ইভটিজিং একটি সামাজিক ব্যাধি ও জাতীয় কলঙ্ক। আমাদের সমাজে এখন তাভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সকলেই নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এর প্রতিকার নিয়ে ভাবছেন। আইন হচ্ছে, শাস্তি হচ্ছে, মিছিল-মানববন্ধন হচ্ছে। পত্রিকাগুলোতেকলাম, ফিচার লেখা হচ্ছে, টিভি প্রতিবেদন হচ্ছে। সকলেই চান জাতিকে এইকলঙ্ক থেকে মুক্ত করতে। কেউ একটি মত পেশ করছেন, অন্যজন তা খন্ডন করে আরেকটি পথ বাতলাচ্ছেন। তাই স্রষ্টার দেয়া সমাধান তুলে ধরাই আমার এ প্রবন্ধের উদ্দেশ্য।তিনিই তো সৃষ্টি করেছেন নারী ও পুরুষ। তাদেরকে দিয়েছেন ভালো ও মন্দ স্বভাব।সুতরাং তাঁর নিকট থেকেই নির্দেশনা নিতে হবে; ভালো স্বভাবকে কীভাবে কাজেলাগানো যায় এবং মন্দ স্বভাব থেকে কীভাবে বেঁচে থাকা যায়। আর তার কাছ থেকেইজানা দরকার কোন্ রোগের নিরাময় কিসে। কীভাবে আমরা বাঁচতে পারব ইভটিজিংএবং এ জাতীয় সামাজিক অবক্ষয় থেকে। ইসলাম নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তার সকলব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং এ জাতীয় সমস্যার সমাধানে আল্লাহ তাআলা নারী পুরুষ উভয়কে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, যা মেনে চললে আমরা ইভটিজিং এবং সামাজিকআরো অনেক সমস্যা থেকে বাঁচতে পারব ইনশাআল্লাহ্। এ সকল নির্দেশনার মূলকথাহলো, আল্লাহ পুরুষকে তার দৃষ্টি অবনত রাখতে বলেছেন
এরপর প্রথম কথা হল, নারীর অবস্থানস্থল ও কর্মস্থল ঘর। এখানে বসেই নারী একটি
সৎ ও যোগ্য জাতি নির্মাণের দায়িত্ব পালন করে। এখানেই সে ইভটিজিং থেকে বেশি নিরাপদ। সুতরাং এ কথা ভাবার কোনো অবকাশ নেই যে, যে নারী ঘরে বসে এ মহান
দায়িত্ব পালন করছে,সে জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছে না। সুতরাং ঘরের
বাইরের উন্নয়নেও তাকে অংশগ্রহণ করতে হবে। জাতির উন্নয়নের দুই ক্ষেত্র : ঘর ও
বাহির। এ দুইয়ের একটি ক্ষেত্র যখন খালি ও গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে তখন অপর ক্ষেত্রে
শত চেষ্টা করেও উন্নতি লাভ সম্ভব হবে না। মানবোন্নয়নই নারীর প্রধান কাজ; কোম্পানির পণ্য উৎপাদন নয়। প্রয়োজনে যদি নারীকে ঘর থেকে বের হতে হয় আর প্রয়োজনে যদি তাকে ঘর থেকে বের হতে হয় তাহলে সে যেন জাহেলী যুগের নারীদের মত নিজেকে প্রদর্শন না করে। কারণ নারীর নিরাপত্তাহীনতার প্রথম কারণ হল নিজেকে অশালীনভাবে
মানুষের সামনে পেশ করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন- আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান কর।আর প্রাকজাহেলী যুগের মত নিজেদের প্রদর্শন করো না। তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগত থাক। হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান। আর তোমাদের ঘরে আল্লাহর আয়াত ও যে জ্ঞানের কথা আলোচনা হয় তা স্মরণ রাখ। আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী ও সব বিষয়ে অবহিত। সূরা আহযাব : ৩৩-৩৪
নারী হল ‘আওরাত’
হাদীসে বেগানা নারীকে বলা হয়েছে ‘আওরত’ যার অর্থ এমন বস্ত্ত, যা লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা উচিৎ। মহানবী স. বলেন- নারী হল ‘আওরত’। (অর্থাৎ যার লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা উচিৎ।) নারী যখন ঘর
থেকে বের হয় (নিজেকে মানুষের সামনে প্রকাশ করে) তখন শয়তান তার দিকে বিশেষ
দৃষ্টি দেয়।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৭৩
”নারীরা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং
নারীদের গোপন অংগ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো সামনে তাদের সাজ-সজ্জা
প্রকাশ না করে”।-সূরা নূর : ৩১
ইভটিজিংএড়াতে ঘরের বাইরে নারীর পোষাক
প্রয়োজনের তাগিদে যদি নারীকে ঘর থেকে বের হতে হয় তাহলে সে কীভাবে বের
হবে তাও আল্লাহ বলে দিয়েছেন, যা মানলে নারী ইভটিজিং এর শিকার হবে না।
অর্থ: হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে এবং মুমিনদের নারীগণকে
বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে
তাদেরকে চেনা সহজ হবে এবং তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না।-সূরা আহযাব : ৫৯
আল্লামা তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম তার Nobel Quran -এ فلا يؤذين এর
তরজমা করেছেন Hence not teased তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। স্রষ্টার চেয়ে
কে আর ভালো বলতে পারবেন যে, তার সৃষ্টির রোগ কী ও তার প্রতিকার কীসে?
