ইবাদত এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা (২য় পর্ব)

ইবাদতের স্তরসমূহ : (ইবাদত এর শাব্দিক অর্থ উপাসনা, পূজা, অর্চনা ইত্যাদি।)
ইবাদতের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। যথা- ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাব। এর মধ্যে কিছু উম্মতের ঐক্যমতের ভিত্তিতে আর
কিছু দলীলের ভিত্তিতে নির্ণীত। এভাবে স্তরের ভিন্নতা শরী‘আত প্রণেতার সম্বোধন, নির্দেশিত বিষয় কাজে বাস্তবায়ন এবং বর্জনীয় বিষয় পরিহার করার মাধ্যমে হয়ে থাকে।
ফরয বা ওয়াজিব : যে ইবাদত পালনের জন্য ছওয়াব পাওয়া যায় এবং যা পরিত্যাগকারী শাস্তির হকদার হয়। যেমন পাঁচ
ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা, রামাযান মাসের ছিয়াম পালন করা, নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক কর্তৃক যাকাত দেওয়া ও সামর্থ্যবান ব্যক্তি কর্তৃক হজ্জ পালন করা ইত্যাদি।
সুন্নাত : যে ইবাদত রাসূল (ছাঃ) করেছেন, করতে বলেছেন বা সমর্থন করেছেন। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত সংশ্লিষ্ট সুন্নাত
আদায় করা, ই‘তিকাফ করা ইত্যাদি।
মুস্তাহাব : যে ইবাদত করলে ছওয়াব পাওয়া যায় কিন্তু পরিত্যাগকারীর শাস্তি হয় না। যেমন ওযূর পূর্বে মিসওয়াক করা,
আযানের জওয়াব দেওয়া ইত্যাদি।

ইবাদত এর রুকনসমূহ :

ইবাদতের রুকন তিনটি।
১. আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ মহববত : আল্লাহর মহববত হচ্ছে ইসলামের মূল ভিত্তি। যার উপর ইসলামের ইবাদতসমূহ প্রতিষ্ঠিত।
দেহের সাথে মাথার যেমন সম্পর্ক, ইবাদতের সাথে আল্লাহর মহববতের তদ্রূপ সম্পর্ক। অতএব যে দেহের মাথা নেই
তার প্রাণ নেই। অনুরূপ যে ইবাদতে আল্লাহর মহববত নেই সেই ইবাদত অস্তিত্বহীন।
২. আশা করা : রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণে মানুষ আল্লাহর জন্য যেসব ইবাদত করবে, তাতে সে আল্লাহর কাছে ছওয়াবের
আশা করবে। আর আল্লাহর অশেষ দান ও অগণিত অনুগ্রহে সে আনন্দিত হবে। এ অনুগ্রহ ও নে‘মত সমূহের জন্যও সে আল্লাহর রহমত কামনা করবে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং যারা হিজরত করেছে ও আল্লাহর পথে
জিহাদ করেছে, তারাই আল্লাহর রহমত আশা করে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (বাক্বারাহ ২/২১৮)।
হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি আমার বান্দার ধারণামত হয়ে তার সাথে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে’।
বান্দার জন্য উচিত আল্লাহর রহমত, ছওয়াব এবং ক্ষমা চাওয়ার সাথে সাথে শরী‘আত অনুযায়ী আমল করা, সৎ কাজের
আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধকে বাস্তবে রূপ দানের চেষ্টা করা। কারণ সৎ আমল ছাড়া জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম
থেকে মুক্তির আশা করা ধোঁকাবাজী বৈ কিছুই নয়।
৩. আল্লাহর ভয় :
আল্লাহকে ভয় করা প্রত্যেকের উপর ফরয। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই এরাই সে শয়তান শুধুমাত্র তার বন্ধুদের থেকে
তোমাদের ভয় দেখায়। কিন্তু যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক তবে তাদের ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় কর’
(আলে ইমরান ৩/১৭৫)।
মুমিনদের মধ্যে সর্বদা আশা ও ভীতি বিরাজ করে। আর মুনাফিকদের মধ্যে বিরাজ করে অকল্যাণ ও বাসনা। ইসলামী
শরী‘আত বান্দার নিকট এমন ভীতি কামনা করে, যা তার মধ্যে ও আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তসমূহ লঙ্ঘন করার মাঝে
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কারণ এ সীমা অতিক্রম করলে আল্লাহর রহমত হতে হতাশা জন্ম নিতে পারে। আর আল্লাহর
রহমত থেকে নিরাশ হওয়া কাফিরদের বৈশিষ্ট্য।

