আগুন নির্গমন হওয়া কিয়ামতের সর্বশেষ আলামত:

কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগে যে সব ঘটনা ঘটবে ধারাবাহিক ভাবে তার আলোচনা চলছে। তবে কিয়ামতের সময়
ঘনিয়ে আসলে সর্ব প্রথম যে বড় আলামতটি প্রকাশ পাবে, তা হলো- অগ্নিশিখা নির্গমন। ইহা বড় ধরনের আগুন।
এ আগুন ইয়ামেনের পূর্ব দিকের এডেন নগরী থেকে বের হবে। ইহা কিয়ামতের বড় আলামতগুলোর মধ্যে সর্বশেষ এবং কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য সর্ব প্রথম নিদর্শন। আগুন ইয়ামেন থেকে বের হয়ে জমিনে ছড়িয়ে পড়বে এবং মানুষকে হাশরের ময়দান শামের (সিরিয়া) দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা আগুন ব্যবহার করেই কিয়ামতের ময়দানে মানুষকে হাকিয়ে নিয়ে যাবেন। হাদিসে বর্ণিত আছে যে, আবু হুরায়রা (রাদিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
‘তিন পন্থায় মানুষকে (কিয়ামতের ময়দানে) জমায়েত করা হবে। (এর মধ্যে) কিছু মানুষ স্বেচ্ছায় আর কিছু (মানুষ) অনিচ্ছায় এবং বাকিরা (বাহনে করে)। একটি উটে দুজন করে, তিনজন করে, চারজন করে ও দশজন করে। আর বাকিদেরকে আগুন একত্রিত করবে। তারা যখন দিবানিদ্রা করবে তখন আগুনও তাই করবে। আর যখন তারা রাত্রিযাপন করবে তখন আগুনও তাদের সাথে রাত্রিযাপন করবে। আগুন তাদের সাথেই প্রভাত করবে এবং তাদের সাথেই সন্ধা করবে। (বুখারি ও মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আগুনের নির্গমনকে কিয়ামতের প্রথম আলামত বলে উল্লেখ করেছেন। হজরত আনাস (রাদিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন প্রিয়নবি (সা.) কে কিছু বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। এরমধ্যে একটি ছিল- কিয়ামতের সর্ব প্রথম আলামত কি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে
প্রথম আলামত হলো পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে মানুষকে একত্রকারী আগুন। (বুখারি)

আগুন মানুষকে কোথায় নিয়ে একত্রিত করবে?

আখেরী যামানায় ইয়ামানের এডেনের গর্ত থেকে আগুনটি বের হয়ে সকল মানুষকে হাশরের দিকে হাঁকিয়ে নিবে। হাশরের
স্থান হবে শাম দেশ। তৎকালে সিরিয়া, ফিলিস্তীন, লেবানন এবং জর্ডান অঞ্চল শাম দেশ হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। এমর্মে
অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বলেনঃ শামের যমীন হাশরের মাঠ হওয়ার ব্যাপারে যে ব্যক্তি সন্দেহ পোষণ করবে সে যেন সূরা হাশরের প্রথম কয়েকটি আয়াত পাঠ করে। বনী নযীরের ইহুদীরা যখন নবী (সা.) এর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করল তখন তিনি তাদেরকে বললেনঃ ‘‘তোমরা মদীনা থেকে বের হয়ে যাও। তারা বললোঃ আমরা কোথায় যাবো? হুজুর (সা.) বললেনঃ হাশরের যমীনের দিকে। (ফাতহুল বারী, (১১/৩৮০) ও তাফসীরে ইবনে কাছীর, (৪/৩৩০)
অর্থাৎ তিনি তাদেরকে শামের দিকে বিতাড়িত করলেন এবং শামকে হাশরের যমীন হিসেবে ব্যক্ত করলেন।

হাফেজ ইবনে রজব বলেনঃ আখেরী যামানায় কিয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে যখন শুধু নিকৃষ্ট লোকেরাই অবশিষ্ট থাকবে তখন বিরাট একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে শামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে তথায় একত্রিত করবে। (লাতায়েফুল মাআরেফ, লিল
হাফেয ইবনে রজব)।

এ হাশরটি হবে দুনিয়াতেঃ

উপরের হাদীছগুলোতে শাম দেশের যমিনে যে হাশরের আলোচনা করা হয়েছে তা পরকালের হাশর নয়, যা সংঘটিত হবে
কবর থেকে পুনরুত্থানের পর; বরং এটি হবে কিয়ামতের একটি আলামত। এ হাশরের সময় জীবিত সমস্ত মানুষকে
শামদেশের যমিনে আগুনের মাধ্যমে হাঁকিয়ে একত্রিত করা হবে। অধিকাংশ আলেম একথার উপর ঐক্যমত পোষণ
করেছেন। হাদীছগুলো এ কথারই প্রমাণ বহন করে।

ইমাম নববী (রঃ) বলেনঃ আলেমদের কথা হলো এই হাশরটি দুনিয়ার শেষ বয়সে কিয়ামতের ও শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার পূর্বে সংঘটিত হবে। শাম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই হাশর হবে। ইসরাফীলের শিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার সাথে সাথে কিয়ামত হবার পর
কবর থেকে উঠে যে হাশরের মাঠের দিকে লোকেরা দৌড়িয়ে  যাবে তার ধরণ শামদেশে হাশরের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে। শামদেশে হাশরের অবস্থার বিবরণ আবূ হুরায়রা (রাঃ)এর হাদীছ থেকে জানা যায় যা একটু আগে বর্ণনা করা হয়েছে।
এছাড়া আরো অনেক সহীহ হাদীছ থেকে জানা যায় আদনের গর্ত  থেকে নির্গত আগুনের হাশর হবে দুনিয়াতে এবং তার
স্থান হবে বর্তমান সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান ও ফিলিস্তীনের বিভিন্ন অঞ্চল। উপরের হাদীছ এবং অন্যান্য হাদীছ থেকে আরো
জানা যাচ্ছে, এই হাশরের পরও আরোহন, পানাহার, নিদ্রা, মৃত্যু ইত্যাদি বর্তমান থাকবে।

আর পুনরুত্থানের পর যে হাশর হবে তাতে আরোহন, ক্রয়-বিক্রয়, পানাহার, মৃত্যু, নিদ্রা, পোষাক-পরিচ্ছদ ও পার্থিব
জীবনের কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা। শুধু তাই নয়; পরকালের হাশরের ব্যাপারে হাদীছের বিবরণ হলো মুমিন
কাফেরসহ সকল মানুষ হাশরের মাঠে খালী পা, উলঙ্গ শরীর, খাতনাবিহীন এবং সম্পূর্ণ নিঁখুত অবস্থায় একত্রিত হবে।
সারকথা উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো এখানে হাশর বলতে দুনিয়ার হাশরকে বুঝানো হয়েছে। কিয়ামতের
অল্পকাল পূর্বে তা দুনিয়াতেই অনুষ্ঠিত হবে।

পরিশেষে বলব:
কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়া বিষয়ে বিশ্বনবি (সা.) অনেক আলামত বর্ণনা করেছেন। এ সব আলামত প্রকাশ হওয়ার পূর্বেই
আল্লাহ তাআলার প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস এবং নেক আমল করার জন্য বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে
কুরআনের বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালন করে কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর রহমত লাভ করে পরকালের চিরস্থায়ী
জীবনের সফলতা অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।