এ আয়াতে ইভটিজিংয়ের সমাধানে নারীর প্রতি একটি মৌলিক নির্দেশনা এসেছে।
আর তা হল-নারী যেন বাইরে বের হলে তার জিলবাব দ্বারা চেহারা ও শরীর আবৃত
করে, পর্দার সাথে বের হয়, অশালীনভাবে বের না হয়। নতুবা ‘রুগ্ন’ পুরুষ তার প্রতি
প্রলুব্ধ হবে ও কুদৃষ্টি দিবে। তাফসীরে কুরতুবীতে (১৪/২৪৩) জিলবাবের অর্থ করা
হয়েছে, এমন বড় চাদর, যা দ্বারা মুখমন্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়।
লজ্জা নারীর স্বভাবজাত বিষয়। আমরা দেখি মেয়ে শিশু স্বভাবতই লজ্জাশীলা হয়।
কিন্তু পরিবেশ এই স্বভাবকে অসুস্থ করে তোলে। যেমন হাদীসে এসেছে ‘‘প্রতিটি শিশুই ইসলাম গ্রহণের স্বভাবজাত যোগ্যতা নিয়ে জন্ম নেয়, কিন্তু মাতা পিতা তাকে ইহুদী বা নাসারা বানায়’’।
আর লজ্জা ও শালীনতাবোধ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শালীনতার চূড়ান্ত শরয়ী রূপ হল পর্দা। পর্দার মধ্যে বড় ওড়না বা বোরকা, সেগুলো আকর্ষণীয় না হওয়া, কথার আওয়াজ কোমল
ও আকর্ষণীয় না হওয়া, কথার বিষয়বস্ত ও বাক্য শালীন হওয়া, চলার ভঙ্গি ও অঙ্গভঙ্গি মার্জিত হওয়া, বাইরে বের হলে সুগন্ধি ব্যবহার না করা, আকর্ষণ ও প্রদর্শন থেকে বিরত থাকা, পবিত্র মানসিকতা, আল্লাহর ভয় ইত্যাদি অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত। আর সবগুলো বিষয় পালন করার জন্য শুধু একটি বিষয় প্রয়োজন। তা হল তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়।
জাহান্নামের আগুন অনেক বেশি উত্তপ্ত
হযরত সাফিয়্যা বিনতে শাইবা বলেন, ‘‘আমরা আয়েশা রা.-এর কাছে বসা ছিলাম।
কুরাইশ গোত্রের নারী এবং তাদের গুণাবলির প্রসঙ্গ আলোচনায় এল। তখন হযরত
আয়েশা রা. বললেন, কুরাইশ বংশের নারীদের বিশেষত্ব অবশ্যই আছে, তবে আমি আনসারী নারীদের চেয়ে কিতাবুল্লার প্রতি অধিক বিশ্বাসী ও আস্থাশীল আর কাউকে দেখিনি। যখন সূরা নূরের এই আয়াত অবতীর্ণ হল- ‘এবং তারা যেন তাদের বক্ষদেশে
ওড়না জড়িয়ে রাখে’ তখন তাঁদের পুরুষগণ নিজ-নিজ ঘর বাড়িতে তাদের স্ত্রী, কন্যা
ও বোনদের গিয়ে এই আয়াত শোনালেন আর অমনি তারা বড় বড় চাদর দিয়ে
নিজেদেরকে সম্পূর্ণরূপে আবৃত করে ফেলল। এটা ছিল আল্লাহর কিতাবের প্রতি
তাদের নিষ্কম্প বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। কিতাবুল্লাহর প্রতি আনসারী সাহাবিয়াগণের
এই একনিষ্ঠ আনুগত্যের বর্ণনা দেওয়ার পর ড. মুহাম্মাদ আলী আলহাশেমী বলেন,
এবার আমি দামেস্ক ইউনিভার্সিটির একজন মুসলিম পর্দানশীন তরুণীর কথা বলব,
যার অন্তরের অবিচল আনুগত্যও সেই মহান আনসারী সাহাবিয়াগণের সাথেই
সাদৃশ্যপূর্ণ। তাকে একজন অতিথি সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিল, ‘‘এই প্রচন্ড গ্রীষ্মের