আশা ও ভীতির মধ্যবর্তী অবস্থান :

বান্দার জন্য অবশ্য করণীয় হচ্ছে আশা ও ভীতির মধ্যে অবস্থান করা। কেবল আশাহীন ভয়ের মধ্যে থাকাই নিরাশা ও
হতাশা। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত থেকে কেউ নিরাশ হয় না অবিশ্বাসী সম্প্রদায় ব্যতীত’ (ইউসুফ ১২/৮৭)।
আশা ও ভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য বিধানকালে বান্দার উচিত স্বীয় মনের অবস্থার প্রতি খেয়াল রাখা। কারণ যখন আল্লাহর ভয়
মনে অতি প্রবল হয়ে উঠে তখন তাঁর রহমত হতে নিরাশ হয়ে যায়। তখন বান্দার জন্য করণীয় হল উভয়ের মাঝে তুলনা
করা এবং ভয়ের প্রবলতা কমানো। আর যখন আশার দিকটা প্রবল হয়ে ওঠে তখন আল্লাহর পাকড়াওকে পরোয়া করে না। যেমন সুস্থতা ও ইবাদত-বন্দেগী করার পর। তখন বান্দা আশা ও ভীতির মাঝে তুলনা করবে এবং আশার প্রবলতা কাটিয়ে
উঠবে। যদি আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হওয়ার অথবা আল্লাহর পাকড়াও থেকে উদাসীন হবার ভয় না থাকে, তবে উভয়ের মাঝে তার সমতা হয়েছে বলে ধরে নেয়া যাবে।
মানুষের হৃদয়ে আল্লাহর ভয় উদাহরণত পাখীর মত। মহববত তার মাথা, আশা এবং ভয় তার দু’টি ডানা। যখন মাথা এবং
ডানা দু’টি ভালো থাকবে, পাখীর উড্ডয়নও ভালো হবে। মাথা কেটে ফেলা হলে পাখীর মৃত্যু ঘটবে। আর দু’টি ডানা নষ্ট
হলে পাখিটি শিকারীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। বান্দার উচিত এই তিনটি রুকন সম্মিলিতভাবে তার প্রতিপালকের ইবাদতের মধ্যে প্রতিফলন ঘটানো। একটা বা দু’টার প্রতিফলন ঘটানো ও বাকীটা বর্জন বৈধ নয়।
বস্তুত: আল্লাহর ভয় ছাড়া মহববত সামান্য কিছু পাপ থেকে বাঁচাতে পারে। আশাহীন ইবাদত মিথ্যা দাবী মাত্র। এজন্য যারা
ভয় করে না, শুধু মহববতের দাবী করে তারা বেপরোয়া গোনাহে জড়িয়ে পড়ে। যেমন ইহুদী সম্প্রদায়। তারা পাপ কাজে
সারা পৃথিবীর শীর্ষে। এমনিভাবে শুধুমাত্র আশা করার মধ্যে শিথিলতার জন্ম দেয়। এক পর্যায়ে সে আল্লাহর কৌশলকে
আল্লাহর পক্ষে তার জন্য আশ্রয় মনে করে এবং পাপাচার ও বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়। আবার শুধু ভীতি বান্দাকে হতাশার
দিকে নিয়ে যায় এবং আল্লাহর ব্যাপারে ভুল ধারণা জন্ম দেয়। অতএব বান্দা তার ইবাদত-বন্দেগীসহ সকল কাজে আল্লাহর মহববত, আশা ও ভীতির সম্মিলন ঘটাবে এবং এটাই তাওহীদ ও ঈমান।

