ঈমান কি? এবং ঈমানের স্তর কয়টি?

ঈমান শব্দের অর্থঃ
আরবী ‘আমন’ শব্দ থেকে ঈমান শব্দটির উৎপত্তি। আম্ন (أمن) অর্থ শান্তি, ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ: নিরাপত্তা,
আস্থা, বিশ্বস্ততা, হৃদয়ের স্থিতি ইত্যাদি। মতান্তরে দৃঢ় বিশ্বাস করা এবং সেই অনুযায়ী চলা।

শরীয়তের পরিভাষায় ঈমান হল: হযরত মুহাম্মদ (সা:) আল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা সহ তার প্রতি
আস্থাশীল হয়ে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা কে ঈমান বলে। অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে মুখে উচ্চারণ করা ও আমলে পরিনত
করার মাধ্যমে ঈমান পরিপূর্ণতা লাভ করে।তাই পরিপূর্ণ মুমিন সেই ব্যক্তি যিনি শরীয়তের বিষয়গুলো পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করেন এবং এগুলোর মৌখিক স্বীকৃতি সহ বাস্তব জীবনে আমল করে চলেন।

 

ঈমান এর প্রাথমিক বিষয় হলো তিনটি:

(১) তওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদ, (২) রিসালাত বা নবী-রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস, (৩) আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস।
আসমান ও জমিন এবং এতে যা কিছু আছে সবকিছুই আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি করেছেন। তিনিই এগুলোর পরিচালক ও প্রতিপালক। প্রাণীজগতের হায়াত ও মউত, রক্ষণাবেক্ষণ, লয়-প্রলয় একমাত্র তাঁরই ইচ্ছাধীন। তিনি যখন যা ইচ্ছা করেন
তখনই তা হয়ে যায়। এই বিশ্বচরাচরে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। যুগে যুগে তাঁর সৃষ্ট
মানবজাতির জন্য সত্যের সন্ধান ও অসত্যের অবসানকারী হিসেবে উত্তম চরিত্রের অধিকারী মহামানবদেরকে পয়গম্বর বা রাসলূরূপে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। আবার হযরত জিব্রাঈল ফেরেশতার মারফত তাঁদের নিকট ওহী বা মানুষের জীবন বিধান পাঠিয়েছেন। এই পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী; আল্লাহ প্রদত্ত নির্দিষ্ট সময় ফুরিয়ে গেলে সকলকেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে আল্লাহ্ তা’আলার দরবারে উপস্থিত হতে হবে।  প্রত্যেক মুমিনের জন্য ইমান আনা জরুরী এবং ঈমানের গুরুত্ব অপরিসীম।
মৃত্যুর পরে হযরত ইসরাফীল (আ.)-এর শিঙ্গার ফুৎকারে কিয়ামতের মাঠে হিসাব-নিকাশের জন্য পুনর্জীবিত হতে “হবে। দুনিয়ায় অবস্থান করে যা কিছু আমল করে গিয়েছে প্রত্যেকের আমল অনুসারে নেক বান্দাকে আল্লাহ তা’আলা বেহেশত
দান করবেন আর পাপী বান্দারা দোজখে পতিত হবে। উল্লিখিত বিষয়াবলী এবং আরো কতিপয় আনুষঙ্গিক বিষয়ের ওপর
পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করার নামই ‘ঈমান’।

ঈমান এর মৌলিক বিষয় কয়টি?

ঈমানের সত্তরটিরও বেশি শাখা প্রশাখা রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান ৭ টি বিষয়ের উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা ফরজ।
ঈমানের সাতটি স্তর হল:
১) আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয় বিশ্বাস করা।
২) আল্লাহ তাআলার ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস আনা।
৩) সমস্ত আসমানী কিতাব সমূহের উপর বিশ্বাস আনা।
৪) সকল নবী রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন।
৫) তাকদীর অর্থাৎ ভাগ্য অথবা আপনার জীবনের সকল ভাল-মন্দের উপর আল্লাহর ক্ষমতা রয়েছে তা বিশ্বাস করা।
৬) আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস করা।
৭) মৃত্যুর পরবর্তী পুনর্জীবিত হওয়া উপর বিশ্বাস করা।

পবিত্র কোরআন মজিদে সূরা আল বাকারার ২ থেকে ৪ নং আয়াতে ঈমান সম্পর্কে সকল বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
একজন প্রকৃত মুমিন হতে হলে অবশ্যই আল্লাহ তাআলার এ সকল নির্দেশের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয় তিনি ব্যতীত আর কোন মা‘বুদ নেই। এই উক্তিটি বিশ্বাস করতে হবে।

রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, “ঈমানের সত্তরের অধিক শাখা-প্রশাখা রয়েছে, তার মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে ,”আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই”একথার সাক্ষ্য দেওয়া এবং সর্বনিম্ন শাখা হলো কষ্ট দায়ক জিনিস রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জা ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা।” (বুখারী ও মুসলিম)
ঈমানের গুরুত্ব:
ইসলামের ঈমানের গুরুত্ব অপরিসীম। এর প্রধান কয়েকটি নিম্নে দেওয়া হল-
এটি ব্যতীত মানব জীবন মূল্যহীন। কেননা ইমান হল ইসলামের মূল ভিত্তি। মহান আল্লাহ তা’য়ালা সমগ্র মানবমন্ডলীকে
সৃষ্টি করার পর ,তার প্রতি ইমান আনার নির্দেশ দিয়েছেন এ কারণে ঈমানের গুরুত্ব অপরিসীম। ইহকালীন কল্যাণ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এটি ব্যতীত কোন আমলই আল্লাহ তাআলার নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।
তাই পরকালীন মুক্তির জন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম। ইমান মানবতার সোপান। কেননা এটি ব্যতীত কেউ নিজের অস্তিত্ব
কল্পনা করতে পারে না। আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন ব্যতীত কেউ সফলতা লাভ করতে পারবে না। এ দৃষ্টিকোণ থেকে
ঈমান হল মনুষ্যত্বের চালিকাশক্তি।

ঈমান ও ইসলাম:

ঈমানের দাবী হচ্ছে ইসলাম গ্রহণ করা। আর ইসলাম হচ্ছে কথা এবং কাজ; অর্থাৎ মুখে স্বীকৃতি দেয়া এবং কাজে বাস্তবায়ন করার নামই হচ্ছে ইসলাম; ঈমানের সাথে সাথে ইসলাম খুবই জরুরি। ইসলাম হচ্ছে ঈমানের বহিঃপ্রকাশ; ঈমান অর্থাৎ
অন্তরে বিশ্বাস একেবারে মূল্যহীন যদি না ইসলামকে গ্রহণ করা হয়; শুধু ঈমান অর্থাৎ শুধু অন্তরে বিশ্বাস কোন কাজে
আসবে না যদি ইসলামকে গ্রহণ না করা হয় অর্থাৎ মুখে স্বীকৃতি প্রদান এবং কাজে বাস্তবায়ন না করা হয়; যেমন সম্রাট হিরাক্লিয়াস এর ঈমান কোন কাজে আসেনি ইসলামকে গ্রহণ না করার কারনে।

আবার ঈমান হচ্ছে ইসলামের জন্য শর্ত। অর্থাৎ ইসলামের জন্য ঈমান জরুরি। ঈমান ছাড়া শুধু ইসলাম কোন কাজে
আসবে না। অর্থাৎ অন্তরে অবিশ্বাস বা কুফর নিয়ে যদি ইসলাম গ্রহণ করা হয় তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। সেটির নাম নিফাক।
যার অর্থ অন্তরে কুফরকে গোপন করে বাইরে ইসলাম পালন করা। যারা অন্তরে বিশ্বাস করে না কিন্তু বাইরে ইসলাম পালন
করে তারা মুনাফিক। তাদের ইসলাম পালন কোন কাজে আসবে না অন্তরে ঈমান না থাকার কারনে। এরা জাহান্নামের
নিম্নদেশে অবস্থান করবে।

ঈমান ও ইসলাম পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। ঈমান ছাড়া যেমন ইসলাম মূল্যহীন তেমন ইসলাম ছাড়া ইমান মূল্যহীন। একটি ছাড়া অপরটি গ্রহণযোগ্য নয়। ঈমান এবং ইসলাম এই দুটির সমন্বয়ই হচ্ছে ইবাদাত। অর্থাৎ তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের যাবতীয় বিষয়কে অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকৃতি দেয়া এবং কাজে বাস্তবায়ন করার নামই ইবাদাত। আর আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদাত করার জন্য। ইসলাম ছাড়া শুধু ইমান ইবাদাত বলে গন্য হবে না আবার

ঈমান ছাড়া শুধু ইসলাম ইবাদাত বলে গন্য হবে না। তাই আমাদেরকে তাওহীদের যাবতীয় বিষয়ের উপর অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে তারপর মুখে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে। তবেই সেটা ইবাদাত হিসাবে আল্লাহর
নিকটে গ্রহণযোগ্য হবে।