গরমে আপনি কীভাবে বোরকাবৃত থাকেন? আপনার কি গরম লাগে না? তরুণীটি
এর উত্তরে কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করলেন- ‘বলে দিন, জাহান্নামের আগুন এরচেয়ে অনেক বেশি উত্তপ্ত।’ নিঃসন্দেহে এমন পবিত্রাত্মা মুসলিম নারীর মাধ্যমেই মুসলিম ঘরসমূহ আবাদ হয়, নতুন প্রজন্ম গড়ে ওঠে পবিত্র বৈশিষ্ট্যাদি নিয়ে এবং এদের
মাধ্যমেই মুসলিমসমাজে জন্ম নেয় সমাজসংস্কারক কর্মবীর সন্তানেরা।’’-শাখসিয়্যাতুল মারআতিল মুসলিমা ৫১-৫২
আসলে এ জাতীয় প্রশ্ন আসে আল্লাহর বিধানের প্রতি সমর্পণের অভাব থেকে। নইলে
প্রচন্ড গরমে ভরদুপুরের রোদে গামবুট আর খাকি পোশাক পরা পুলিশ বা আর্মিকে তো কেউ জিজ্ঞেস করে না-এত মোটা পোশাক পরে আছেন, আপনার গরম লাগে না?
শালীন পোষাক ইভটিজিং রোধে সহায়ক
নারীর পোষাক যেন আটসাঁট ও উগ্র না হয় এবং ভাবভঙ্গি ও চালচলন যেন অশালীন
না হয়-এ বিষয়ে হাদীসে সতর্ক করা হয়েছে। নবী সা. বলেছেন- কতক নারী আছে
যারা পোষাক পরেও নগ্ন, যারা (পরপুরুষকে) আকর্ষণকারী ও (পরপুরুষের প্রতি)
আকৃষ্ট। যারা বুখতী উটের হেলানো কুঁজের মতো মাথা বিশিষ্ট। এরা জান্নাতের সুবাস
পর্যন্ত পাবে না।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২১২৮; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৮৬৬৫
৩০/০৭/১২ তারিখে একটি পত্রিকার শিরোনাম দেখলাম ‘‘নারীদের ক্ষুদ্র পোশাক
তরুণদের প্রলুব্ধ করে’’ সেখানে একজন সাবেক অভিনেতা ও বর্তমান রাজনীতিবিদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে, তিনি নারীদেরকে ইভটিজিং থেকে নিরাপদ থাকতে পোশাক-আশাকে শালীনতা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, ‘‘নারীদের
উগ্র ও উত্তেজক পোশাক পরিধানও ইভটিজিং বৃদ্ধির জন্য অনেকাংশে দায়ী … তা কমবয়সী তরুণদের প্রলুব্ধ করে’’ বক্তার নাম বলার প্রয়োজন নেই, বড় বিষয় হল তিনি
এমন ময়দানের মানুষ, যিনি পূর্ণ উপলব্ধির সাথে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে সক্ষম।
এ ছাড়া আরো কয়েকটি দৈনিকের শিরোনাম ছিল : ‘‘ইভটিজিং রোধ জরুরী, গণজাগরণ সৃষ্টি, ধর্মীয় সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের’’।
পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করব না
ইসলাম নারীদের পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে।
হযরত ইবনে আববাস রা. বলেন, যে সকল নারী পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে এবং
যে সকল পুরুষ নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে রাসূল. সা. তাদেরকে লানত করেছেন।
জামে তিরমিযী,
অভিভাবক সচেতনতা ইভটিজিং রোধে ভূমিকা রাখতে পারে
আমাদের এ কথা মনে করার কোনো অবকাশ নেই যে, আমার ইচ্ছা হলে মানলাম