 

১. ইবাদত এর উদ্দেশ্য শরী‘আত সম্মত হওয়া :

কোন মানুষ যদি এমন কোন ইবাদত করে যা শরী‘আত সাব্যস্ত করেনি অর্থাৎ যে ব্যাপারে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশনা নেই, তাহলে সে ইবাদত পরিত্যাজ্য। যেমন মীলাদুন্নবী উদযাপন করা এবং ২৭শে রজব রাত্রিতে রাসূল (ছাঃ)-এর ইসরা ও মি‘রাজ হয়েছিল দাবী করে সে রাত্রে ইবাদত করা। এসব শরী‘আত কর্তৃক অনুমোদিত নয়, বিধায় এসব ইবাদত পরিত্যাজ্য।
২. বস্ত শরী‘আত সম্মত হওয়া :
ইবাদতের ক্ষেত্রে যেসব বস্ত শরী‘আত সম্মত নয়, সেসব দ্বারা ইবাদত করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। যেমন কেউ যদি ঘোড়া কুরবানী করে তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা শরী‘আতে চার ধরনের পশু কুরবানী করার কথা এসেছে। তাহল উট,
গরু, ছাগল, দুম্বা। ঘোড়া দ্বারা কুরবানী করা শরী‘আতে অনুমোদিত নয়। তাই কেউ ঘোড়া কুরবানী করলে তা কবুল হবে না।
৩. পরিমাণ শরী‘আত সম্মত হওয়া :
ইবাদতের ক্ষেত্রে শরী‘আত নির্ধারিত পরিমাণে কম-বেশী করলে ইবাদত হয় না এবং আল্লাহর কাছে তা কবুল হয় না। যেমন কেউ যদি দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের ক্ষেত্রে ছয় ওয়াক্ত কিংবা যোহর, আছর ও এশার চার রাক‘আতের পরিবর্তে ছয় রাক‘আত, মাগরিবে তিনের বদলে চার পড়ে তাহলে তা কবুল হবে না। কেননা তা শরী‘আত নির্ধারিত পরিমাণ নয়।
৪. পদ্ধতি শরী‘আত সম্মত হওয়া :
ইবাদতের পদ্ধতিও শরী‘আত সম্মত হতে হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দেখানো পদ্ধতির বাইরে কেউ কোন ইবাদত করলে
তা ইবাদত হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। যেমন কেউ যদি ওযূ করার ক্ষেত্রে আগে পা ধৌত করে অতঃপর মাথা মাসাহ করে, তারপর দু’হাত ধৌত করে এবং শেষে মুখমন্ডল ধৌত করে তাহলে এটা ইবাদত হবে না। কেননা এটা শরী‘আত প্রদত্ত
পদ্ধতি নয়।

৫. সময় শরী‘আত সম্মত হওয়া :

ইসলামী শরী‘আত যে ইবাদতের জন্য যে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে, তার বাইরে গিয়ে ইবাদত করলে তা ইবাদত বলে গণ্য
হবে না। যেমন কেউ যদি রামাযানের ফরয ছিয়াম শা‘বান বা শাওয়াল মাসে রাখে অথবা কেউ যদি মুহাররম বা যিলক্বদ মাসে হজ্জ করে তাহলে তা ইবাদত হিসাবে গণ্য হবে না। অতএব নির্ধারিত সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ইবাদত ঐ সময়ের বাইরে আদায় করলে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।

