আত্মহত্যা কি? এর কারণ ও প্রতিকার:

আত্মহত্যা মানে নিজেকে নিজে ধ্বংস করা। নিজ আত্মাকে চরম কষ্ট ও যন্ত্রনা দেয়া, নিজ হাতে নিজের জীবনের যাবতীয় কর্মকান্ডের পরিসমাপ্তি ঘটানো। আরো সহজভাবে যদি বলি আত্মহনন হচ্ছে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের
জীবন বিসর্জন দেয়া। আমাদের বাংলাদেশে অনেক নারী-পুরুষ বিশেষত যুবতী বোনেরা জীবন সংগ্রামের পরিবর্তে জীবন
থেকে পালিয়ে যাবার জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। ভালোবাসায় ব্যর্থতা ও প্রথারনা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে তরুনীরা
এবং স্বামীর নির্যাতন -অত্যাচার, যৌতুক সমস্যা, স্বামীর অর্থনৈতীক অক্ষমমতা পারিবারিক অশান্তি থেকে বাচার পথ
হিসেবে অনেক মহিলা আত্মহত্যার পথ বেচে নিচ্ছেন। এসবই ভড় ভূল, এসব সমস্যা সব দেশে, সব জাতিতে আছে।
আত্মহত্যা এসবের কোন সুষ্ট সমাধান বা সঠিক প্রতিকার নয়। মানুষ তার জীবন ও সম্পদের রক্ষক। মানুষের দায়িত্ব ও
কর্তব্য হলো আল্লাহর দেওয়া জীবন, সময় বা আয়ু, সম্পদ, মেধা, সুযোগ ও সামর্থ্য; আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় পরিচালনা করা।
আত্মহত্যা মূলত আত্মপ্রবঞ্চনারই নামান্তর। কারণ, জীবন বিসর্জন দেওয়া কোনো সমস্যার সমাধান নয়; কোনো সফলতাও
নয় বরং চরম ও চূড়ান্ত ব্যর্থতা। এর দ্বারা কোনো কিছুই অর্জিত হয় না; বরং একূল, ওকূল—দুকূলেই সবকিছু হারাতে হয়।
মানুষ কোনো কিছু ধ্বংসের জন্য নয়, বরং সৃষ্টির সুরক্ষার জন্য

শরীয়তের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা।

ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা কবিরা গুনাহ। শির্কের পর সব চেয়ে বড় গুনাহ। আল্লাহ তাআলা মানুষকে মরনশীল হিসেবে
সৃষ্টি করেছেন।ধনী-গরীব, বিদ্বান-মূর্খ, রাজা-প্রজা সকলকেই মরতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ
গ্রহণ করবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আনকাবুতঃ ৫৭) তোমরা নিজ হাতে নিজেকে
ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’ (সূরা বাকারা: ১৯৬)।
আর এ মৃত্যু দান করেন একমাত্র তিনিই। তিনি ছাড়া কেউ কাউকে মৃত্যু দিতে পারেনা। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তিনিই
জীবন ও মরণ দান করেন এবং তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা ইউনুস: ৫৬) উপরোক্ত আয়াত থেকে বুঝা
যায় মানুষের মৃত্যু ঘটানোর কাজটি একমাত্র আল্লাহ তাআলার কাজ। অথএব কেউ যদি কাজটি নিজের হাতে তুলে নেয়,
নিজের মৃত্যু ঘটায় নিজের হাতে, তবে তিনি অনধীকার চর্চাই করবেন। আল্লাহ তা পছন্দ করেন না। কেউ অনাধীকার চর্চা
প্রত্যাশা করে না। ইসলামে তাই আত্মহত্যাকে মহাপাপ বলে গন্য করা হয়েছে। এ কাজ থেকে বিরত থাকতে মহান আল্লাহ
বিশেষ ভাবে নির্দেশ দান করেছেন এবং এর পরিনামের কথা ভাববার জন্য কঠোর ও যন্ত্রনাদায়ক শাস্তির বর্ননা দিয়ে মহা
গ্রন্ত আলকুরআনে আয়াত অবতীর্ন করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন কিংবা জুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে,
তাকে খুব শীঘ্রই আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজসাধ্য।(সুরা নিসা: ২৯-৩০)

আত্মহত্যা সম্পর্কে হাদীসে নববী:

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাব) নিজেকে ফাঁস লাগাতে থাকবে আর যে ব্যক্তি বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে)
বর্শা বিদ্ধ হতে থাকবে। (৫৭৭৮, মুসলিম ১/৪৭, হাঃ ১১৩
আবূ হুরাইরা হতে বর্ণিত অপর হাদীসে রয়েছে । তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ যে লোক পাহাড়ের উপর থেকে
লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে, চিরকাল সে জাহান্নামের ভিতর ঐভাবে লাফিয়ে পড়তে
থাকবে। যে লোক বিষপানে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে
জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে। যে লোক লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের আগুনের ভিতর সে
লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তা দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে। (মুসলিম ১/৪৭, হাঃ ১০৯, আহমাদ ১০৩৪১০)
জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্নিত রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ এক ব্যক্তির (দেহে) যখম ছিল, সে আত্মহত্যা করল। তখন আল্লাহ
তা‘আলা বললেন, আমার বান্দা তার প্রাণ নিয়ে আমার সাথে তাড়াহুড়া করল। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম। (বুখারী৩৪৬৩ (ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১২৮০ শেষাংশ)

আত্মহত্যা দূরের কথা মৃত্যু কামনাও বৈধ নয়:

আত্মহত্যা তো দূরের কথা ইসলাম ধর্মে কোন বিপদে পড়ে বা জীবন যন্ত্রনায় কাতর হয়ে নিজের মৃত্যু কামনা করতেও
বারন করেছে: আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন বিপদে পতিত হয়ে মৃত্যু কামনা না
করে। মৃত্যু যদি তাকে প্রত্যাশা করতেই হয় তবে সে যেন বলে ‘হে আল্লাহ আমাকে সে অবধি জীবিত রাখুন,যতক্ষন আমার
জন্য কল্যানকর। আর আমাকে তখনই মৃত্যু দিন যখন মৃত্যু হয় আমার জন্য শ্রেয়। (বুখারীঃ৫৬৭১-মুসলিমঃ৬৯৯০)
আত্মহত্যা এতই গর্হিত কাজ যে এর প্রতি ধিক্কার জানিয়ে অন্যদেরকে এ থেকে সতর্ক করতে রাসূল (সাঃ) আত্মহত্যাকারীর জানাযা ত্যাগ করেন।
আত্মহত্যাকারীর কি জানাযা পড়া যাবে না?
কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি আত্মহত্যা করেন, তা হলে তার জানাজা পড়া হবে। তবে তার জানাজায় সমাজের অনুসৃত ও
মান্যবার ব্যক্তিরা শরিক হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যাতে করে ‘আত্মহত্যা কবিরা গুনাহ’ হওয়ার অপরাধবোধ
মানুষের অনুভূতিতে জাগ্রত থাকে। হজরত জাবের ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলের (সাঃ) সামনে আত্মহত্যাকারী এক ব্যক্তির লাশ আনা হয়, রাসুল (সা.) তার জানাজা পড়েননি। (সহিহ মুসলিম- ২২৫৮, সুনানে আবু
দাউদ- হাদিস, ৩৫৩৩, সুনানে বায়হাকি- ৬৭৩৩)
অনেক সমাজে অনেকে মনে করেন কেউ আত্মহত্যা করলে তার জানাযা পড়া যাবে না। ওপরের হাদীসটিও কেউ প্রমান
হিসেবে উপস্তাপনা করেন। তাদের এ ধারনা সঠিক নয়। কারন এ হাদীসের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত হাদীস ব্যাখ্যাতা ইমাম নাববী