ইচ্ছা না হলে মানলাম না। এ কথা ভালো করে বুঝতে হবে, ইসলামের সকল
অপরিহার্য বিধানই মুমিনের জন্য বাধ্যতামূলক, ঐচ্ছিক নয়। এখানে আমার মন চাওয়া
না চাওয়া, ভালো লাগা না লাগার কোনো স্থান নেই। যে মেনে নেবে সে দুনিয়া ও
আখেরাতে নিরাপদ থাকবে আর যে মানবে না তার কর্মের ফল সে ভোগ করবে;
দুনিয়াতে ও আখেরাতে। আর ইভটিজিং ও এ জাতীয় অন্যায় থেকে বেঁচে থাকতে
পুরুষকে মৌলিক নির্দেশনা দিয়েছেন যে, সে যেন তার দৃষ্টি অবনত রাখে। কারণ
এখান থেকেই শুরু ইভটিজিং এর। পুরুষ যেন দৃষ্টিকে সংযত করে
নারী যখন বাইরে বের হয় কিংবা পিতা বা স্বামী যখন তার কন্যা বা স্ত্রীকে নিয়ে বাইরে
যান তখন কেন এমন পোষাকে নারীকে নিয়ে বের হন, যা বখাটেদের ইভটিজিং এর
প্রতি উৎসাহিত করে?! কোনো পিতা বা স্বামী চায় না তার কন্যা বা স্ত্রীর প্রতি কেউ
কুদৃষ্টি দিক অথচ তারা এমন পোশাকে তাদেরকে নিয়ে বের হন যা সুশীল পুরুষকেও অন্যায় দৃষ্টির প্রতি প্রলুব্ধ করে। অন্যদিকে কোনো পুরুষই চায় না (এমনকি যে ছেলে কোনো মেয়েকে উত্যক্ত করে সে-ও না) যে, তার মা-বোনের প্রতি কেউ অন্যায় দৃষ্টি
দিক, তাহলে সে কেন অন্য নারীর প্রতি কুদৃষ্টি দেয়?!
প্রকৃত মুসলিম সে যার যবান ও হাত থেকে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে।-সহীহ
বুখারী, হাদীস :১০ আমার মুখের দ্বারা, আমার হাতের দ্বারা, এমনকি আমার নযরের
দ্বারা আমার মুসলিম বোন কষ্ট পাবে তা হতে পারে না। আমি তো মুসলিম, কীভাবে
আমার দ্বারা ইভটিজিং হতে পারে? ইসলামই তো নারীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তার দায়িত্ব
নিয়েছে এবং তার মর্যাদার নিশ্চয়তা দিয়েছে । আমারও তো সে দায়িত্ব।
ইভটিজিং রোধে মিডিয়ার দায় অনেক। প্রিন্ট মিডিয়া এক্ষেত্রে কিছুটা ভূমিকারাখলেও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার ভূমিকা এক্ষেত্রে একেবারেই গৌণ; বরং তারা এ বিষয়টিকে আরো উস্কে দিচ্ছে। টিভি চ্যানেলের প্রতিটি অনুষ্ঠানই ইভটিজিং ও এ জাতীয় অন্যায়ের প্রতি উদ্বুদ্ধকারী। এসবের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে এফ.এম রেডিও চ্যানেলগুলো। এগুলোর স্রোতে আমাদের তরুণ-তরুণীরা যেন ভেসে চলেছে। সারাদিন গান, কানে কানে হেডফোন। তারপর রাত জেগে আড্ডা, ভূত এফ.এম, আরো কত কী। যে সমস্ত ঘরে এখনো টি.ভি নেই তারাও এফ.এম-এর কাল থাবা থেকে বাঁচতে পারছে না। সমাজ ও সরকারের হাতে এখনো সময় আছে এগুলোর লাগাম টেনে ধরার।