণ করে ইসলামী শরীয়তের অনুসরণ করবেন। আল্লাহর কিতাব এবং আমাদের নবীর সুন্নাত দিয়ে বিচার-ফয়সালা করবেন। সেই সময়ে ইসলাম ছাড়া বাকী সমস্ত মতবাদ মিটিয়ে দিবেন। এ জন্যই তিনি খৃষ্টান ধর্মের প্রতিক হিসেবে ব্যবহৃত ক্রুশচিহ্ন ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর হত্যা করবেন, ইহুদী-খৃষ্টানদের কাছ থেকে জিয্য়া গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করবেন।
ইসলাম অথবা হত্যা ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করবেন না। মোটকথা এই শরীয়তকে নতুনভাবে সংস্কার করার জন্য এবং
সর্বশেষ নবীর আদর্শকে বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি পৃথিবীতে আগমণ করবেন।

 

৪) ঈসা-(আঃ) এর সময়কালে মানুষের সুখ শান্তি ও নিরাপত্তাঃ

ঈসা (আঃ)এর সময়কালে ব্যাপক সুখ শান্তি, নিরাপত্তা ও বরকত বিরাজ করবে। আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর বান্দাদেরকে
এ সমস্ত জিনিষ দ্বারা সম্মানিত করবেন। মানুষে-মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ উঠে যাবে এবং সকল মানুষ কালেমায়ে তাইয়্যিবা
তথা ইসলামের উপর একত্রিত হয়ে যাবে। ঈসা (আ.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! যার
হাতে আমার প্রাণ। অচিরেই ন্যায় বিচারক শাসক হিসেবে ঈসা (আ.) তোমাদের মাঝে আগমন করবেন। তিনি ক্রুশচিহ্ন
ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর হত্যা করবেন এবং জিযইয়া প্রত্যাখ্যান করবেন। ধন-সম্পদ প্রচুর হবে এবং তা নেওয়ার মতো
কোনো লোক পাওয়া যাবে না। এমনকি মানুষের কাছে একটি সেজদা দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত বস্তু হতে শ্রেষ্ঠ হবে।’ (বুখারি : ৩৪৪৮)।

নবী (সা.) বলেনঃ ‘‘আমার উম্মতের ভিতরে ন্যায় বিচারক শাসক এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী নেতা হয়ে ঈসা (আঃ) আগমণ করবেন। তিনি খৃষ্টান ধর্মের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত ক্রুশচিহ্ন ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর হত্যা করবেন, ইহুদী-খৃষ্টানদের
থেকে জিয্য়া গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করবেন। সাদকা গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করা হবে। অর্থাৎ কোন অভাবী মানুষ থাকবেনা। সবাই
আল্লাহর ফজলে ধনী হয়ে যাবে। কাজেই সাদকা নেয়ার মত কোন লোক খুঁজে পাওয়া যাবেনা। উট, ছাগল বা অন্য কোন চতুষ্পদ জন্তুর প্রতি যত্ন নেয়া হবেনা। মানুষে-মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ উঠে যাবে। বিষাক্ত সাপের বিষ চলে যাবে। শিশু বাচ্চারা বিষাক্ত সাপের মুখে হাত ঢুকিয়ে দিবে। কিন্তু সাপ শিশুকে কামড় দিবেনা। এমনিভাবে শিশু ছেলে সিংহের পিঠে উঠে
বসবে, কিন্তু সিংহ ছেলের কোন ক্ষতি করবেনা। ছাগল এবং নেকড়ে বাঘ এক সাথে মাঠে চরে বেড়াবে। অর্থাৎ বাঘ
ছাগলের রাখালের মত হয়ে থাকবে। পানির মাধ্যমে গ্লাস যেমন পরিপূর্ণ হয়ে যায় পৃথিবীও তেমনিভাবে শান্তিতে পরিপূর্ণ
হয়ে যাবে। সকলের কথা একই হবে। পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো এবাদত করা হবেনা। যুদ্ধ-বিগ্রহ ন্ধ হয়ে যাবে। কুরাইশদের রাজত্ব ছিনিয়ে নেয়া হবে। যমীন একেবারে খাঁটি রৌপ্যের মত পরিস্কার হয়ে যাবে। আদম (আঃ)এর যামানা
থেকে শুরু করে তখন পর্যন্ত সকল প্রকার ফল ও ফসল উৎপন্ন হবে।

ঈসা-(আ.) পৃথিবীতে থাকার সময়কাল?

ঈসা (আ.) বর্তমানে চতুর্থ আসমানে আছেন। কেয়ামতের আগে পথিবীতে এসে ৪৫ বছর জীবিত থাকবেন। হজরত
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ঈসা ইবনে মারিয়াম জমিনে অবতরণ করবেন। এরপর তিনি
বিয়ে করবেন এবং তার সন্তানাদিও জন্মলাভ করবে এবং তিনি ৪৫ বছর অবস্থান করবেন।

ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে কত দিন থাকবেন এ ব্যাপারে দুই ধরণের মত পাওয়া যায়। কোন কোন বর্ণনায় আছে তিনি সাত বছর অবস্থান করবেন। আবার কোন বর্ণনায় আছে চলিলশ বছরের কথা। মহানবী সা. বলেনঃ ‘‘অতঃপর তিনি চল্লিশ বছর
পৃথিবীতে অবস্থান করে মৃত্যু বরণ করবেন। মুসলমানেরা তাঁর জানাযা নামায পড়ে দাফন করবে।মুসলিম শরীফে আছে,‘‘অতঃপর মানুষেরা পৃথিবীতে সাত বছর শান্তিতে বসাবাস করবে। পরস্পরের মধ্যে কোন প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ
থাকবেনা’’।

উভয় বর্ণনার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে আলেমগণ বলেনঃ যে বর্ণনায় সাত বছরের কথা বলা হয়েছে সেখানে
অবতরণ করার পর সাত বছরের কথা বলা হয়েছে। আর যেখানে চল্লিশ বছরের কথা বলা হয়েছে সেখানে আকাশে উঠিয়ে
নেয়ার সময় তাঁর বয়সকে পুনরায় হিসাব করে দেখানো হয়েছে।

অতঃপর তিনি ইন্তেকাল করবেন। তাকে আমার সঙ্গে আমার কবরের সঙ্গে দাফন করা হবে। কেয়ামতের দিন আমি ও
ঈসা ইবনে মারিয়াম একই কবরস্থান থেকে আবু বকর ও ওমরের মাঝখান থেকে উত্থিত হব।’ (মিশকাত : ৫৫০৮)।