৬. স্থান শরী‘আত সম্মত হওয়া :
শরী‘আত যে ইবাদতের জন্য যে স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে তার বাইরে সেই ইবাদত করলে তা কবুল হবে না। যেমন হজ্জের ক্ষেত্রে আরাফায় অবস্থান না করে মুযদালিফায় অবস্থান করলে কিংবা বাড়ীতে ই‘তেকাফ করলে তা কবুল হবে না। কেননা হজ্জের প্রধান রুকন হল আরাফায় অবস্থান করা। অনুরূপভাবে ই’তেকাফ করতে হয় মসজিদে, বাড়ীতে নয়।

ইবাদতের বৈশিষ্ট্য :
১. ইবাদতে একনিষ্ঠতা : ইবাদত কেবল আল্লাহর জন্য হতে হবে শিরকমুক্তভাবে । কেননা আল্লাহ তা‘আলা এভাবেই নির্দেশ দিয়েছেন।
২. ইবাদত পবিত্র কুরআন ও হাদীছের উপরে নির্ভরশীল : পবিত্র কুরআন ও হাদীছে উল্লেখ নেই এমন কোন ইবাদত করা
বান্দার জন্য জায়েয নয়।
৩. বান্দা ও স্বীয় রবের মাঝে কোন মাধ্যম নেই : মহান আল্লাহ স্বীয় বান্দাদেরকে তাঁর ইবাদত করার জন্য ও তাঁর নিকটে
দো‘আ করার জন্য সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন।
৪. ইসলামের ইবাদতসমূহ সরলতার উপরে প্রতিষ্ঠিত : ইসলামের প্রত্যেকটি বিধানের ক্ষেত্রে মানবীয় স্বভাব-প্রকৃতি তথা
শক্তি-সামর্থ্য, দুর্বলতা, স্বতঃস্ফূর্ততা, অবসাদ ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রণীত হয়েছে। অনুরূপভাবে ইবাদত সমূহও
সরলতা, সহজতা ও ক্ষমার ভিত্তিতে প্রণীত হয়েছে।

ইবাদত কবুলের শর্তাবলী :

ইবাদত কবুল হওয়ার শর্ত তিনটি।
(১) আক্বীদা বিশুদ্ধ হওয়া (২) তরীকা সঠিক হওয়া এবং (৩) ইখলাছে আমল । অর্থাৎ শিরক বিমুক্ত নির্ভেজাল তাওহীদ
বিশ্বাস, ছহীহ সুন্নাহর অনুসরণ এবং শ্রুতি ও প্রদর্শনীমুক্ত ইখলাছ, এই তিনটির সমন্বয় ব্যতীত আল্লাহর নিকটে বান্দার
কোন সৎকর্মই কবুল হবে না।
(১) আক্বীদা বিশুদ্ধ হওয়া :
ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য আক্বীদাহ ছহীহ হওয়া অতি যরূরী। কেননা আক্বীদাহ বাতিল হলে ইবাদত কবুল হয় না।
আল্লাহ বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি ‘ইসলাম’ ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, তার নিকট থেকে তা কখনোই কবুল করা
হবে না এবং ঐ ব্যক্তি আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আলে ইমরান ৩/৮৫)।
আক্বীদার বিষয়টিকে হাদীছেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামের ৫টি ভিত্তির মধ্যে আক্বীদা বা ঈমানই হচ্ছে প্রধান।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘পাচটি ভিত্তির উপর ইসলাম প্রতিষ্ঠিতঃ (১) এই কথার সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত আর
কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, (২) ছালাত প্রতিষ্ঠা করা, (৩) যাকাত প্রদান করা, (৪) হজ্জ সম্পাদন করা
(৫) রামাযানের ছিয়াম পালন করা’। আক্বীদা সঠিক থাকলে কোন গোনাহগার ব্যক্তি জাহান্নামে গেলেও চিরস্থায়ীভাবে
সেখানে অবস্থান করবে না।
(২) তরীকা সঠিক হওয়া :
ইবাদত সম্পাদনের পদ্ধতি সঠিক না হলে তা আল্লাহর নিকটে কবুল হয় না। আল্লাহ বলেন,
‘বলে দাও, আমরা কি তোমাদেরকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের সম্পর্কে জানিয়ে দেব? তারা হল সেই সব লোক
যাদের পার্থিব জীবনের সকল প্রচেষ্টা বিফলে গেছে। অথচ তারা ভেবেছে যে, তারা সৎকর্ম করছে। ওরা হল তারাই, যারা
তাদের প্রতিপালকের আয়াত সমূহকে এবং তার সাথে সাক্ষাতকে অস্বীকার করে। ফলে তাদের সকল কর্ম নিস্ফল হয়ে যায়। ক্বিয়ামতের দিন আমরা তাদের জন্য দাড়িপাল্লা খাড়া করব না’ (কাহফ ১৮/১০৩-১০৫)। অর্থাৎ আল্লাহ রাসূল (ছাঃ)-এর
মাধ্যমে ইবাদত করার যে পদ্ধতি মানুষকে জানিয়েছেন, সে পদ্ধতিতে ইবাদত না করলে তা কবুল হবে না।