ইভটিজিং এ সহায়তা করছে পোশাক শিল্প সব কিছুর একটা নিয়ম নীতি থাকে এবং সব বিষয়ের একটা নিয়ন্ত্রণ থাকতে হয়। কিন্তু পোশাক শিল্পে যেন কোনো নিয়ম নীতি নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই। জোরে হর্ণ বাজালে হয় শব্দদূষণ,গাড়ির বা কল-কারখানার কালো ধোঁয়ায়হয় পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ূ পরিবর্তন। কিন্তু অশালীন পোশাকের যেন কোনো দূষণনেই, পরিবেশ ও সমাজের উপর যেন পোশাকের ভাল মন্দের কোনো প্রভাব নেই। যারযা খুশি উৎপাদন কর ও বাজারজাত কর, যা খুশি কেন ও পর। পাবলিক প্লেসে সিগারেট দুর্গন্ধ ছড়ায়, অন্যের ক্ষতি হয়, সুতরাং ‘‘ধূমপান নিষেধ’’। কিন্তু পাবলিক প্লেসে অশালীন পোশাক পরলে কোনো দুর্গন্ধও ছড়ায় না, কারো হৃদয় আক্রান্তও হয় না।
ইমাম-খতীব ও শিক্ষকদের সবাই শ্রদ্ধার চোখে দেখে এবং তাদের কথা মানার চেষ্টা করে। বিশেষ করে শিক্ষকগণ যদি ছোট থেকেই শিক্ষার্থীর মানসিকতা উন্নত করতে চেষ্টা করেন তাদের ভালো মন্দ, কল্যাণ অকল্যাণ বোঝাতে পারেন তা শিশুকে সুস্থ মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে।একটি সুন্দর সমাজ ব্যক্তিকে ভালো বা মন্দ বানাতে পারে। এজন্য পরিবার ও রাষ্ট্রেরদায়িত্ব সমাজকে সুন্দর করা। উঠতি বয়সের একটি ছেলে বা মেয়ে চারিদিকে যা দেখে সেভাবেই নিজেকে গড়তে চায়। টি.ভি চ্যানেলে যা দেখে নিজের বাস্তব জীবনকেওসেভাবে ভাবে। তার তো আর এই বোধ নেই যে, আমি যা দেখছি তা নিছক অভিনয়।ফলে পিতা-মাতার আদেশ অবুঝ সন্তানের কাছে অরুচিকর মনে হয় এবং এর মধ্যেইযে তার কল্যাণ রয়েছে তা বুঝে আসে না। গলিত সমাজের নানামুখী প্রচারণার মধ্যে ইসলামী অনুশাসন তাদের কাছে বিরক্তিকর মনে হয়। কিন্তু এতেই যে রয়েছে তার সুস্থ-সুন্দর-শালীন জীবনের প্রতিশ্রুতি তা-ও তার বোধগম্য হয় না।মোটকথা, নারী পুরুষের মানসিকতা, তাদের চিন্তা চেতনা, সংস্কৃতি, পোশাক, টি.ভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান সব হবে ইভটিজিং ও এ জাতীয় অন্যায়ের প্রতি উদ্বুদ্ধকারী।আর এসব কিছু আপন অবস্থায় বহাল রেখে শুধু আইন করে, শাস্তি দিয়ে, আর কলাম লিখে ও মানব বন্ধন করে সব ঠিক করে ফেলা যাবে এমনটি ভাবার কোনো অবকাশ নেই। রোগের বীজ কার্যকর রেখে নিরাময়ের আশা দূরাশা নয় কি? অবশ্যই দূরাশা। শেকড়ে বিষ রেখে আমরা বৃক্ষের ফল সুমিষ্ট পাব-এটা হতে পারে না।বাস্তবতা বুঝতে হবে। জীবনযাপন ও অনুশীলনের মূল জায়গাটায় মনোযোগ না দিলে এর ফলাফল নিয়ে ভাবিত হওয়ায় কোনো সুফল নেই। এতে কেবল ভাবনা-দুশ্চিন্তার পরিমাণ বাড়তেই পারে, কমবে না।সুতরাং আমরা যদি আমাদের সমাজকে ইভটিজিং ও এ জাতীয় অন্যায় থেকে রক্ষা করতে চাই তাহলে স্রষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে হবে। আসুন, আমরা চেষ্টা করি এবং শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সমাজের সকল অঙ্গনে আল্লাহর নির্দেশনা মেনে চলি। যারা বুঝি তারা অন্যদের বোঝাতে চেষ্টা করি।