(রাহ) বলেনঃ এ হাদীসকে তারা প্রমাণ হিসেবে পেষ করেন, মানুষকে সতর্ক করার জন্য, যারা আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়া
হবে না বলে মত দেন। এটি উমর বিন আব্দুল আযীয ও আওযাঈ (রাহ) এর মত। তবে হাসান বসরী ইব্রাহীম নখঈ, কাতাদা, মালেক, আবু হানিফা, শাফেঈ ও সকল আলেমদের মতামত হলো, তার জানাযা পড়া হবে। উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় তারা বলেন, রাসূল (সাঃ) মূলত অন্যদেরকে এ ধরনের মন্দকাজ থেকে সতর্ক করার জন্যই আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়ানো
থেকে বিরত থেকেছেন। আর সাহাবীগন তার স্থলে এমন ব্যক্তির জানাযা পড়েছেন। (নাববী, শারহু মুসলিমহ৭-৪৭)
আত্মহত্যা-কারী কি চিরস্তায়ী জাহান্নামে থাকবে?
কেউ যখন নিজেকে হত্যা করে তখন সে নিজেকে মূলত আল্লাহর গযব ও ক্রোধের শিকারে পরিনত করে। সে আল্লাহর
ইচ্ছাধীন। কারন তা কোন শিরকি কাজ নয়। একমাত্র শিরকই এমন গুনাহ আল্লাহ যা ক্ষমা না করার ঘোষনা দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘আল্লাহ কখনোই শিরকের গোনাহ মাফ করেন না। এতদ্ব্যতীত বান্দার যেকোন গোনাহ তিনি
মাফ করে থাকেন, যাকে তিনি ইচ্ছা করেন’ (নিসা ৪/৪৮, ১১৬)।
কেননা যিনা, চুরি, মধ্য পানসব কিছুই গুনাহ বটে। তবে তা শিরক নয়। এসবে লিপ্ত ব্যক্তি আল্লাহর ইচ্ছাধীন থাকবে। কেউ
যখন এসব গুনাহে লিপ্ত হয়ে মারা যাবে আল্লাহ চাইলে তাকে ক্ষমা করবেন তার ঈমানের ভিত্তিতে। আর তিনি চাইলে তাকে
তার অপরাধ অনুপাতে তাকে শাস্তিও দিতে পারেন। অথপর সে গুনাহ থেকে পবিত্র হবার পর তাকে জাহান্নাম থেকে বের
করা হবে।আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের বিশ্বাষ মতে সে চির জাহান্নামী হবে না। একমাত্র কাফেররাই শূধু জাহান্নামে চিরকাল থাকবে। যারা আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।রাসূল (সাঃ) আনিত দ্বীনকে যারা অস্বীকার করেছে।
আত্মহত্যা কারীর জন্য কি দোয়া করা যাবে?
তবে এসবের অর্থ এই নয় যে কেউ। আত্মহত্যা করলে তার জন্য ক্ষমা ও রহমতের দোয়া করা যাবে না যেমনটি আমাদের সমাজের অনেকে মনে করেন। বরং অধিক পাপী হওয়ার কারনে ঐ ব্যক্তির জন্য আরো বেশী দোয়া করা উচিত। আত্মহত্যা কোন কুফরী কাজ নয়, যার মাধ্যমে মানুষ ঈমান থেকে খারিজ হয়ে যায়। দুআ করা যাবেনা কেবল ওই ব্যক্তির  জন্য যে ঈমানহীন অবস্তায় মারা যায়। এদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আপনি তাদের জন্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করুন অথবা না
করুন, উভয়ই সমান। আল্লাহ কখনও তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না।
(সূরা মুনাফিকুন: ২৬)
অন্য আয়াতে বলেনঃ নবী ও মুমিনের উচিত নয় মুশরেকদের মাগফেরাত কামনা করা, যদিও তারা আত্নীয় হোক একথা
সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে তারা দোযখী। (সূরা তাওবা: ১১৩) অতএব আমাদের উচিত আত্মহত্যারীর জন্য বরং আরও বেশী
বেশী দোআ করা।
মানুষ কেন এবং কখন আত্মহত্যা করে?