(৩) ইখলাছ বা একনিষ্ঠতা :

ইখলাছ সম্পর্কে কুরআন ও হাদীছে অনেক বর্ণনা এসেছে। তন্মধ্যে  ‘তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা
খাটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে’ (বাইয়েনাহ ৯৫/৫)। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত
কামনা করে সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে, এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’ (কাহফ ১৮/১১০)।
আল্লাহ তার নবীকে সম্বোধন করে বলেন, ‘বল, আমি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদত করি। অতএব তোমরা তাঁর পরিবর্তে
যার ইচ্ছা তার ইবাদত কর’ (যুমার ৩৯/১৪-১৫)।
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ কারো আকৃতি অথবা সম্পদের দিকে তাকান না। তবে তার কাজ
এবং অন্তরের দিকে তাকান’ (মুসলিম হা/৪৬৫১)। প্রকৃত একনিষ্ঠতা হচ্ছে বান্দার বাসনা হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং
পরকালে শান্তি।
আমল বিশুদ্ধ হবার জন্য প্রয়োজন সকল প্রকার মনের রোগ হতে অন্তরকে পরিষ্কার করা। যেমন অহংকার, ধোঁকা, গীবত ইত্যাদি। এমনিভাবে মানুষের মন্তব্য পর্যবেক্ষণের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার থেকেও নিজেকে পরিস্কার করা। মানুষের প্রশংসা
অর্জন, অনিষ্ঠ থেকে রক্ষা পাওয়া তাদের খেদমত বা ভালবাসা অর্জন করার উদ্দেশ্য পরিহার করতে হবে। কারণ এই সবই
হচ্ছে মাখলুকের নিকট মুখাপেক্ষী হওয়া। যা অবশ্যই শিরক। হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি শিরককারীদের
শিরক থেকে মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন কাজ করল, এবং তাতে আমার সাথে কাউকে শরীক করল, তা হবে ঐ ব্যক্তির জন্য যার
সাথে সে শরীক করল। আর আমি এ মুশরিক থেকে দায়মুক্ত (ইবনু মাজাহ হা/৪১৯২)।
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে লোক আমাদের শরী‘আতে নতুন কিছু অন্তর্ভুক্ত করল, তা প্রত্যাখাত। অতএব এই তিনটি শর্ত
ছাড়া ইবাদতের কোন কাঠামো দাড় করানো সম্ভব নয়। নিয়ত বা সংকল্পে সত্যবাদী হওয়া ইবাদতের অস্তিত্বের জন্য শর্ত। আল্লাহর জন্য ইখলাছ এবং সুন্নাতের মোতাবেক হওয়া ইবাদত শুদ্ধ এবং কবুল হওয়ার জন্য শর্ত।  আল্লাহ আমাদের
সকলকে পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করুন।