ঈমান শব্দের অর্থঃ
আরবী ‘আমন’ শব্দ থেকে ঈমান শব্দটির উৎপত্তি। আম্ন (أمن) অর্থ শান্তি, ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ: নিরাপত্তা,
আস্থা, বিশ্বস্ততা, হৃদয়ের স্থিতি ইত্যাদি। মতান্তরে দৃঢ় বিশ্বাস করা এবং সেই অনুযায়ী চলা।
ঈমান এর প্রাথমিক বিষয় হলো তিনটি:
(১) তওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদ, (২) রিসালাত বা নবী-রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস, (৩) আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস।
আসমান ও জমিন এবং এতে যা কিছু আছে সবকিছুই আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি করেছেন। তিনিই এগুলোর পরিচালক ও প্রতিপালক। প্রাণীজগতের হায়াত ও মউত, রক্ষণাবেক্ষণ, লয়-প্রলয় একমাত্র তাঁরই ইচ্ছাধীন। তিনি যখন যা ইচ্ছা করেন
তখনই তা হয়ে যায়। এই বিশ্বচরাচরে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। যুগে যুগে তাঁর সৃষ্ট
মানবজাতির জন্য সত্যের সন্ধান ও অসত্যের অবসানকারী হিসেবে উত্তম চরিত্রের অধিকারী মহামানবদেরকে পয়গম্বর বা রাসলূরূপে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। আবার হযরত জিব্রাঈল ফেরেশতার মারফত তাঁদের নিকট ওহী বা মানুষের জীবন বিধান পাঠিয়েছেন। এই পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী; আল্লাহ প্রদত্ত নির্দিষ্ট সময় ফুরিয়ে গেলে সকলকেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে আল্লাহ্ তা’আলার দরবারে উপস্থিত হতে হবে। প্রত্যেক মুমিনের জন্য ইমান আনা জরুরী এবং ঈমানের গুরুত্ব অপরিসীম।
মৃত্যুর পরে হযরত ইসরাফীল (আ.)-এর শিঙ্গার ফুৎকারে কিয়ামতের মাঠে হিসাব-নিকাশের জন্য পুনর্জীবিত হতে “হবে। দুনিয়ায় অবস্থান করে যা কিছু আমল করে গিয়েছে প্রত্যেকের আমল অনুসারে নেক বান্দাকে আল্লাহ তা’আলা বেহেশত
দান করবেন আর পাপী বান্দারা দোজখে পতিত হবে। উল্লিখিত বিষয়াবলী এবং আরো কতিপয় আনুষঙ্গিক বিষয়ের ওপর
পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করার নামই ‘ঈমান’।
ঈমান এর মৌলিক বিষয় কয়টি?
ঈমানের সত্তরটিরও বেশি শাখা প্রশাখা রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান ৭ টি বিষয়ের উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা ফরজ।
ঈমানের সাতটি স্তর হল:
১) আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয় বিশ্বাস করা।
২) আল্লাহ তাআলার ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস আনা।
৩) সমস্ত আসমানী কিতাব সমূহের উপর বিশ্বাস আনা।
৪) সকল নবী রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন।
৫) তাকদীর অর্থাৎ ভাগ্য অথবা আপনার জীবনের সকল ভাল-মন্দের উপর আল্লাহর ক্ষমতা রয়েছে তা বিশ্বাস করা।
৬) আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস করা।
৭) মৃত্যুর পরবর্তী পুনর্জীবিত হওয়া উপর বিশ্বাস করা।
পবিত্র কোরআন মজিদে সূরা আল বাকারার ২ থেকে ৪ নং আয়াতে ঈমান সম্পর্কে সকল বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
একজন প্রকৃত মুমিন হতে হলে অবশ্যই আল্লাহ তাআলার এ সকল নির্দেশের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয় তিনি ব্যতীত আর কোন মা‘বুদ নেই। এই উক্তিটি বিশ্বাস করতে হবে।
ঈমানের গুরুত্ব:
ঈমান ও ইসলাম:
আবার ঈমান হচ্ছে ইসলামের জন্য শর্ত। অর্থাৎ ইসলামের জন্য ঈমান জরুরি। ঈমান ছাড়া শুধু ইসলাম কোন কাজে
আসবে না। অর্থাৎ অন্তরে অবিশ্বাস বা কুফর নিয়ে যদি ইসলাম গ্রহণ করা হয় তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। সেটির নাম নিফাক।
যার অর্থ অন্তরে কুফরকে গোপন করে বাইরে ইসলাম পালন করা। যারা অন্তরে বিশ্বাস করে না কিন্তু বাইরে ইসলাম পালন
করে তারা মুনাফিক। তাদের ইসলাম পালন কোন কাজে আসবে না অন্তরে ঈমান না থাকার কারনে। এরা জাহান্নামের
নিম্নদেশে অবস্থান করবে।
ঈমান ছাড়া শুধু ইসলাম ইবাদাত বলে গন্য হবে না। তাই আমাদেরকে তাওহীদের যাবতীয় বিষয়ের উপর অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে তারপর মুখে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে। তবেই সেটা ইবাদাত হিসাবে আল্লাহর
নিকটে গ্রহণযোগ্য হবে।