ভাববার বিষয় হলো মানুষ কখন আত্মহত্যা করে? যখন মানুষের জ্ঞান -বুদ্ধি ও উপলব্দি-অনুধাবন শক্তি লোপ পায় নিজেকে
সে অসহায় ও ভরসাহীন মনে করে, তখনই সে আত্মহত্যা করে বসে। আত্মহত্যার কারণ হিসেবে বিভিন্ন গবেষণায় যে
বিষয়গুলো লক্ষ্য করা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো।

১) ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পিতা-মাতা ও ছেলে মেয়ের মধ্যে অভিমানজনিত পারিবারিক জীবনে সমস্যা।
২) দাম্পত্য কলহ, পরকীয়া, প্রেম, যৌতুক ও পারিবারিক নির্যাতন।
৩) পরীক্ষায় ব্যর্থতা, ব্যবসায়ের অপুরনীয় ক্ষতি, চাকুরী চ্যুতি।
৪) কোন নির্যাতনে শিকার হওয়ার পর নিজের প্রতি ঘৃণাবোধ।
৫) শিক্ষাক্ষেত্রে ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি।
৬) উত্যক্ত করা ও আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা।
৭) দারিদ্র, অপ্রাপ্তি, অর্থনৈতিক মন্দা।
৮) আত্মহত্যার উপকরণের সহজপ্রাপ্যতা।
৯) নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক অস্থিরতা।
১০) নগরায়ন ও পরিবারতন্ত্রের বিলুপ্তি।
১১) দুরারোগ্য ও জটিল রোগ যন্ত্রনা থেকে আত্মাহুতি।
১২) চরম হতাশা ও হতাশাজনিত মানসিক রোগ।
১৩) মাদকাসক্তি ও অ্যালকোহলে আসক্তি।
১৪) সিজোফ্রেনিয়া, মৃগীরোগ।
১৫) ব্যক্তিত্বের সমস্যা।
১৬) বংশগত কারণ অর্থাৎ যে বংশে আত্মহত্যার ইতিহাস আছে সে বংশ বা পরিবারে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি।
১৭) যারা কোন কষ্ট পেলে নিজেকে আঘাত করে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজের শরীরে ক্ষত করে, দেয়ালে মাথায় আঘাত করে, অল্পতেই রেগে যায় ইত্যাদি।

আত্মহত্যা রোধে করণীয়:
মানুষের জীবনে প্রতিটি দিন এক রকম কাটে না। ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজীক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন
সর্বত্রই পরিবর্তন হতে থাকে। কখনো দিন কাটে সুখে-দুঃখে। কখনো সচ্ছলতা-দরিদ্রতা। কখনো থাকে প্রাচুর্য আবার
কখনো অভাব-অনটন। কখনো সুস্থতা কখনো অসুস্থা, কখনো সুদিন, আবার কখনো দুর্ভিক্ষ। কখনো বিজয় পরাজয়।
কখনো সম্মান বা লাঞ্ছনা। এ অবস্থা শুধু বর্তমান সময়েই হয়ে থাকে, তা নয়। এটা যোগ যোগ ধরে এভাবেই আবর্তিত হয়ে
আসছে। আল্লাহ বলেনঃ অতঃপর অকল্যাণের স্থলে তা কল্যাণে বদলে দিয়েছে। এমনকি তারা অনেক বেড়ে গিয়েছে এবং
বলতে শুরু করেছে, আমাদের বাপ-দাদাদের উপরও এমন আনন্দ-বেদনা এসেছে। (সূরা আরাফ: ৯৫)
যেহেতু বিপদ-আপদ, কষ্ট -শোক আমাদের নিত্যসঙ্গী তাই সমাজ থেকে আত্মহত্যা নির্মুলে প্রথমত দরকার পুরো সমাজ
ব্যবস্থায় ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের বাস্তব অনুশীলন। কারন মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় হতাশার চরম মুহুর্তে।
আর অনুশীলনরত মুসলিম জীবনে হতাশার কোন স্থান নেই। আত্মহত্যা ইসলাম ধর্মে পাপ। আইন অনুযায়ী একটি অপরাধ। আত্মহত্যা নিরসনে সরকারি-বেসরকারি নানাবিধ উদ্যোগ এবং প্রয়াস রয়েছে, তথাপি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছেই। তাই
এটির সমাধানের প্রচেষ্টাগুলো আরও বেশি মনোযোগ পাওয়ার দাবি রাখে। পাশাপাশি নতুন ভাবনারও অবকাশ রাখে।
সেই ভাবনা থেকেই জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটকে আরও বেশি শক্তিশালী করা প্রয়োজন এবং বাংলাদেশের তৃণমূল
পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া বিশেষভাবে প্রয়োজন। আল্লাহ বলেনঃ বলুন, হে আমার বান্দাগণ
যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ
করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা যুমার: ৫৩)
যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যাবতীয় ভাল-মন্দ সবই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আল্লাহ যা-ই করেন বান্দার তাতে কোন না কোন
কল্যান নিহিত থাকে, সে কখনো নিজের জীবন প্রদীপ নিজেই নিভাবার মত হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। সে তো হাজার বিপদেও অবিচল থাকবে এ বিশ্বাসে যে আল্লাহ আমাকে পরিক্ষা করছেন। এ পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হলে অবশ্যই তিনি আমাকে
পুরস্কৃত করবেন। তাই আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রথম দরকার ইসলামী শিক্ষা এবং দৈননন্দিন জীবন ইসলামের বাস্তবানুশীলন।
আল্লাহ আমাদের আত্মহত্যার মত মহা পাপ থেকে বেচেঁ থাকার তৌফিক দান করুন। আ-মীন।